
বগুড়ার মহাস্থানহাটে মাছ ধরার ফাঁদ (খাঁচা) দাড়কি বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকায়
এবার বর্ষাকালের বৃষ্টি দেরিতে ঝরছে। বর্ষাও এসেছে দেরিতে। আষাঢ়ের অর্ধেকেরও বেশি চলে গেছে। বর্ষায় মাছ ধরার যে আনন্দ তা মিলিয়ে যায়নি। তবে উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েছে। অন্যতম কারণ উপকরণের দাম। বর্ষার আগে অতীতে গ্রামের কৃষক নিজ উদ্যোগে বাঁশ ও বাঁশের বাতা, কাঠি দিয়ে মাছ ধরার যে খাঁচা (ফাঁদ) বানাত তাতেও ভাটা। যার একটি ফাঁদের নাম ‘দাড়কি’। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে দাড়কি নামেই পরিচিত। তবে অন্য এলাকায় মাছের খাঁচা এবং ভিন্ন নাম থাকতে পারে (হয়তো আছেও)। চাঁই নামের এক ফাঁদ আছে যা অনেকটা দাড়কির মতো।
ছোট ও মাঝারি বাঁশ, বাঁশের বাতা ও বাঁশের কাঠিতে নির্মিত দাড়কি দেখতে চৌকোনা লম্বা খাঁচার (বাক্স) মতো। লম্বার তুলনায় প্রস্থ কম। দাড়কির একদিকে বিশেষ ধরনের ছোট গেট থাকে। নদী ও জলাশয়ে স্রোতের অনুকূলে সন্ধ্যায় একাধিক দাড়কি বসিয়ে পরদিন সকালে গিয়ে দেখা যাবে দাড়কি ভরা ছোট মাছ আটকে আছে। স্রোতের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সময় মাছগুলো বুঝতেই পারে না কখন গেটের ভেতরে প্রবেশ করে আটকা পড়েছে। তখন বের হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
অতীতে নদীতীর ও চরগ্রামের প্রায় প্রত্যেক ঘরেই দাড়কি, পলই, ছিপ, ছোট ও বড় জাল ইত্যাদি থাকত। বর্ষায় বৃষ্টিতে এইসব ফাঁদ নিয়ে নদী ও জলাশয়ে যায়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। চাষাবাদের মতো মাছ ধরার এই উপকরণগুলো ছিল আবশ্যক। বৃষ্টি ও বর্ষার সঙ্গে মাছ ধরা পরিপূরক। এই ফাঁদ গ্রামের সাধারণ কৃষকের ঘরে মাছের ঘাটতি অনেকটা মিটিয়ে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনে দিত। গ্রামের মানুষের রোগবালাই বেশি থাকত না মাছের প্রোটিন ও ভিটামিনের কারণে। পুষ্টি বিজ্ঞানীগণের মতে বড় মাছের চেয়ে ছোট মাছের পুষ্টিগুণ বেশি। গ্রামে বড় জাল ছাড়া গৃহস্থালি উপকরণে ছোট মাছ ধরা যায় বেশি। আলু বেগুন দিয়ে ছোট মাছের তরকারি চর্চরির স্বাদ আলাদা। তবে এই মাছ ধরে আনার পর গাঁয়ের বধূদের মুখ প্রথমে বেজার দেখা যায় মাছ কুটার বিরক্তিতে। পরে অবশ্য রান্নার সুস্বাদে বিরক্তি মিলিয়ে যায়।
হালে গ্রামের কৃষক দাড়কি ঘরে রাখার চেয়ে বানিয়ে হাটে বাজারে বিক্রি করে। মাছ ধরার চেয়ে দাড়কি বেচার লাভ বেশি, বললেন এক কৃষক। বগুড়ার মহাস্থান হাটে দাড়কির দাম মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা।