ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ-১১

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ডজনেরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ / কামরুল এহসান, ভালুকা

প্রকাশিত: ০০:২০, ১৭ মার্চ ২০২৩

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ডজনেরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী

আওয়ামী লীগের আরেক ঘাঁটি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন মেজর আফসার বাহিনীর সুরক্ষিত দুর্গ হিসেবে

আওয়ামী লীগের আরেক ঘাঁটি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন মেজর আফসার বাহিনীর সুরক্ষিত দুর্গ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ভোটের রাজনীতি। এবারও বেশ শক্ত অবস্থানেই রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ এই আসনে তাদের শক্ত ভিত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের এক ডজনেরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। 
আগামী নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের এবার মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। সম্ভাব্য প্রায় এক ডজন প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন চান। প্রার্থী নির্বাচনে বিচক্ষণতার পরিচয় দিলে আগামী নির্বাচনেও আসনটি আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে সক্ষম হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই গণসংযোগ করছেন। ছবিসহ শুভেচ্ছার পোস্টার ও ব্যানার টানিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজেদের প্রার্থিতার কথা। পুরনো সম্পর্ক অনেকে ঝালাই করছেন। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। নানাভাবে সহায়তাও দিচ্ছেন অনেকে। 
অন্যদিকে, কোন্দল-জর্জর বিভক্ত বিএনপি থেকেও আগামী নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী ধানের শীষের মনোনয়ন চাইবেন। মামলায় জেরবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য আগামী নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোই কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অংশগ্রহনমূলক সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নানা কর্মসূচির নামে তৎপরতা চালাচ্ছে। বসে নেই জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও।
শিল্প ও বনাঞ্চল অধ্যুষিত লাল মাটি পাহাড়িয়া জনপদের একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৩ হাজার ১৯ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৪২ জন। তিন শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে ওঠা শিল্পনগরী ভালুকা বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত মিঠা পানির মাছ উৎপাদনেও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ভালুকার। 
দলের দুঃসময়েও ভালুকার মানুষ আওয়ামী লীগকে কখনই বিমুখ করেনি। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় সারাদেশের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন ভালুকায় বসবাস করছেন। স্থানীয়দের বেশিরভাগই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি। মহান মুক্তিযুদ্ধে মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে সাড়ে চার হাজার সশস্ত্র এবং দুই হাজার পাঁচশত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ভালুকাকে আগলে রাখে। ফলে সংগত কারণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বেশিরভাগ মানুষ আওয়ামী লীগের বড় ভোট ব্যাংক। যদিও পরিবর্তীত পরিস্থিতি আর দলীয় কোন্দলের কারণে স্বাধীনতার পর চারবার এই আসন আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়।
বিগত ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত ভাষা সংগ্রামী অ্যাডভোকেট মোস্তফা এম এ মতিন এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন মুসলীম লীগের প্রার্থী আফতাব উদ্দিন চৌধুরী চাঁন মিয়া। গত ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন সাবেক এমপি আফতাব উদ্দিন চৌধুরী চাঁন মিয়ার পুত্র মুসলিম লীগের প্রার্থী আমান উল্লাহ চৌধুরী।

গত ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল হামিদ বিজয়ী হন। বিগত ১৯৯১ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আমান উল্লাহ চৌধুরী। পরবর্তীতে গত ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে টানা চারবার এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক ডা. এম আমানুল্লাহ। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন- এই আসনের বর্তমান এমপি কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু, সাবেক এমপি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত ভাষা সংগ্রামী অ্যাডভোকেট মোস্তফা এম এ মতিনের কন্যা সরকারি মুমিনুন্নিছা মহিলা কলেজের সাবেক ভিপি, সংরক্ষিত আসনের এমপি ও ভালুকা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা মনি, সাবেক ছাত্রনেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. কেবিএম হাদিউজ্জামান সেলিম, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা ঢাকাস্থ ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহ আশরাফুল হক জর্জ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এম এ ওয়াহেদ, যুবলীগের সাবেক নেতা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপ্লব, চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. এম আমানুল্লাহর পূত্র ল্যাব এইড হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. মোনাসির সাকিফ আমান উল্লাহ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আদনান ইসলাম। 

অন্যদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন- ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ব্যবসায়ী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোর্শেদ আলম। ভালুকা বিএনপি কোন্দল ও গ্রুপিংয়ে জর্জরিত। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলের নেতাকর্মীরা নানা মামলায় জেরবার। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন ছাড়া দলের কোনো তৎপরতা নেই। ভালুকাতে বিএনপির কর্মসূচি পালিত হয় আলাদা আলাদাভাবে।

ভালুকা পৌর মেয়র প্রার্থী বিএনপির হাতেম আলী খান মোর্শেদ আলম গ্রুপে যোগ দেওয়ায় অনেকটা একা ও বেকায়দায় পড়েছেন ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু। এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য একক প্রার্থী হচ্ছেন হাফিজ উদ্দিন মাস্টার। জাতীয় পার্টির এই আসনে তেমন কোনো তৎপরতা নেই।
বর্তমান সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু বলেন, আমার পিতা আফসার বাহিনীর প্রধান মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ। আমার সহোদর ভাই নাজিম উদ্দিন ও মামা মতিউর রহমান সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। আমার পরিবারের ১৯ জন সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। আমার বাবার কাছ থেকে মানুষের সেবা করার মনোবৃত্তিতে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ও সভাপতি,  যুবলীগের সেক্রেটারি ও সভাপতি, একবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিপুল ভোটে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। গত চার বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। করোনার সময়ে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, সাধ্যমতো সহায়তা দিয়েছি। 
তিনি বলেন, বর্তমানে ভালুকায় প্রায় ৫শ’ ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। নির্বাচন এলেই কেবল নেতারা এলাকায় গণসংযোগ করতে আসেন। আর আমি সারাবছর এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ এলাকাবাসী আমাকে ভালোবাসে ও পছন্দ করে। আমার ওপর আস্থা রাখে। আগামী নির্বাচনে আমার কর্মকা- ও এলাকার উন্নয়নসহ জনপ্রিয়তা বিবেচনায় আওয়ামী লীগ অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা রাখছি। 
একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত ভাষা সংগ্রামী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মোস্তফা এম এ মতিনের কন্যা সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি বলেন, আমার পিতা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অবস্থায় ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনে ২১ ফেব্রুয়ারি গেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। তারপর থেকে ভালুকা ও গফরগাঁও উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৫ সালে ভালুকা আওয়ামী লীগের প্রথম সন্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তখন তিনি গণপরিষদের সদস্য হন। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল প্রতিষ্ঠা করে ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আমি মুমিনুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদে তিনবার ভিপি, দুইবার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা সংসদ (ময়মনসিংহ) সদস্য হিসেবে এলাকায় মানুষের পাশে থেকে সেবা করার চেষ্টা করেছি। আগামীতে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ও এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসনে মনোনয়ন চাই। আমি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলে এই আসনে বিজয় সুনিশ্চিত।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ভালুকার আসনটি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি। বিগত ১৯৯৬ সাল থেকে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। দলের ত্যাগী নেতা কর্মীদের যাচাই করে মনোনয়ন দিলে এই আসনে পুনরায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হবে। তিনি আরও বলেন, গত ১৯৯৬ সাল থেকে আমার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল নির্বাচনে সকল পর্যায়ের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সক্ষম হয়েছি । আশা করছি, আগামীতে আওয়ামী লীগ আমার কর্মকা-ের মূল্যায়ন করবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এম এ ওয়াহেদ বলেন, আমি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে মানুষের সেবা ও সমাজের উন্নয়নমূলক কর্মকা- করে আসছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ও জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। কোনো কিছু নেওয়ার জন্য নয়, উল্টো মানুষকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই রাজনীতি করছি। অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে আসা ব্যবসায়ী এই নেতা আরও বলেন, নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলে ও নির্বাচিত হতে পারলে এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. কেবিএম হাদিউজ্জামান সেলিম বলেন, আমি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি স্বাচিপের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। আমার অঞ্চলের মানুষের জন্য আমার পরিবার সব সময়ই নিবেদিত। আমার প্রয়াত পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবিএম আসমত আলী ছিলেন অত্র অঞ্চলের মানুষের প্রিয় নেতা। আমি আমার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষের সেবা করতে চাই। আমার রাজনৈতিক অভিভাবক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা। এলাকার মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে আমাকে মনোনয়নের ব্যাপারে মূল্যায়ন করবে বলে আশা রাখছি।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি, ঢাকাস্থ ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহ আশরাফুল হক জর্জ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আধুনিক ডিজিটাল দেশে পরিণত করেছেন। আগামী দিনের ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তার সহযাত্রী হতে চাই। তিনি বলে, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

দলের দুর্দিনে আওয়ামী লীগের জন্য, নেতাকর্মী-সমর্থক ও এলাকাবাসীর জন্য কাজ করেছি। সব সময় এলাকবাসীর পাশে থেকেছি। এলাকাবাসী আপদ বিপদে, সুখে-দুঃখে সব সময় আমাকে কাছে পেয়েছে। আওয়ামী লীগ আগামীতে এলাকাবাসী ও দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের প্রত্যাশা বিবেচনা করে আমার কর্মকা-ের মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছি।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা দুইবারের নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু, বলেন, আমি স্কুলে থাকা অবস্থায় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করেছি। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে একাধিকবার কারাবরণ করেছি। দলের দুঃসময়ে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করেছি। মানুষের আপদে-বিপদে সব সময় পাশে ছিলাম। দু’বার বিপুল ভোটে ভালুকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আগামী নির্বাচনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা নেতৃত্বকে মনোনয়ন দিলে এই আসনে আবারও নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে জানান তিনি।
 কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপ্লব বলেন, মইন ইউ আহম্মেদের সময়ে আমি কারানির্যাতিত হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সকল কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে যাকে মনোনয়ন দেবেন, তাকে বিজয়ী করে নেত্রীকে নৌকার এই আসনটি উপহার দিতে চাই। তিনি বলেন, পারিবারিক ও রাজনৈতিক কর্মকা- বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছি।
চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. এম আমান উল্লাহর পূত্র ল্যাব এইড হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. মোনাসির সাকিফ আমান উল্লাহ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ ভালুকা উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন ও ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমার বাবার স্বপ্নের কারিগরি শিক্ষা ইনস্টিউট ও মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ সমগ্র ভালুকা উপজেলায় সড়ক পাকাকরণের কাজ বাস্তবায়ন করতে চাই।

আমার প্রয়াত বাবার অবদান বিবেচনায় আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছি। এলাকার প্রতিটি মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় ও আত্মিক যোগাযোগ রয়েছে। আমার ওপর আস্থা রয়েছে এলাকাবাসীর। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে ও পছন্দ করে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য, আওয়ামী লীগ উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি নূরুল ইসলাম খান সোনা মিয়ার নাতি আদনান ইসলাম খান বলেন, আমার দাদা মরহুম নূরুল ইসলাম খান সোনা মিয়া সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। আমিও সুযোগ পেলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করব ।
জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, এলাকাবাসীর সঙ্গে নিবিড় ও আত্মিক যোগাযোগ রয়েছে আমার। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আগামী নির্বাচনে আমাকে দেখতে চায়। তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন পেলে আধুনিক ভালুকা গড়তে ভূমিকা রাখব।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু বলেন, গতবারও আমি মনোনয়ন পেয়েছিলাম। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে এবং দল যদি সেই নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে আমিও আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইব এবং এ জন্য প্রস্তুতিও রয়েছে আমার। তিনি বলেন, কেবল নির্বাচন এলেই নয়, আমি সারাবছর এলাকাবাসীর খোঁজ-খবর রাখি। মানুষের আপদে-বিপদে, সুখে-দুঃখে পাশে থাকি। বিএনপি থেকে আমি একক প্রার্থী। আর কোনো প্রার্থীর কোনো তৎপরতা নেই। আলোচনাতেও নেই। মনোনয়নপ্রত্যাশায় বিএনপি নেতা মোর্শেদ আলমের গণসংযোগ প্রশ্নে জানান, তিনি তো স্থানীয় নেতা। জাতীয় পর্যায়ের কোনো নেতা নন। তার কোনো তৎপরতাও এলাকায় নেই বলেও দাবি করেন তিনি। 
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় বিএনপি থেকে মোর্শেদ আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। ধনাঢ্য এই নেতা এরই মধ্যে নানা কায়দায় এলাকায় নাম ফাটিয়ে আলোচনায় এসেছেন। দলের এক শ্রেণির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মোর্শেদ আলমের কাছে ভিড় জমালেও সময়মতো তারা থাকবেন কি না, এ নিয়ে সন্দিহান স্থানীয়রা।  
জাতীয় পার্টি থেকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম এলাকায় গণসংযোগ করে আসছেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের আস্থাভাজন এই নেতা বলেন, ভালুকা উপজেলায় জাপার ত্যাগী নেতাকর্মী ছাড়াও নতুন প্রজন্মের তরুণ সমর্থকরা আমাকে পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন। তাই আগামী নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।

×