ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এবার জেঁকে বসবে শীত

মিগজাউমের প্রভাবে টানা বৃষ্টি জনজীবন বিপর্যস্ত

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

মিগজাউমের প্রভাবে টানা বৃষ্টি জনজীবন বিপর্যস্ত

রাজধানীতে বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টি ঝরেছে। ছবিটি ঢাবি এলাকা থেকে তোলা

রাজধানীসহ দেশের সব এলাকার আকাশ ছেয়ে গেছে ধূসর মেঘে। দুইদিন সূর্যের দেখা নেই। টানা ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ঝরছে বৃষ্টি। আর তাতেই আসি আসি করে যে শীত আসছিল না, তা জেঁকে বসেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে সারাদেশের আবহাওয়ার চিত্র পাল্টে গেছে। হেমন্তের শেষে অসময়ের বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়ে রাজধানীবাসী। বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচির কারণে রাজপথে  কোথাও গণপরিবহন সংখ্যা কম, আবার কোথাও তীব্র যানজট দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার কর্মদিবসের শেষ দিন থাকায় বৃষ্টির মধ্যেই অফিস-আদালতে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কর্মজীবী মানুষকে। এই সুযোগে রিক্সা ও সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে রাজধানীর বাইরেও বৃষ্টির দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। অনেক জেলায় শীতকালীন সবজি ও রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদরা জানান, এবার শীত খানিকটা দেরিতে আসার প্রধান কারণ শক্তিশালী মিগজাউমের প্রভাব। তবে দুর্বল হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ শুক্রবারও বৃষ্টির এই ধারা সারাদেশে অব্যাহত থাকবে। শনিবার থেকে বৃষ্টি কমে আসবে। রবিবার থেকে দেখা মিলবে সূর্যের। এরপরও তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি কমে যাবে। তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে কমতে জেঁকে বসবে শীত। 
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম একটি বার্মিজ শব্দ, যা পাশর্^বর্তীদেশ মিয়ানমারের দেওয়া। গত ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়ে পরে গভীর নি¤œচাপে রূপ নিয়ে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় ধেয়ে আসে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয় এবং বর্তমানে এটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়Ñ রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পূর্ব বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ২৬ মিলিমিটার। এ ছাড়া ঢাকায় ১০, রাজশাহীতে ১০, রংপুরে দুই, ময়মনসিংহে এক, সিলেটে দুই, চট্টগ্রামে এক, খুলনায় এক মিলিমিটার এবং বরিশালে সামান্য বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের  সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরের শহর তেঁতুলিয়ায় ১৭ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টিতে সৈয়দপুরে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ ছিল ॥ নীলফামারীর স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঘন কুয়াশা ও দুর্যোগময় আবহাওয়ার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিমান চলাচল বিঘিœত হয়েছে। ফলে বেসরকারি কো¤পানির চারটি ফ্লাইটের ঢাকাগামী দুই শতাধিক যাত্রী আটকা পড়ে। এর মধ্যে অনেক নারী ও শিশু ছিল। পরে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে রংপুর অঞ্চলের নীলফামারীসহ বিভিন্ন স্থান দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কবলে পড়ে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর ছিল এই বৃষ্টি। এতে জনজীবনের নেমে আসে স্থবিরতা। ছাতা মাথায় দিয়ে মানুষজনকে চলাচল করতে দেখা যায়। এতে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কবলে পড়ে এলাকা। 
রাজশাহীতে দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ॥ ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমপরবর্তী প্রভাবে রাজশাহীতে দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। এই নগরীতে সূর্যের দেখা নেই দুদিন ধরে। হেমন্তের এই বৃষ্টিতে রাজশাহীতে নেমেছে শীত। শীত শীত অনুভূতি বিরাজ করছে উত্তরের জনপদে। স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ১১ দশমিক দুই মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে নেমেছে দিনের তাপমাত্রাও। এদিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় রাজশাহী মহানগরীতে বৃহস্পতিবার দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। ভোরে সূর্যোদয়ের পর কুয়াশায় ঢেকে যায় প্রকৃতি। 
সুন্দরবন উপকূলে বৃষ্টি-বাতাস ॥ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমের’ প্র্রভাবে বাগেরহাটসহ সুন্দরবন উপকূলে বুধবার রাত থেকে বাতাসের সঙ্গে থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। সূর্যের দেখা না মেলায় বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে উপকূলে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। ঠান্ডা ও বৃষ্টির কারণে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় দৃশ্যত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লীর হাজার হাজার জেলে ফের বিপাকে পড়েছেন। মাছ ধরা ট্রলারের অধিকাংশ সাগর থেকে ফিরে সুন্দরবনের নদী-খালে আশ্রয় নিয়েছে। মোংলা আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ হারুন অর রশিদ বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে আপাতত ভারি বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেত্রবিশেষে কখনো কখনো ঝিরিঝিরি, আবার কখনো হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। ঠান্ডার অনুভূতি বৃদ্ধি পেতে পারে।
মাগুরায় মুষলধারে বৃষ্টি, জনজীবনে দুর্ভোগ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে মাগুরায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমেছে। সবজি এবং রবিশস্য ও সরিষার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে শ্রমজীবীদের বিশেষ করে রিক্সাচালকদের জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। বৃষ্টির পাশাপাশি শীতও পড়তে শুরু করেছে।

×