ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তপ্রায় রেডিওর ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ব্যবসায়ী কামাল

এন কে বি নয়ন, বোয়ালমারী,ফরিদপুর 

প্রকাশিত: ১৬:১৫, ১৮ মার্চ ২০২৩

বিলুপ্তপ্রায় রেডিওর ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ব্যবসায়ী কামাল

মুদি দোকানদার কামাল

এখনও রেডিওর ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পৌরসদরের ব্যবসায়ী  কামাল বিশ্বাস (৩৩)। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত-দুপুর পর্যন্ত মুদি দোকানদারী করার পাশাপাশি রেডিও শোনেন তিনি। 

২০০৩ সালে দুর্ঘটনায় একটি হাত কাটা পড়ে। কিন্তু প্রতিবন্ধিতা তাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। এগিয়ে চলার অদম্য শক্তি নিয়ে তিনি মুদি দোকান করে সংসার চালান। অধিকাংশ ক্রেতারা তাকে এ ঐতিহ্য ধরে রাখায় সাধুবাদও জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পৌর সদরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আঁধারকোঠা গ্রামের মৃত আলম বিশ্বাসের ছেলে কামাল বিশ্বাস। স্ত্রী, তিন ছেলে নিয়ে তার সংসার। আধুনিক ডিজিটাল যুগে এখন আর রেডিও চোখে পড়ে না। অথচ এক সময় প্রায় বাড়িতে, চা-পানের দোকান, হোটেলে রেডিও বাজতে শোনা যেত। এখন রেডিও বিলুপ্তির পথে। 

উপজেলা সদরের পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আঁধার কোঠা চৌরাস্তায় মুদি দোকান ব্যবসায়ী কামাল বিশ্বাসের রেডিও শোনার নেশা এ যুগের ডিজিটাল প্রযুক্তিও থামাতে পারেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, কামাল বিশ্বাস বেচাকেনায় ব্যস্ত। এক হাত দিয়েই বেশির ভাগ কাজ করছেন। দোকানের এক পাশে তাকের উপর মিডিয়াম সাউন্ডে রেডিও বাজছে। দোকানে ক্রেতাদের সামলানো পাশাপাশি তিনি রেডিওর অনুষ্ঠানে মন রাখছেন। যত সময় দোকান খোলা থাকে রেডিও ততো সময় চলতে থাকে। 

কামাল বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেন, আমি পরিশ্রম করে সংসার চালাই। চাউল কল দুর্ঘটনায় একটি হারিয়ে প্রতিবন্ধিতা আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কারও কাছে হাত পেতে নয়, নিজের ও পরিবারের জীবিকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। ছোট সময় থেকেই রেডিও শুনতাম। সেই থেকে নেশা। ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল, টিভি দেখি না। এখনও দিনে-রাতে রেডিও শুনি। প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে রাত প্রায় সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত দোকানদারি করি। আর এ সময় পর্যন্ত একটানা রেডিও চলতে থাকে। দোকান খোলা থাকলে রেডিওও খোলা থাকে। এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে চলছে। রেডিওটির বয়সও প্রায় ১০ বছর। আগে ছোট একটি রেডিওর দাম ছিলো ২০০ টাকা। এখন হাজার টাকা হলেও নতুন একটি রেডিও পাওয়া যায় না। দোকানও নেই, মেকানিকও পাওয়া যায় না।
কিছুদিন আগে আমার রেডিওটি সামান্য সমস্যা দেখা দিলে পুরো জেলায় একটি যন্ত্র খুঁজে পাইনি। পরে এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে অর্ডার করে আনতে হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ভরত রাজবংশী জনকণ্ঠকে বলেন,পুরো উপজেলায় একমাত্র কামালের দোকানেই দিন-রাত মিলে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা একটানা রেডিও চালু থাকে। এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে দেখে আসছি। রেডিওতে প্রচারিত খবর, অনুরোধের আসর, ছায়াছবির গান, যাত্রাপালা, নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান কামালের মুখস্থ। 

স্থানীয় বাসিন্দা পল্লব কুমার বালা জনকণ্ঠকে বলেন, বাসায় ইন্টারনেট,মোবাইল,স্মার্ট টিভি থাকলেও সময় করে রাত দশটার সংবাদ কামালের দোকানে বসে রেডিওতে শুনে থাকি। আরও অনেকেই এখানে রেডিওতে খবর শুনতে আসেন। কিছু সময়ের জন্য হলেও পুরনো যুগে ফিরে যাই।

পৌরসভার সোতাসী গ্রামের বাসিন্দা,বিশিষ্ট ঠিকাদার শাহিনুজ্জামান খান ডেভিড জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় দিনই রাতে অফিস থেকে ফেরার সময় দোকান থেকে সদাই নিওয়ার সময় রেডিও বাজতে দেখি। যা জেলায় সচরাচর চোখে পড়ে না। 

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আঃ সামাদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে রেডিও যেন বিলুপ্তির পথে। নতুন রেডিও'র দোকানের পাশাপাশি শ্রোতাও হারিয়ে গেছে। অদম্য কামাল বিশ্বাস একজন নিয়মিত রেডিও শ্রোতা। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি দোকানদারি করেন এবং নিয়মিত রেডিও শ্রোতা হিসেবে স্থানীয়রা জানেন। এখনো তিনি ধরে রেখেছেন রেডিও শোনার এ ঐতিহ্য।
 

এসআর

×