ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ

মাসজুড়েই থাকবে গরমের দাপট

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ০০:০১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

মাসজুড়েই থাকবে গরমের দাপট

স্বস্তির বৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উচ্ছ্বসিত দুই তরুণী

বৈশাখের শুরুতেই বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি নামে। বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া। তবে এর পরও গরমের হাত থেকে মুক্তি মিলবে না রাজধানীবাসীর। এর ফলে জ¦র-ঠান্ডা ও ডায়রিয়া রোগের বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, আগামী ২০ এপ্রিলের পর গরমের তীব্রতা আরও বাড়বে।

কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে রাজধানীর তাপমাত্রাও।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে ছিল ঈদের ছুটির প্রভাব। এর ফলে নগরবাসীর ছোটাছুটি ছিল কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সব জায়গায় মানুষের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। তবে শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় ষাটোর্ধ্ব রিক্সাচালক বছির মিয়া জানান, প্যাডেল ঘুরাতেই বুক ফেটে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। এই গরমে বাধ্য হয়েই রিক্সা চালাচ্ছি। তিনি বলেন, খুব বেশি দূরের ক্ষ্যাপ মারছি না। কাছাকাছি যাত্রী নিয়েই রিক্সা টানছেন তিনি।

তীব্র গরমে গণপরিবহনের যাত্রীদেরও হাঁসফাঁস অবস্থা দেখা গেছে। তবে দুুপুরের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে রাজধানীর আবহাওয়া। সূর্যের তাপে বিপর্যস্ত জনজীবনে স্বস্তি মিলতে থাকে আকাশ ঢেকে যাওয়া কালোমেঘে। আস্তে আস্তে গরম বাতাশ থেকে শুরু হয় বজ্রঝড়। এর পর শুরু হয় বৃষ্টি। 
সরেজমিন রাজধানীর শ্যামলীতে দুপুর সাড়ে তিনটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা বৃষ্টি নামতে দেখা গেছে। এ সময় সড়কে যান চলাচল ছিল না বললেই চলে। সড়কে জলজট না হলেও তীব্র গরমে বৃষ্টি উপভোগ করেছে নগরবাসী। তবে এক ঘণ্টা বৃষ্টি শেষেই দেখা মেলে সূর্যের। আগারগাঁও, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, ইস্কাটনেও বৃষ্টি নেমেছে আধা ঘণ্টা। কোথাও কোথাও সড়কের পাশের গাছ ভেঙে থাকতেও দেখা গেছে।
রাজধানীতে ঝড়-বৃষ্টির বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, প্রচ- গরমের মধ্যে কালবৈশাখীর শুরুর দিকে বাতাস গরমই থাকে। বৃষ্টিপাত বাড়লে ধীরে ধীরে বাতাসও ঠা-া হয়। এতে তাপমাত্রা মঙ্গলবার কিছুটা কমলেও কাল আবার বাড়তে পারে। তিনি বলেন, কালবৈশাখীর বিষয়টি আবহাওয়া অফিস ৬-৭ ঘণ্টা আগে বুঝতে পারে। যে অনুযায়ী পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলেও তিনি জানান।
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। সেখানে ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সোমবারের দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  এদিন রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রাও কিছুটা বেড়েছে। মঙ্গলবার ঢাকায় ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার ছিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ১৭ এপ্রিল পাবনাতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২২ সালে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। ২০২১ সালে যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ বছর এখনো অতিক্রম করেনি।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, মানুষ বিগত সময়ের ইতিহাস ভুলে যায়। যে কারণে মনে করে এবারই গরম বেশি পড়ছে, যা পড়ছে তা কম না হলেও রেকর্ড ভাঙছে না। এপ্রিল মাসকে বলা হয় দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। ৫০ বছর আগে ১৫ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৪ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে।

এত দিনেও এ রেকর্ড ভাঙেনি। তিনি জানান, বিক্ষিপ্তভাবে দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। কোনো এক স্থানে বৃষ্টি হলে ৫-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে, যা সাময়িক। সারাদেশে একযোগে বৃষ্টি হলে গড় তাপমাত্রা কমবে। সহসাই এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে- বুধবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর এবং সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এদিকে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা থাকতে পারে অপরিবর্তিত।
গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি ॥ প্রচ- গরমে ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, ঠান্ডা , গলাব্যথা, কাশিসহ নানা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন নানা বয়েসী মানুষ।

শিশু ও বৃদ্ধদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ায় হঠাৎ করে গরম পড়েছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন মানবদেহে প্রভাব ফেলে। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তবে হঠাৎ করে চৈত্রের গরমে অসুস্থতার সংখ্যা বেড়েছে। 
মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রসহ (আইসিডিডিআর,বি) বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি। ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে দেখা গেছে, অনেকে জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। আইসিডিডিআর,বি সূত্র জানায়, সাধারণ সময়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ পর্যন্ত। তবে বর্তমানে হাসপাতালটিতে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। যা আরও বাড়তে পারে।

×