ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

গোপালগঞ্জ জেলা

নৌকার বিকল্প নেই, জামানত হারানোর ভয়ে অন্য প্রার্থীরা

নীতিশ চন্দ্র বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

নৌকার বিকল্প নেই, জামানত হারানোর ভয়ে অন্য প্রার্থীরা

শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জ

শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জ। জেলার মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং হাওড়-বাঁওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্ম নেওয়া খোকা নামের শিশুটি কালের আবর্তে হয়ে উঠেছিলেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাণকর্তা ও মুক্তির দিশারি। এই ভূমিতেই জন্ম বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত গোপালগঞ্জে সংসদীয় আসন তিনটি। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি ও দুর্গ হিসেবে পরিচিত সারা দেশে। এমনই শক্ত ঘাঁটি যে, নৌকা ছাড়া বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ যেসব দলই নির্বাচনে অংশ নেয়, সেই দলের প্রার্থীকেই প্রতিবারই তাদের জামানত হারানোর লজ্জা পেতে হয়। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে যিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, প্রায় সবারই শেষ পর্যন্ত জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা অন্য কোনো দল কখনোই গোপালগঞ্জবাসীর আস্থা অর্জন করতে পারেনি। প্রতিটি নির্বাচনে ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ গোপালগঞ্জে নৌকার কোনো বিকল্প নেই।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে রয়েছেন সাতবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ৮৬’র নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসন থেকে প্রথমবার নির্বাচিত হলেও ’৯১ থেকে গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে টানা নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। জেলার সবচেয়ে বড় আসন গোপালগঞ্জ-২। এই আসন থেকে আটবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম। রক্তাক্ত শোকাবহ ১৫ আগস্টের পর থেকে গোপালগঞ্জের মানুষ তাদের দুজনকেই অভিভাবক মেনে এসেছেন। তারাও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ¯েœহ, মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গোপালগঞ্জবাসীকে আগলে রেখেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সারাদেশে উন্নয়নের পাশাপাশি গোপালগঞ্জের সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। বিল-বাঁওড়-খাল ও নদী-নালায় ভরা পিছিয়ে পড়া গোপালগঞ্জকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সর্বত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা, চিকিৎসা-ব্যবস্থা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি-ব্যবস্থা ও আর্থসামাজিক অবস্থাসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ এলাকার অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। এক কথায়, গোপালগঞ্জের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে যা যা করণীয় সবই তারা করেছেন। অবহেলিত ও বঞ্চিত গোপালগঞ্জের মানুষের জীবনযাত্রা এখন আধুনিক হয়েছে।
গোপালগঞ্জ-১ আসনে রয়েছেন টানা পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় তিনিও নির্বাচনী এলাকায় কাজ করে গেছেন যথাসাধ্য। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের আশায় আরও একজন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি হলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য খন্দকার মঞ্জুরুল হক লাভলু। যদিও তিনি বলেছেন ‘নৌকা যার, তিনি তার’। এসব কারণে গোপালগঞ্জের তিনটি আসনই আওয়ামী লীগের। অন্য কোনো বিকল্প এখানে নেই। 
তা ছাড়া গোপালগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা অন্য কোনো দলের সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই। এক কথায় বলতে গেলে এখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে থাকেন। 
গোপালগঞ্জে বর্তমানে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল অংশ নিলে গোপালগঞ্জের প্রতিটি আসনেই তাদের প্রার্থী থাকবে এবং সে লক্ষ্যে অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। 
গোপালগঞ্জ-১ আসনে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের কয়েক সিনিয়র নেতাকে টপকে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। গোপালগঞ্জ-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান। তবে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএইচ খান মঞ্জু ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এবং ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ডা. কেএম বাবর আলীসহ স্থানীয় বিএনপির কয়েক সিনিয়র নেতা দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানা যায়।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হবেন স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী। তিনি এলাকায় থাকেন না, এলাকার মানুষের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততার খবরও পাওয়া যায় না। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। 
গোপালগঞ্জে জাতীয় পার্টির অবস্থাও তথৈবচ। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নাহাজ পাশা জাপার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দলের কর্মকা- সম্পর্কে তিনি কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না। জাতীয় পার্টির বর্তমান রাজনীতি নষ্ট হয়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। 
তবে আসন্ন নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসনে কাশিয়ানী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ মান্নান মুন্নু দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন। গোপালগঞ্জ-২ আসনে কাজ করছেন জেলা জাপার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহীন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক এ জেড অপু শেখ। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনেও এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন।
তবে বিএনপি বা জাপার তুলনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সাংগঠনিকভাবে খানিকটা এগিয়ে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে তাদের কমিটি রয়েছে। আগামী নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসনে দলীয় প্রার্থী হতে কাজ করছেন দুজন। একজন জেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মিজানুর রহমান এবং অপরজন জেলা ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম লেলিন। 
গোপালগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী হবেন জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মওলানা তসলিম হুসাইন শিকদার। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে কাজ করছেন জেলার সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মো. মারুফ এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মজিবর রহমান শেখ।

×