ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

বগুড়ায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে রাস্তার ওপর, ঘটছে এডিস মশার বিস্তার

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২৮ জুলাই ২০২৩

বগুড়ায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে রাস্তার ওপর, ঘটছে এডিস মশার বিস্তার

বগুড়ায় সড়কের ওপর বর্জ্য ফেলায় এডিস মশার বিস্তার ঘটছে

বগুড়ায় ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশা যে আছে, তার প্রমাণ মেলে ডেঙ্গুর বিস্তার দেখে। কোনটি এডিস, কোনটি অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স মশা তা বুঝতে পারে না সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে পৌর এলাকায় ড্রেন পরিষ্কার হচ্ছে রাস্তার ওপর বর্জ্য ফেলে, থাকছে কয়েকদিন। শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কের ধারে বর্জ্য ফেলে ঢিবি করে রাখা হয়েছে। এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ডাম্পিং করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর  মধ্যেই বেড়েছে এডিসসহ সব মশার প্রজনন। মশার উৎপাতে নাজেহাল মানুষ। ডেঙ্গুর মৌসুমে এডিস মশার শঙ্কা। পর্যন্ত বগুড়ায় ডেঙ্গুর থাবায় দুই ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি। মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ডেঙ্গু রোগী। এর বাইরে বাসাবাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্তরা চিকিৎসা নিয়ে সাবধানে আছেন। এই তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে ডেঙ্গু নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা অনেক আগেই বেড়েছে। করোনার থাবার আগে দেশে ডেঙ্গু থাবা দিয়েছিল। তখন নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। করোনা পেনডেমিকের পর ফের ডেঙ্গু বেড়েছে। সচেতন মানুষ জ্বরজাড়ি-সর্দিকাশিতে সন্দেহ হলে নিজেদের উদ্যোগে রক্তের প্লাটিলেট (লোকজন বলে প্লাটিনেট) পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়। সাধারণের মধ্যে করোনার ভীতি দূর হয়েছে। বর্তমানে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু নিয়েই বেশি শঙ্কিত। বগুড়ায় করোনা আক্রান্তের হার অনেক কমে গেছে, বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার। ডেঙ্গুর ছোবল থেকে রক্ষা পেতে এডিস মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হয়েছে।

ডেঙ্গু বিস্তারের এডিস মশক ইজিপটাই জাতের। বদ্ধ জলাশয়ে এদের বিস্তার বেশি। বগুড়া পৌর কর্তৃপক্ষ ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটিয়ে মশক নিধনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যেই বগুড়া শহরের কবি নজরুল রোডসহ কয়েকটি সড়কে ড্রেনের ঢাকনা খুলে তরল ঘন বর্জ্য বের করে রাস্তার ওপর রাখা হয়। শুকানোর পর ডাম্পিং ট্রাক এসে নিয়ে যায়। এই বর্জ্য এডিস মশার প্রজননের বড় আশ্রয়স্থল। এডিস মশার ডিম ধানের বীজের মতো। শুকনো অবস্থায় ছয় মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।

দেশের অতি প্রাচীন প্রথম শ্রেণির বগুড়া পৌরসভা ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের। ২১টি ওয়ার্ডের কয়েকটি নিচু এলাকা সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে মশার বিস্তার ঘটে। মশক নিধন যুদ্ধের বড় অস্ত্র ফগার মেশিন। পৌরসভার ফগার মেশিন অপ্রতুল। পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানালেন, ফগারে অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। অ্যাডাল্টিসাইড হলো সালফার মেট্রিনের সঙ্গে ডিজেলের মিশ্রন এক ধরনেরহিট টু ট্রান্সফর্ম লিকুয়িড ফগার মেশিনে ভরে প্রায় এক ঘণ্টা স্প্রে করা যায়। বেশিরভাগ ফগার মেশিনে পানির সঙ্গে গ্লাইকল সলিউশন থাকে। বগুড়ায় সাতটি ফগার মেশিন ছাড়াও ২১টি ওয়ার্ডের জন্য ২১টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিন আছে। ফগারম্যান এক দেড় ঘণ্টার বেশি চালাতে পারেন না। ফগার মেশিন ভাইরাস বহনকারী উড়ন্ত মশাকে ফেলে দিলে সাময়িকভাবে বংশ বিস্তার রোধ করে।

মশক নিধনের আরেকটি প্রক্রিয়া- মশার লার্ভা (ডিম) ধ্বংসে লার্ভিসাইড ব্যবহার। ফার্নেস ওয়েলের সঙ্গে ডিজেলের মিশ্রণে তৈরি হয় লার্ভিসাইড। এই মিশ্রণ ছিটানো হয় হ্যান্ড স্প্রের মাধ্যমে ড্রেন, বদ্ধ জায়গা এবং মশার বিস্তার ঘটতে পারে এমন স্থানে। পৌর মেয়র জানান, বাজেট বরাদ্দ খুবই কম।

সীমিত সাধ্যের মধ্যে মশক নিধনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বগুড়া পৌরসভার জন্য আরও কয়েকটি ফগার মেশিন কেমিক্যাল প্রয়োজন। ড্রেন উন্নতকরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব পাঠিয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যে বরাদ্দ মিলেছে তা দিয়েই কাজ শুরু হয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করা হচ্ছে। পৌরসভাগুলোতে কোনো কীটতত্ত্ববিদ নেই। শহরে কোনো না কোনো স্থানে নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে চৌবাচ্চা বড় ড্রামে রাখা পানিতে এডিসের বিস্তার ঘটে। পৌরবাসীকে সচেতন করে তোলা হচ্ছে।

 

 

 

×