ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরিষাবাড়ীতে হাট-বাজারের ইজারা নিয়ে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ২১ মার্চ ২০২৩

সরিষাবাড়ীতে হাট-বাজারের ইজারা নিয়ে অনিয়ম

হাট-বাজার, ফাইল ছবি।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ১০টি হাট-বাজার ইজারা দেওয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গোপালগঞ্জ হাটের আগের বারের ইজারা মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা থেকে কমিয়ে প্রায় এক কোটি টাকায় এক কাউন্সিলর হাটটির ইজারা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

ওই প্রভাবশালী কাউন্সিলরের প্রভাবে স্থানীয় অন্যান্য ইজারাদাররা হাট-বাজার ইজারা প্রত্যাশীদের অনেকেই দরপত্র কিনতে পারেননি। আবার অকেনেই কেনার পরও বাক্সে জমা দিতে পারেননি। ভুক্তভোগী ইজারাপ্রত্যাশীরা দরপত্রে অংশে নিতে না পেরে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১ মার্চ উপজেলার ১০টি হাট-বাজারের ইজারার জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫ মার্চ ছিল দরপত্র বিক্রি ও দরপত্র বাক্সে জমা দেওয়ার শেষ দিন। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এবং সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা দরপত্র বাক্সে যাতে আর কেউ দরপত্র জমা না দিতে পারে যেজন্য সেদিন উভয় স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী পৌর কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল ও তার লোকজনরা পাহারা বসায়। 

সাখাওয়াতুল আলম মুকুল তার জান্নাত এন্টারপ্রাইজ নামের ইজারা প্রতিষ্ঠানের নামে উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট গোপালগঞ্জ হাটের ইজারা দরপত্রসহ তার আয়ত্বের আরো দুটি প্রতিষ্ঠানের ইজারা দরপত্র বাক্সে জমা দেন। বাকি নয়টি হাটগুলো ছোট হওয়ায় সেগুলোতেও স্থানীয় কাঙ্খিত ইজারা প্রত্যাশীরা তাদের দরপত্র জমা দিতে পারেননি। 

উপজেলা প্রশাসনের যোগসাজসে ১ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত ১০টি হাটের জন্য ৩ লাখ ১৭ হাজার ২০০ টাকায় ৬৫টি ফরম বিক্রি করা হলেও দরপত্র বাক্সে জমা পড়ে মাত্র ৩৫টি দরপত্র। তাদের মধ্যে  ইউএনও উপমা ফারিসা ও কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুলের পছন্দের ব্যক্তি ছাড়া কেউ ফরম জমা দিতে পারেননি। পরবর্তীতে সাখাওয়াতুল আলম মুকুল গোপালগঞ্জ হাটসহ অন্যান্য হাটগুলো উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজস করে নিজের মধ্যে ইজারা প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করিয়ে নেন। 

অভিযোগ রয়েছে, ১০টি হাটের মধ্যে পিংনা ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ হাটের গত অর্থ বছরের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ ৫২০ টাকা। কিন্তু প্রভাবশালী পৌর কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল উপজেলা প্রশাসনের যোগসাজসে চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ওই হাটটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুলের জান্নাত এন্টারপ্রাইজের নামে ইজারা নিয়েছেন। এতে করে এই হাট থেকে সরকার ১ কোটি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাট-বাজার ইজারার দরপত্র ফরম কিনতে গিয়ে ফিরে যাওয়া কয়েকজন জানান, ফরম কিনতে গিয়েছিলাম। উপজেলা চত্ত্বর থেকে সাখাওয়াতুল আলম মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই কাউন্সিলরের প্রায় শতাধিক ক্যাডার সেখানে অবস্থান করছিল। যার ফলে আমরা দরপত্র ফরমই কিনতে পারিনি। 

এ বিষয়ে উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন রতন বলেন, চাপারকোনা হাট-বাজারের দরপত্র ফরম কিনতে গিয়েছিলাম। কিনতে পারিনি। কাউন্সিলর মুকুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল বলেন, আমি নিয়ম মাফিক হাট-ইজারা নিয়েছি। 

গত বারের চেয়ে এবারের মূল্য কম সম্পর্কে বলেন, যারা দরপত্র শিডিউল কিনেছিল তাদেরকে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় গোপালগঞ্জ হাটটি আমি নিয়েছি। সব ম্যানেজ করা আছে। লিখেও কোন লাভ হবে না বলে জানান তিনি। 

হাটবাজার ইজারার অনিয়ম প্রসঙ্গে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মতর্তা উপমা ফারিসাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ করেননি তিনি। 

এসআর

×