ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

 পানি নেই পুনর্ভবা নদে ॥ ধু ধু বালুচর

​​​​​​​বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ

প্রকাশিত: ২২:০১, ১৮ মার্চ ২০২৩

 পানি নেই পুনর্ভবা নদে ॥  ধু ধু বালুচর

পুনর্ভবা নদ এখন পানিশূন্য

নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবায় পানি নেই। নাব্য হারিয়ে এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। ফলে ধু ধু খরায় এর তলদেশ খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নদে পানি না থাকায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, নদে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করত অসংখ্য পাল তোলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলত গোমস্তাপুর, রহনপুর, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য উপজেলার ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে। ওই সব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাটবাজারে ব্যবসার জন্য বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ছোট-বড় নৌকায় পাল তুলে ছুটে চলতেন। শুধু পণ্যই নয়, হাটবাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। সে সময় পুনর্ভবা ছিল পূর্ণ যৌবনা। এলাকার একমাত্র নদিপথ হিসেবে ব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার শক্ত ভিত গড়ে তুলেছিল। শুধু হাটবাজারই নয়, নদটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। এর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবুজ ফসল ধান ফলাত। এই পানি দিয়ে নানা ফসলে ভরে উঠত কৃষকের খেত। আবার ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই পুনর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারাবছর। ফলে জীবিকার সন্ধানে নদসংলগ্ন পাশের গ্রামগুলোতে বহু জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। জীবিকা নির্বাহের জন্য জেলেরা রাত-দিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতেন মাছ ধরার জন্য। মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলত।

সময় গড়িয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভরা যৌবনা পুনর্ভবা এখন খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। খরার সময় বালু ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না এর তলদেশে। কারণেই আশপাশের জেলে পরিবারগুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। নদের পাড়গুলো পরিণত হয়েছে কৃষি জমিতে। নদীগর্ভে জেগে ওঠা চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলা। এক সময়ের ব্যবসা-বণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। থমকে গেছে নদ, নিভে গেছে বিপুল সম্ভবনা। নদকেন্দ্রিক সম্ভবনাগুলো  নিভে গেলেও কেউ কখনো এসব নিয়ে ভাবেনি। 

সরকারিভাবে নদটি খননের পদক্ষেপ নেওয়া হলে অন্তত সারাবছরই এতে পানি থাকত। এতে কৃষকের জমির ধানের উৎপাদন বেড়ে যেত। নদটিও পরিণত হতো না বালুচরে। তা ছাড়া নদটি কখনো খনন বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে নদটির পাড় ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে। সুযোগে অনেকেই ধান চাষ করছেন। খনন না করলে এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা হয়তো বা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। সেইসঙ্গে পানির অভাবে জমিতে ফসল হবে না বলে বিশিষ্টজনরা মনে করছেন।

×