ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বঙ্গবন্ধুর হেলালিয়া হাট রেল স্টেশন

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ১৬ মার্চ ২০২৩

মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বঙ্গবন্ধুর হেলালিয়া হাট রেল স্টেশন

হেলালিয়া হাট রেল স্টেশন

নওগাঁর সীমান্ত ঘেঁষে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার হেলালিয়া হাট রেল স্টেশনটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্টেশন। তৎকালীন সময়ে জাতির পিতা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই এই স্টেশনটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই স্টেশনের সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ অনেকেরই ট্রেন সফরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। 

বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার স্মৃতি রক্ষার্থে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ভ্রমণের তথ্য সম্বলিত ম্যুরাল নির্মাণ করাসহ দ্রুত ছোট পরিসরে টিনের পরিবর্তে আধুনিকমানের একটি আকর্ষনীয় স্টেশন নির্মাণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

সান্তাহার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম খাঁন বলেন, ১৯৬৮ সালে তৎকালীন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রেনযোগে পুরো দেশ সফর করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে ট্রেন যোগে উত্তরবঙ্গ সফরে এলে ছাতনি ও ঢেকড়া গ্রামের জনগণ এই স্টেশনে বঙ্গবন্ধকেু বহনকারী ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয়। 

তখন বর্তমান স্টেশনের স্থানে আয়োজিত ছোট্ট একটি সমাবেশে বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এখানকার মানুষের দাবির ভিত্তিতে কথা দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি ১৯৬৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে এখানে একটি স্টেশন নির্মাণ করে দিবেন। 

পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্থানীয় হাট হেলালিয়ার নামেই টিনের ছাউনির হেলালিয়া হাট রেল স্টেশনটির উদ্বোধন করেন। 

পরবর্তীতে ১৯৮১সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেন যোগে উত্তরবঙ্গ সফরে এলে স্থানীয় মানুষদের দাবির ভিত্তিতে ট্রেন থামিয়ে ট্রেন থেকেই স্থানীয় মানুষের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন। এরপর থেকে এই লোকাল স্টেশনটিতে ৪টি লোকাল ট্রেন দাঁড়াতো। 

পরবর্তীতে উত্তরের চিলাহাটি থেকে দক্ষিণের খুলনাগামী রকেট মেইল ও পার্বতীপুর থেকে রাজশাহীগামী উত্তরা মেইল ট্রেনটি দাঁড়াতো। এরপর ১৭ বছর পূর্বে হঠাৎ করেই সকল লোকাল ট্রেনের বিরতিসহ এই স্টেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, এই অঞ্চলটি মূলত মাদুর তৈরির জন্য বিখ্যাত। সারা দেশের মানুষ যে মাদুর ব্যবহার করেন সেই মাদুর একমাত্র এই অঞ্চলেই তৈরি হয়ে থাকে। আর সেই মাদুর পুরো দেশ এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মাদুর চালান করতে ট্রেনই একমাত্র সুবিধাজনক পরিবহন ব্যবস্থা। মাদুরসহ অন্যান্য উপকরণ এবং যাত্রী পরিবহনের তাগিদে পুনরায় এই স্টেশনে লোকাল দুটি ট্রেনের বিরতির দাবিতে স্থানীয়রা রেলপথ বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সিনিয়র সচিব ও এই এলাকার কৃতি সন্তান ফাতিমা ইয়াসমিন ও প্রকৌশলী শাহ মো. শহিদুল হকের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি এই স্টেশনে উত্তরা মেইল ট্রেনটির বিরতি দেয়া হয়েছে। 

ইতিমধ্যেই এই স্টেশনের আশেপাশে প্রায় ১০টি প্লাষ্টিকের মাদুর তৈরির কারখানা তৈরি হয়েছে। যে ফ্যাক্টরিগুলো থেকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদুর ট্রাক যোগে চালান করা হচ্ছে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অথচ উত্তরা মেইল ট্রেনের পাশাপাশি খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেনটি যদি এই স্টেশনে বিরতি দিতো তাহলে এখানকার ব্যবসায়ীরা পূর্বের মতো খুব কম খরচে ও কম সময়ে মাদুরগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে পারতো। ঐতিহ্যবাহী এই স্টেশনে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার স্মৃতি রক্ষার্থে আধুনিক মানের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দুটি ট্রেনের বিরতি বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রকৌশলী শাহ মো. শহিদুল হক বলেন এই স্টেশনের অনেক তাৎপর্য রয়েছে। যদিও স্টেশনের উত্তর দিকে সান্তাহার জংশন রেলওয়ে স্টেশন ও দক্ষিণ দিকে নওগাঁ জেলার রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে সেহেতু এই স্টেশনে কোন আন্ত:নগর ট্রেনের বিরতি আমরা চাই না। শুধুমাত্র এই অঞ্চলের প্রধান আয়ের উৎস মাদুর পরিবহনের সুবিধার্থে উত্তরের চিলাহাটি থেকে দক্ষিণের খুলনাগামী রকেট মেইলের দ্রুত বিরতি প্রয়োজন। 

এতে করে ট্রেনের মাধ্যমে মাদুর চালানের মাধ্যমে স্থানীয় মাদুর ব্যবসায়ীরা যেমন চরম ভাবে উপকৃত হবেন পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হিসেবে অনেক অর্থ আয় করতে পারবেন। আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে স্টেশনকে ঘিরে স্থানীয় মানুষদের ব্যবসার পরিবেশ। এলাকার হাজার হাজার মানুষের পক্ষে আমি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার স্মৃতি রক্ষার্থে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ভ্রমণের তথ্য সম্বলিত ম্যুরাল নির্মাণ করাসহ ছোট পরিসরে টিনের পরিবর্তে আধুনিকমানের একটি আকর্ষণীয় স্টেশন নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বর্তমান মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন দুলাল বলেন স্টেশনের আশেপাশের এলাকায় ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ১টি হাট ও বাজার, ১টি পোস্ট অফিস, ১টি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া স্টেশনে কোন প্লাটফর্ম না থাকায় ট্রেনে যাত্রী ওঠা-নামা ও মালামাল ওঠানোর সময় চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। 

এছাড়া দীর্ঘদিন টিনের ছাউনির স্টেশনের কোন সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় তা নষ্টের পথে। ছোট ছোট আধুনিকায়নের মাধ্যমেই পুরো দেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করা সহজ। তাই দ্রুত স্টেশনে পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল নিয়োগ প্রদান করে স্টেশনটিকে ছোট পরিসরে আধুনিকায়ন করতে সরকার প্রধানের প্রতি বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছেন স্থানীয়রা।
 

এসআর

×