ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দালালদের খপ্পড়ে রাণীনগর ভূমি অফিস

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ১৬ মার্চ ২০২৩

দালালদের খপ্পড়ে রাণীনগর ভূমি অফিস

ভূমি অফিস

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার মিরপুর গ্রামের মৃত মজির উদ্দিন শেখের ছেলে আবুল হোসেন। আশির দশকে বিয়ে করেন রাণীনগর উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামে। বিয়ের সূত্রধরে আবুল তার স্ত্রীর ভাগের প্রায় ৫ শতাংশ জমি পাবেন শ্বশুড়বাড়ি থেকে। সেই জমি বছরের পর বছর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছে। 

সেই প্রাপ্যতা ফিরে পেতে আবুল হোসেন প্রায় দশমাস আগে ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল প্রক্রিয়া শেষে ভূমি অফিসে এসে একটি মিস কেস করেন। দিনের পর দিন পায়ের জুতা ক্ষয় করে আবুল হোসেন ভূমি অফিসে ধর্না দেওয়ার প্রায় দশ মাস পরে এসে দেখেন তার মিস কেস আবেদনের ওপর স্মারক নম্বরটিও পড়েনি। 

এরপর আবুল হোসেন এক ব্যক্তির  মাধ্যমে অফিসের প্রধান কর্তা ব্যক্তির কাছে গেলে ফাইলটি খুজে বের করে নম্বর বসানোর নির্দেশ দেন তিনি। আবুলের মতো এই রকম শত শত ভুক্তভোগী আছেন যারা ভূমি সংক্রান্ত সেবা নিতে এসে দিনের পর দিন মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ধর্না দিয়েও নিয়মমাফিক সেবা পাচ্ছেন না। ভূমি অফিসের চিহ্নিত দালালদের ছাড়া ও অফিসের লোকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হয়ে সেবা নিতে গিলেই এমন দুর্বিসহ দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন, শক্তিশালী মাধ্যম ছাড়া কখনোও জমি সংক্রান্ত কোন সমস্যায় পড়ে ভূমি অফিস নামক দালালদের আখড়ায় কাউকে আসতে না হয় এমনই দোয়া করবো। আমি গরীব মানুষ। সামান্য এই কাজটি করতে অফিসে এলেই অফিসের লোকজনেরা বলেন আজকে স্যার নেই পরে আসেন। আবার একদিন আসলে সেদিন বলেন, বাদীপক্ষের নাম ঠিকানা দিয়ে যান ফাইল খুঁজে বের করে রাখবো আপনি অমক দিন আসেন। এভাবে আজ প্রায় দশমাস যাবত প্রায় ৬০ কিমি রাস্তা অতিক্রম করে আসছি আর হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। 

অবশেষে কর্তাব্যক্তির হুকুমে ফাইল একটু করে নড়তে শুরু করেছে জানি না আমার এই সমস্যা সমাধান হতে আরো কতদিন লাগবে। 

অফিস প্রাঙ্গণে সরেজমিনে গিয়ে একাধিক সেবা গ্রহিতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমির খাজনা, খারিজ, নামজারী, মিস কেসসহ যাবতীয় জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ভূমি অফিসে এলে অফিসের অভ্যন্তরের ও বাহিরের দালাল ছাড়া সেই সব সমস্যার আবেদনপত্র জমা দিলে তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। 

অথচ দালালদের চাহিদা মতো অতিরিক্ত অর্থ দিলেই চোখের নিমিষেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। বিশেষ করে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যে সব হাবা গোবা গরীব মানুষরা সেবা নিতে আসেন তাদেরকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। 

সেই সব মানুষরা দালালদের মাধ্যমে গেলেও প্রতিটি ধাপে ধাপে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নেয়া হয়। তিন বছরেও একটি মিস কেসের সমস্যা সমাধান হয়নি এমনও নজির রয়েছে এই  ভূমি অফিসে। ভূমি অফিসের সব কর্মচারীরা বছরের পর বছর একই অফিসে কাজ করছেন বলে এখন তারা ঘুষ বাণিজ্য ছাড়া কোন কাজকে সাদরে গ্রহণ করতে পারেন না এমনটিই অভিযোগ সচেতনমহলের। 

সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে ভূমি অফিসে কোন দালাল নেই। এছাড়া স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে অভ্যন্তরের সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেছি। মিস কেসগুলো সমাধান হতে একটু সময় লাগে। তবুও আমি কম সময়ের মধ্য হয়রানি ছাড়াই ভূমি সেবা প্রদান করার চেষ্টা করে আসছি।

এছাড়া যারা দালাল ও অফিসের লোকদের মাধ্যমে হয়রানি হচ্ছেন আমাকে নির্দিষ্ট করে বললে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের চেস্টা করবো। 

এছাড়া অফিসে জনবল অনেক কম হওয়ার কারণেও অনেক সময় সমস্যা সমাধানে দেরি হয়ে যাায়। তবুও আমরা উন্নতমানের সেবা প্রদান করতে বদ্ধ পরিকর।
 

এসআর

×