ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে স্কুল শিক্ষিকাকে খুন করে ভাই-ভাতিজারা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর 

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১৪ মার্চ ২০২৩

সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে স্কুল শিক্ষিকাকে খুন করে ভাই-ভাতিজারা

নিহত স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম এবং গ্রেপ্তারকৃত ভাতিজা উচ্ছাস সরকার।

গাজীপুরে সম্পত্তি আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে এক স্কুল শিক্ষিকাকে খুন করেছে তার ভাই ও ভাতিজারা। প্রায় চার বছর পর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের এক ভাতিজাকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেলে গাজীপুর পিবিআইর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। 

নিহত মমতাজ বেগম (৫৫) রাজধানীর তেজগাঁও (পূর্ব নাখালপাড়া) এলাকার আওরঙ্গজেব খান দুলুর স্ত্রী এবং নাখালপাড়া হলি মডেল কিন্ডার গার্ডেন ইংলিশ বেইজড বাংলা মিডিয়াম স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গ্রেপ্তারকৃতের নাম- উচ্ছাস সরকার (৩০)। সে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া এলাকার দুলাল সরকারের ছেলে এবং নিহত শিক্ষিকার ভাতিজা।

পিবিআই’র পুলিশ সুপার জানান, ২০১৯ সালের ১ মার্চ বিকেলে ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের বাড়ি গাজীপুরের বাঘিয়া এলাকার উদ্দেশ্যে ঢাকার বাসা থেকে বের হন স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম। পরদিন তার লাশ স্থানীয় বাঘিয়া (ডিস পুকুর পাড়) জনৈক শফিউল্লাহর পরিত্যাক্ত বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখেন চাচাতো বোন আম্বিয়া (৪৫)। খবর পেয়ে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ক্লুলেস এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে কোনাবাড়ী থানায় মামলা করেন নিহতের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ। মামলা দায়েরের ২৩ দিন পর পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই গাজীপুরকে দেওয়া হয়।

তিনি জানান, প্রায় চার বছর তদন্তের পর শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের ভাতিজা উচ্ছাস সরকারকে সোমবার ভোররাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত উচ্ছাস এ হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। শিক্ষিকা মমতাজ বেগমের সম্পত্তি আত্মসাৎ এর জন্য এ খুনের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় চার বছর পর স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের ১ মার্চ সন্ধ্যায় স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম তার সহোদর ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের বাসায় আসেন। রাতেই তার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসেন তার ভাই আব্দুর রশিদ ও পরিবারের সদস্যরা। আলোচনার একপর্যায়ে শিক্ষিকার ভাই আব্দুর রশিদ ভিকটিমকে টাকা না দিয়ে জোর পূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এ সময় আব্দুর রশিদের ছেলে নিলয় সরকার উপস্থিত সকলের সামনে ভিকটিমকে গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে পার্শ্ববর্তী মন্ডল বাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে শিক্ষিকা মমতাজ বেগমের লাশ ওই বাড়িগামী রাস্তা সংলগ্ন পরিত্যাক্ত বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ভেতরে ফেলে আসে নিহতের ভাই আব্দুর রশিদ সরকার এবং ভাতিজা উচ্ছাস সরকার ও নিলয় সরকারসহ তাদের সহযোগীরা। আব্দুর রশিদ সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী মন্ডল বাড়ির সাধু হত্যা মামলার এজাহারনামায় আসামি বলে জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত উচ্ছাস সরকার।

এমএইচ 

×