
বগুড়া নগরীতে হরহামেশাই অবতরণ করে হেলিকপ্টার
উচ্চবিত্তের নাগালে অনেক আগেই এসেছে। এখন মধ্যবিত্তের নাগালে। ইংরেজিতে কেউ বলে কপ্টার, কেউ বলে চপার। হেলিকপ্টার নামে বেশি পরিচিত। নগরীর অনেকে এখন শখ করে কপ্টারে চড়ে কিছুক্ষণ উড়াল দেয়। ‘উড়াল দিয়ে কি মজা’Ñ বললেন বগুড়ার তরুণ জনি। জরুরি কাজে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে কপ্টার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কোনো পরিবার তাদের বিয়েশাদির অনুষ্ঠানে কপ্টার ভাড়া নিতে পারেন। কেউ শখ করে বর-কনেকে উড়াল পথে বাড়িতে পৌঁছে দেন। এ ছাড়াও রোগীর জরুরি উন্নত চিকিৎসায় ঢাকার বাইরের শহর ও নগরী থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার বড় হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা রয়েছে কপ্টার সার্ভিসে। এখন উন্মুক্ত স্থানে, মাঠে, বাড়ির ছাদে কপ্টার অবতরণ করছে।
অফিসের জরুরি কাজে, মিটিংয়ে দ্রুত যোগাযোগ, জনসভা, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার জনসংযোগ, পণ্যের প্রচার লিফলেট বিতরণে, সিনেমা, টিভি শূটিং, টিভি নাটক ও সংগীতশিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মীদের দ্রুত শূুটিং স্পটে পৌঁছাতে, ব্যক্তিগত জরুরি কাজে ব্যবহার হচ্ছে প্রাইভেট বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার। শখের ভ্রমণে হেলিকপ্টার বড় আসন করে নিয়েছে। সিভিল এভিয়েশন শিল্পে দ্রুত প্রসার ঘটিয়েছে হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টার ভাড়া নিয়ে দেশের কোনো স্থানে যাওয়ার কথা অতীতে কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। তবে অতীতে বিত্তবানদের কেউ হেলিকপ্টার কেনার আশা করেছিলেন। যেমন পঞ্চাশের দশকে বগুড়ার কলাকোপার বনেদী পরিবারের বড় গৃহস্থ সিরাজ তালুকদার জমির লাল মরিচ বেচার অর্থে সরকারের কাছে গিয়েছিলেন হেলিকপ্টার কিনতে। বলা হয়েছিল কোনো পাবলিককে হেলিকপ্টার কেনার অনুমতি দেওয়া হয় না। তবে যদি কখনো কোনো ব্যক্তিকে হেলিকপ্টার কেনার অনুমতি দেওয়া হয় তিনিই প্রথম কিনতে পারবেন। এই কথাটি বগুড়ার প্রবীণদের মুখে আজও ফেরে। সিরাজ তালুকদার গত হয়েছেন। প্রায় সত্তর বছর পরে সেই গৃহস্থের আশা পূরণ করতে পারছেন করপোরেট শিল্পপতিগণ। তারা হেলিকপ্টার কিনে সাধারণের মধ্যে ভাড়ায় পরিচালনা করছেন।
প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে হেলিকপ্টার অবতরণ করছে। এক সূত্র জানায়, প্রাইভেট চপার সার্ভিস এখন প্রয়োজনীয়। দেশে বর্তমানে ১৩টি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ৪২টি হেলিকপ্টার আছে। তারা বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট নিয়ে উড়াল পথের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। স্বাচ্ছন্দ্যের, আনন্দের ও কম সময়ের উড়াল পথের যাত্রায় প্রতিটি কপ্টার ৫ থেকে ৭ জন যাত্রী বহন করে। প্রতি ঘণ্টায় ভাড়া নেওয়া হয় ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ভ্রমণে কপ্টার ভূমিতে অপেক্ষায় রাখলে প্রতি ঘণ্টার জন্য ভাড়া গুনতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। বগুড়ার বেসরকারি একটি সংস্থা প্রতিটি চার আসনের (পাইলট ছাড়া) কপ্টারে প্রতি ১৫ মিনিট উড়াল দিতে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে ভাড়া নেয়।
সূত্র জানায়, ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের আনন্দ ভ্রমণে উড়াল সময় ভেদে জনপ্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা নেয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অনেকে নির্দিষ্ট অঙ্কে উড়াল পথে সেতু দর্শন করেছে। দেশের শহর ও নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালের গুরুতর রোগীকে দ্রুত ঢাকায় রেফার করলে প্রথমে হেলিকপ্টারে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। দেশের প্রাইভেট বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রোভাইডাররা নির্দিষ্ট অঙ্কের ভাড়ার বিনিময়ে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে উড়ে গিয়ে রোগী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দেয়। অফিসের জরুরি কাজে ও মিটিংয়ে যোগ দিতে করপোরেট কর্মকর্তাগণ হেলিকপ্টার ভাড়া করছেন।
সিভিল এভিয়েশনের এক সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স নামের একটি কোম্পানিকে প্রথম হেলিকপ্টারের বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হয়। গত প্রায় ২৪ বছরে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ১৩টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে হেলিকপ্টারের বাণিজ্যিক ব্যবহারে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তাদের অন্তত ৪২টি হেলিকপ্টার সারাদেশে উড়াল দিচ্ছে। মাসে গড়ে সাড়ে তিনশ’ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এয়ারলাইন্স সংস্থার লাইসেন্স পেতে যা দরকার কপ্টার লাইসেন্স পেতে একই নিয়ম। এনওসি, হেলিকপ্টার ইন্সপেকশন, অফিস ইন্সপেকশন, পাইলট ও ক্রু লাইসেন্স ভেরিফিকেশন, ম্যানেজমেন্ট সক্ষমতাসহ সার্বিক বিষয় যাচাই-বাছাই করে এয়ার ওয়ার্দিনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
দ্রুত যোগাযোগে হেলিকপ্টার অন্যতম বাহন। উড়োজাহাজের (অ্যারোপ্লেন) আগাম টিকিট কাটতে হয়।
কপ্টারে অত ঝামেলা নেই। ফোনে যোগাযোগ করে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করলেই হেলিকপ্টার আপনার দুয়ারে উড়ে আসবে। হেলিকপ্টার ভাড়ায় উড্ডয়নের নির্দিষ্ট সময় আগে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়।প্রাইভেট হেলিকপ্টার উড্ডয়নে সহজে যোগাযোগে টাওয়ারকে প্রস্তুত রাখতে হয়। জরুরি উড্ডয়নে সিভিল এভিয়েশন দশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে অনুমতি দেয়। বেশিরভাগ প্রাইভেট হেলিকপ্টার ঢাকা বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে থাকে।