ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

অবরোধের আগুনে দগ্ধ ট্রাক হেলপারের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩; আপডেট: ১০:০৭, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

অবরোধের আগুনে দগ্ধ ট্রাক হেলপারের মৃত্যু

ছবি: বেলাল হোসেন

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন খাগড়াছড়ির গুইমারার ট্রাকের হেল্পার বেলাল হোসেন (৪০)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বেলা ৩টার দিকে মারা যান তিনি। এর আগে গত রবিবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে চাল নিয়ে খাগড়াছড়ির গুইমারা এলাকায় সরকারি খাদ্যগুদামে যাওয়ার পথে অবরোধকারীদের অগ্নিসংযোগে দগ্ধ হন তিনি। আহত হয়েছেন ট্রাকটির চালক ইসহাক মিয়াও।  
বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে বেলাল হোসেনের চার সন্তান। এতিম হয়েছে মাত্র আট মাস বয়সী শিশুটিও। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে এখন দিশেহারা বেলালের স্ত্রী বিবি ফাতেমা। কিভাবে তিন সন্তানের ভরণ-পোষণ চালাবেন, সেই চিন্তায় ফাতেমা। 
মৃত বেলালের ছোট ভাই আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তাদের বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আদর্শগ্রাম মধ্যপাড়ায়। বেলাল ট্রাকের হেল্পার হিসেবে কাজ করতেন। গত রবিবার রাতে চট্টগ্র্রাম থেকে ট্রাকে চাল নিয়ে খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা থানার তাইন্দং সরকারি খাদ্যগুদামে ফিরছিলেন। পথে গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি এলাকায় পৌঁছালে রাস্তায় গাছ ফেলে ট্রাকের গতিরোধ করা হয়। এরপর ট্রাকটিতে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে বেলাল দগ্ধ হন আর ট্রাকের চালক ইসহাক মিয়া আহত হন। ওইদিনই তাদের মানিকছড়ি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরেরদিন বেলালকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকেলে মারা যান তিনি। আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন বেলাল। একমাত্র মেয়ে ফারজানাকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলের নাম তারেক। তার বয়স ১৩ বছর। অভাবী সংসার। তাই শিশু বয়সেই তারেককে দোকানে কাজে দিয়ে দেন। দ্বিতীয় ছেলে মারুফ মাদ্রাসায় পড়ছে। আর ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৮ মাস। এখনো দুধ খাওয়া ছাড়েনি। ৮ মাস বয়সেই শিশুটা বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেল। এসব বলতে বলতে কেঁদে দেন আবু বক্কর।  
বার্ন ইনস্টিটিউটে বেলালকে এতদিন সেবা-শুশ্রুষা করে আসছিলেন জামাতা রাসেল এবং বেলালের ভাবি পারভীন। পারভীন জানান, বেলালের ছোট ছেলে এখনো দুধের শিশু। তাই তার স্ত্রী আসতে চাইলেও তাকে আনা হয়নি। বেলালের মৃত্যুর খবরে তার স্ত্রী আহাজারি করেই যাচ্ছে। বার বার কল দিচ্ছে আর জানতে চাচ্ছে- কখন বেলালের মরদেহ নেওয়া হবে। তিনটা শিশু সন্তান নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবে, এসব শুধু বলে যাচ্ছে বেলালের স্ত্রী। পারভীন আরও বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলাল বার বার বলত- আমি তো রাজনীতি করতাম না। কোনো দলের মিছিল-মিটিংয়ে যেতাম না। তারপরও কেন আমার গায়ে আগুন দিলো। এখন আমার কিছু হলে আমার স্ত্রী-সন্তানদের কি হবে, তাদের ভরণ-পোষণ কে চালাবে। মৃত্যুর আগে বেলালের এমন আশঙ্কাই যেন সত্যি হলো, বললেন পারভীন। 
বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম জানান, বেলালের শরীরে ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। মুখের বাম পাশ পুরোপুরি পুড়ে গেছে, ডান পাশের কিছু অংশ পুড়েছে। আর বুক থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত একেবারে ঝলসে গেছে। এতদিন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বেলা ৩টার দিকে মারা যান বেলাল।  

স্টাফ রিপোর্টার

×