ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

শিক্ষার্থীদের মানবিক ও বিবেকসম্পন্ন হতে হবে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৩০ মে ২০২৩; আপডেট: ২৩:১৩, ৩০ মে ২০২৩

শিক্ষার্থীদের মানবিক ও বিবেকসম্পন্ন হতে হবে

নাটোরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শিক্ষা বৃত্তি-২০২৩ এর চেক প্রদান করা হয়েছে

নাটোরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শিক্ষা বৃত্তি-২০২৩ এর চেক প্রদান করা হয়েছে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভাশেষে ২০২৩ সালের নবম শ্রেণির মেধাবী, দুস্থ ১৫ শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা। 
দৈনিক জনকণ্ঠের নাটোরের নিজস্ব সংবাদদাতা কালিদাস রায়ের সঞ্চালনায় এবং পত্রিকাটির শিক্ষা সাগর পাতার কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর মো. ইকরামুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সামিউল আমিন, সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) জোবায়দা আক্তার, জীবন বীমা করপোরেশনের উন্নয়ন অফিসার দেরাজুল ইসলাম প্রমুখ। 
অনুষ্ঠানে চলতি বছরের শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত  ১৫ শিক্ষার্থী ছাড়াও গত বছরের ১৫ সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাদের আবেগ অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেন। বক্তারা বলেন, আজকের শিক্ষার্থীরা আগামীর ভবিষ্যৎ। লেখাপড়া শিখে তাদের মানবিক ও বিবেক সম্পন্ন হতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট ও উন্নত দেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। জনকণ্ঠের আজকের এই মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এছাড়া স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছেন। দেশের জনগণকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করেছেন। এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে যদি ১০০ জন শিক্ষার্থী উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দ্যুতি ছড়ায়, তাহলে জনকণ্ঠের এই উদ্যোগ সফল হবে। আমাদের যারা শিক্ষার্থীরা রয়েছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীর একমাত্র কাজ হওয়া উচিত লেখাপড়া করা। বেশি করে লেখাপড়া করলে অবশ্যই জীবনে সফলতা আসবে।
জীবনের নানা প্রতিবন্ধকতা উত্তরণের উদাহরণ টেনে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমি যদি আবার ছাত্রজীবনে ফিরতে পারতাম, তাহলে আমি কেবল লেখাপড়াই করতাম। শিক্ষার্থীদের আরও অনেক বেশি অধিকার সচেতন, সুযোগ সন্ধানী হতে হবে। জীবনে বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। শিক্ষাবৃত্তির পরিমাণ খুব একটা বেশি না হলেও এটি শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে ব্যাপক কাজে লাগবে। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে এত টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হতো না। শিক্ষার্থীরা এই টাকার সঠিক ব্যবহার করবে এটাই প্রত্যাশা। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকমের সহায়তা করা হবে। 
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সামিউল আমিন বলেন, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা যদি শিক্ষা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে না আসতে পারি তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। ২০৪১ সাল নাগাদ বর্তমান সরকারের স্মাট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সবাই এক যোগে কাজ করে যাব এই প্রত্যাশা।
দৈনিক জনকণ্ঠের শিক্ষা সাগর পাতার কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ইকরামুল হক বলেন, চলতি বছর শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হচ্ছে। নাটোর ছাড়াও চারটি জেলায় এই বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষার পেছনে ছুটলে টাকা এমনিতেই আসবে। আর টাকার পেছনে ছুটলে শিক্ষা দূরে চলে যাবে। আমরা অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। লেখাপড়া করার কারণেই আজ আমরা এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। এই বৃত্তির টাকা পেয়ে শিক্ষার্থীরা সঞ্চয় ও টাকা ব্যবহারের পদ্ধতি শিখতে পারে। লেখাপড়া শিখে মানবিক ও বিবেক সম্পন্ন না হতে পারলে ডিসি এসপি হয়েও লাভ নেই। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে। আজকের শিক্ষার্থীরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তারা দেশের নেতৃত্ব দিবে, উন্নয়নে অবদান রাখবে। তাই আজকের শিক্ষার্থীদের এখন থেকেই মহাযজ্ঞের প্রস্তুতি নিতে হবে।
দৈনিক জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা কালিদাস রায় বলেন, দুস্থ অভাবী মেধাবী শিক্ষার্থী নির্বাচন করে তাদের কাছে শিক্ষা বৃত্তির অর্থ তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। অধিকাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়ায় আরও বেশি মনোযোগী হয়েছে ও ভালো রেজাল্ট করেছে। তারা নতুন করে বড় স্বপ্ন দেখছে। তবে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীরা জীবনে ভালো কিছু করতে পারলে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের এই মহতি উদ্যোগ সফল হবে।
কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী জানান, এই উপবৃত্তির টাকা পেয়ে তাদের অনেক উপকারে এসেছে। অনেকের পরিবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খান, ছেলে মেয়েদের শিক্ষার জন্য টাকা খরচ করতে পারেন না। অনেকের নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা। সেখানে বৃত্তির টাকা পেয়ে শিক্ষার্থীরা গৃহ শিক্ষক রেখে পড়তে পারছে। নিজের প্রয়োজনীয় জামা কাপড়, খাতা-কলম কিনতে পারছে। লেখাপড়া খরচের জন্য এখনো আর পরিবারের কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। সব মিলিয়ে এই বৃত্তির টাকা পেয়ে অনেকে জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। 
দৈনিক জনকণ্ঠের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান, সম্পাদক, প্রশাসক এবং মুদ্রাকর শামীমা এ খান বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শিক্ষা বৃত্তি প্রদানের ঘোষণা দেন।

গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ও দৈনিক জনকণ্ঠের সাবেক সম্পাদক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের স্মরণে তিনি এই শিক্ষাবৃত্তি চালু করেন। তারই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নাটোরে প্রথম এই উপবৃত্তি চালু করা হয়। এই জেলায় বিগত ও চলতি বছরে ১৫ জন করে মোট ৩০ জনকে দেড় হাজার টাকার শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

×