ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ

লাখ লাখ টাকা অপচয়

পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ২২:৩২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

লাখ লাখ টাকা অপচয়

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ের পাশে পুকুরের ঘাটলা

বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও সত্য। মাটিরাঙ্গায় পুকুর ছাড়াই ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে এমন দুটি ঘাটলা করা হয়েছে পাহাড়ের ওপর, যেগুলো কোনোই জনকল্যাণে আসছে না। এতে রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকার অপচয় হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এমন তুঘলকি কা- ঘটলেও কোনো ধরনের তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। 
জানা যায়, সারাদেশে পুকুর ও খাল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে জিওবির অর্থায়নে ২০২০-২১ অর্থবছরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে চারটি পুকুর খনন ও ঘাটলা নির্মাণ করে এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ)। তার মধ্যে আব্বাস সর্দারপাড়া জামে মসজিদ ও আমতলী আদর্শপাড়া মসজিদের নামীয় ঘাটলা দুটি কোনোই কাজে আসছে না। 
আব্বাস সর্দারপাড়া জামে মসজিদের নামে যে ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে মানুষ যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত নেই। ঘাটলাটি করা হয়েছে পাহাড়ের ওপর।  যেখানে স্থানীয় একটি কবরস্থান রয়েছে। এখানে নেই পুকুরের অস্তিত্ব। মূলত দুই পাহাড়ের মাঝের গ্যাপকে পুকুর দেখিয়ে এখানে ঘাটলা জায়েজ করা হয়। এ ছাড়া আমতলী আদর্শপাড়া মসজিদের নামীয় ঘাটলাটিরও একই অবস্থা। ঘাটলায় ওঠার পথই নেই। ঘাটলার সামনে পুকুর বলতে কিছুই নেই। তবে প্রায় ৫০ মিটার দূরে হাঁটুপানি দেখা যায়। জানা যায়, ২০১৯ সালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ডিজিটাল সার্ভে হয়। প্রকল্প অনুমোদনের পর টেন্ডার হয়েছে। কত টাকায় এসব কাজ হয়েছে জানাতে রাজি নয় এলজিইডির কোনো কর্মকর্তা।

আদর্শপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি এমরান হোসেন ও আব্বাস আলী সর্দারপাড়া জামে  মসজিদের রুহুল আমীন জানালেন এলাকায় কোনো পুকুর নাই। মসজিদের পুকুর দেখিয়ে ৭০-৮০ লাখ টাকার প্রকল্প বানিয়ে তা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই পাহাড়ের ওপর পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ। 
এগুলো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ছাড়া কিছু নয়। তা ছাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান, আব্দুর রহিম ও তোফাজ্জল হোসেন জানান, এলাকাবাসী হিসেবে কেউই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাহাড়ের ওপর পুকুরের ঘাটলা নির্মাণের জন্য আবেদন করেনি। ঘাটলা নির্মাণে আদৌ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী শাহজাহান। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অনুরোধ করায় ক্ষেপে ওঠেন এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন উপজেলা প্রকৌশলী। অবশ্য মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এমন ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের অর্থ ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় স্থানে কেন ঘাটলা তৈরি করা হলো তা খতিয়ে দেখা হবে।

×