ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

তিতাসের বুকে নৌকাবাইচ দেখল অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ

সংবাদদাতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ০০:৩০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তিতাসের বুকে নৌকাবাইচ দেখল অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ

বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হয় ভাটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বছর ঘুরে আবারও ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গর্জে উঠল তিতাস তীরে সুন্দইরা মাঝির  বৈঠা। উৎসবে মাতোয়ারা ছিল তিতাস তীর। পুরোটা বছর জুড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়াপ্রেমীরা। চমৎকার এই ক্ষণে শামিল হতে সকাল থেকেই তিতাস পাড়ে ভিড় শুরু করেন দর্শক। তিতাসের বুকে পড়ন্ত বিকেলে এ নৌকা বাইচ দেখতে ভিড় করেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। 
শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আর অপসংস্কৃতির আড়ালে দিন দিন হারাতে বসেছে বাঙালির প্রাণের উৎসব আর সংস্কৃতি। তবু যেটুকু টিকে আছে, তাতেই খুশি সহজ সরল এই মানুষগুলো। পড়ন্ত বিকেলে চমৎকার এই নৌকা বাইচ তাদের নিয়ে গেছে এক রকম ঘোরের রাজ্যে। নৌকা বাইচ উপলক্ষে শহরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ভাদ্রের তপ্ত দুপুর গড়ানোর আগেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট বড় নৌকা নিয়ে উৎসাহী দর্শকরা নদীর দুই পাড়ে হাজির হতে থাকেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লি., দারাজ বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সেলমেডিক্যালের সহযোগীতায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর প্রাণভরা উচ্ছ্বাসে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডার শিশু পরিবার এলাকায় তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয় এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদরের ৪টি, বিজয়নগর উপজেলার ৫টি, নবীনগর উপজেলার ২টি, আশুগঞ্জ উপজেলার ২টি ও নাসিরনগর উপজেলার একটিসহ মোট ১৫টি  প্রতিযোগী দল তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রংবেরঙের বাহারি পোশাক পরে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা চলার সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে  বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়।

বিকেল ৩টার দিকে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকায় নৌকা বাইচের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসীম উদ্দিন।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে নবীনগর উপজেলা নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সরাইল উপজেলা নৌকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে আশুগঞ্জ উপজেলার নৌকা। পরে প্রধান অতিথি প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে এক লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৩০ হাজার টাকা এবং ট্রফি উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক দলকে নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

এদিকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশ এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ তিতাসের দুই পাড়ে এবং বিভিন্ন ভবনের ছাদে ভিড় জমায়। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা চলার সময় শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডা শিশু পরিবার এলাকা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি মোবাইল কোর্ট টিমসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ, আনসার ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, নৌ-পুলিশ, ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিক্যাল টিম নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়া ছিল ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিস। নিরাপত্তার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন।

×