ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

দেখার যেন কেউ নেই

কীর্তনখোলার তীর বেদখল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২০ নভেম্বর ২০২৩

কীর্তনখোলার তীর বেদখল

ভাঙন প্রতিরোধের ব্লক তুলে নদী দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা মহাব্যস্ত সময় পার করার মধ্যেই নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীর দখলের উৎসব চলছে। গত কয়েকদিন ধরে শহর লাগোয়া শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুর নিচে নদীতীর দখল করে হিরন মাহামুদ নামের জনৈক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
এ ছাড়াও আশপাশ এলাকাসমূহে কীর্তনখোলা নদীতীর দখল করে একাধিক স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত কয়েক বছর যাবৎ দখলকারীদের তালিকা প্রণয়নসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে এলেও আজও দখলকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিন দিন কীর্তনখোলার তীরে স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, নগরীর আমানতগঞ্জ খাল থেকে রূপাতলী দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তীর তাদের আওতাধীন। যার অর্ধেকই দিনে দিনে বেদখল হয়ে গেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, বিগত দুই বছর আগে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের তদন্ত তালিকায় প্রায় চার হাজার দখলকারীর নাম উঠে এসেছে। তবে এখন ওই সংখ্যা আরও বেড়েছে। বিপরীতে শান্ত-স্নিগ্ধ-স্রোতস্বিনী কীর্তনখোলা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
সচেতন বরিশালবাসীর মতে, বিআইডব্লিউটিএ এবং বরিশাল জেলা প্রশাসন কীর্তনখোলা নদী রক্ষায় কয়েকবার উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানালেও পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে তা থমকে রয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নীরবতার কারণে নদীতীর দখলের উৎসব চলছে। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর নিচে সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর অন্তত ১০/১৫ ফুট দখল করে একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বসানো ব্লক তুলে তা দিয়ে নদীর বড় একটি অংশজুড়ে দেওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে।

সোমবার সকালে নির্মাণ শ্রমিকরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান মালিক হিরন তাদের নদীতীরে ভবন তৈরি করার কাজ দিয়েছেন এবং তিনিই বলেছেন, সরকারি ব্লক তুলে তা দিয়ে ভবনের নিচের পাইল করতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালিজিরা থেকে বেলতলা পর্যন্ত কীর্তনখোলার তীর দখলে বর্তমানে এক ধরনের মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে এই দখল প্রক্রিয়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেতন নগরবাসী মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত থাকার সুযোগটি নিতে চাইছে ভূমিদস্যুরা। তারা সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে একের পর এক নদীতীর দখল করে ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে।
নদীতীরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কীর্তনখোলা যারা ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে তাদের অধিকাংশই প্রথমে ইট-পাথর ও বালুর ব্যবসা করতে গিয়ে যে যার সুবিধামতো করে নদীতীর দখল করেছেন। কেউ নির্মাণ করেছে ভবন, আবার কেউ চারদিকে বাউন্ডারিতে আবদ্ধ রেখে ভেতরে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। দখলকারীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
সর্বশেষ শহীদ আব্দুর বর সেরনিয়াবাত সেতুর ঢালে হিরন মাহামুদ নামের এক ব্যক্তির দখল প্রক্রিয়া বন্ধে কোনো প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেননি জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
অভিযুক্ত হিরন মাহামুদ নদীতীর দখলের কথা স্বীকার করে বলেন, অনেকের চেয়ে কম নিজের দখলে আছে। বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যাওয়ার আর্জি রাখেন, দিয়েছেন আর্থিক সুবিধার প্রস্তাব। 
এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালিদ বলেন, আমি বরিশালে সবেমাত্র ক’দিন হলো যোগদান করেছি। তার পরেও চলমান নদী দখল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত সকল দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

×