ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন নেই

দখল দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে রিকাবীবাজার খাল

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৯ আগস্ট ২০২৩

দখল দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে রিকাবীবাজার খাল

শতাব্দীপ্রাচীন রিকাবীবাজার খাল দখল-দূষণে এখন মৃতপ্রায়

মিরকাদিমের শতাব্দী প্রাচীন রিকাবীবাজার খাল অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ তথা ভূমি অফিসের গাফিলতি আর উদাসীনতায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল দৌরাত্ম্য আর যত্রতত্র ফেলা আবর্জনায় বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে এই প্রধান খাল। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে এক সময়ের দ্বিতীয় কলকাতা হিসেবে পরিচিত কমলাঘাট বন্দরের নৌপথের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এর আগে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা প্রায় সপ্তাহজুড়ে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

খালের দুই পাড় দখল করে গড়ে ওঠা  বহুতল ভবনসহ সাড়ে চার শতাধিক বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বাদ যায়নি পূর্বপাড়া জামে মসজিদের স্থাপনাও। সে সময় খালের একপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ফেলা হয় মাটিও। ঘোষণা দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের মতো নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে খালের সৌন্দর্য। দেড় বছর পার হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। কয়েক বছরের ব্যবধানে স্বচ্ছ জলরাশির প্রবাহমান খালটি এখন মৃতপ্রায়। সরেজমিনে খালটির বিভিন্ন অংশে ঘুরে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর তীরে খালটির উৎপত্তিস্থলের মূল অংশেই দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ঘরবাড়ি। পানিপ্রবাহ না থাকায় চলতে পারছেন না নৌযান।

ঝোপঝাড় আর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। খালটির এক পাশের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে ছোটবড় বহুতল নানা স্থাপনা আর অন্য পাশে দেখা গেছে ফার্নিচার তৈরির কারখানা ও অসংখ্য কাঠের দরজা জানালা বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের অভিযোগ- এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ স্থাপনার মালিকরা ধীরে ধীরে একটু একটু করে দখল করে নিচ্ছে খালটির বিভিন্ন অংশ। খালটির পানি প্রবাহের আরেক প্রবেশ পথ রিকাবীবাজার নৈদিঘির পাথর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আবর্জনার স্তূপ তৈরি করে রাখায় বন্ধ হয়ে আছে ধলেশ্বরী নদী থেকে সরাসরি খালটিতে পানিপ্রবাহ। 
ফলে খালটিতে প্রবেশ করতে না পেরে ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট ট্রলার ও বিভিন্ন নৌযান পাশেই নোঙর করে রেখেছে। ময়লা ফেলে আবর্জনার স্তূপ তৈরি করা হয়েছে খালটির বিভিন্ন অংশে। এতে মারাত্মক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে পথচারীসহ স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ময়লা পানি আটকে থাকায় বেশি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়াও আবর্জনার স্তূপ থেকে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে চারদিক। এতে ঘরে ঘরে বেড়েই চলেছে অসুস্থতা।

রিকাবীবাজারের কিছু মুরগি ও গরু মাংস ব্যবসায়ী মুরগি ও গরুর অপ্রয়োজনীয় নাড়ি-ভুড়ি এই খালে ফেলছে। তাই  অসহনীয় দুর্গন্ধে টেকা দায়। বাজারে ময়লা আবর্জনা ফেলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। দেখার যেন নেই কেউ। পৌরসভাটির পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন বিভাগ নীরব থেকে এসব অপকর্মে প্রশ্রয় দিচ্ছে। পৌরসভার কোনো নজর নেই। দেখে মনে হবে রক্ষক যেন ভক্ষক। 
মিরকাদিমের পৌর মেয়র আব্দুস সালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালটিতে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পৌরবাসী। বাণিজ্য কেন্দ্রটিও ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাড়ে চারশর মতো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পর এখন আবার দখল হয়ে যাচ্ছে খালের অংশ। পৌরসভা থেকে তালিকা করে প্রশাসনের কাছে অবহিত করা হয়েছে।

×