ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

একুশে বইমেলা আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক

একুশে বইমেলা আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

বাঙালির ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা অমর একুশে বইমেলা আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে। বাংলা একাডেমিতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক বাংলা একাডেমি এককভাবে এই মেলার আয়োজন করছে।   
একাডেমির বর্ধমান হাউস সংলগ্ন মূল মঞ্চে বেলা ৩টায় শুরু হবে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় মেলা উদ্বোধন করা ছাড়াও কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান : ভলিওম টু-এর  মোড়ক উন্মোচনের কথা রয়েছে। একই মঞ্চ থেকে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করবেন।  
অমর একুশে বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। লেখক পাঠক প্রকাশকদের মিলনমেলা হিসেবেও আলাদা পরিচিতি রয়েছে। এমনকি অপাঠক অপ্রকাশকরাও এই মেলার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন। যে যার জায়গা থেকে মেলার অংশ হওয়ার জোর চেষ্টা চালান। তাই পাঠাভ্যাস কমলেও এ সময়টাতে এসে বইয়ের কদর বেড়ে যায়। আবেগ উচ্ছ্বাসের আরও একটি বড় কারণ, অমর একুশে বইমেলা ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল বাঙালি। রফিক, শফিক, বরকত ও জব্বারের তাজা রক্ত গড়েছিল নতুন ইতিহাস। তাদের রক্তে নতুন প্রাণ পায় আমরি বাংলা ভাষা। অমর একুশের সেই চেতনাকে ধারণ করে আছে ফেব্রুয়ারির বইমেলা। 
একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। তবে বইয়ের মূল ভেন্যু হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে পাওয়া যাবে এখানে। মেলা ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন মেলা উন্মুক্ত থাকবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়।

এদিকে, বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতোই আছে বলে জানিয়েছে  বাংলা একাডেমি। একাডেমির কর্মকর্তা ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মেলায় শুধু কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে এবার। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহিরপথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির-গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট ৮টি প্রবেশ ও বাহিরপথ থাকবে। 
বইমেলায় মূল ধারার প্রায় সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। একাডেমির তথ্য মতে, মোট প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ৬৩৫। সাধারণ স্টলের পাশাপাশি বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে থাকবে ৩৭টি প্যাভিলিয়নও। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ ভাগ ছাড়ে বই বিক্রি করবে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।  
ক্ষুদে পাঠকদেরও আমলে নেয় অমর একুশে বইমেলা। সে অনুযায়ী, প্রতিবারের মতোই রাখা হয়েছে আলাদা শিশু চত্বর। মন্দির-গেট দিয়ে প্রবেশ করলে চত্বরটি হাতের ঠিক ডান দিকে পড়বে। শুধু শিশুদের বই প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে এখানে।  প্রতি শুক্র ও শনিবার বিশেষ শিশুপ্রহরের ব্যবস্থা রাখা হবে। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিশুরাই হবে মেলার মূল অংশ। সেই সঙ্গে অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হবে।

এদিকে, লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি, গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 
এ সবরে বাইরে একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্মিত মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় সেমিনার। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। 
তবে মেলা শুরুর একদিন আগে বুধবার দুই ভেন্যু ঘুরে দেখা গেছে, প্রস্তুতির এখনো অনেক বাকি। প্রকাশকরা নিজেদের উদ্যোগে স্টল বা প্যাভিলিয়ন সাজাচ্ছেন। কিন্তু মেলার একটি  নান্দনিক দিক থাকে। ধরে রাখতে হয় একুশের ভাবগাম্ভীর্য। এসবের কোনো চিহ্ন কোথাও দেখা যায়নি। স্টলগুলো অনেক কাছাকাছি অবস্থানে রাখা হয়েছে। এর ফলে একটা বাজারের চেহারা দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবশ্য একাডেমির কর্মকর্তাদের দাবি, তারা মেলা শুরুর আগে সব কাজ শেষ করে ফেলবেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই মেলার কাজ শুরু করেছিলাম। তবে এটি একাডেমির একার কাজ নয়। প্রকাশকদেরও বড় ভূমিকা আছে। সবাই সবার ভূমিকা পালন করলে আয়োজনটি নিশ্চয়ই সফল হবে।

×