ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহ-৪

বড় দুই দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক

এম. রায়হান, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বড় দুই দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক

কালীগঞ্জ উপজেলা এবং সদর উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৪ আসন

কালীগঞ্জ উপজেলা এবং সদর উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৪ আসন। আসনটিতে জমে উঠেছে নির্বাচনী রাজনীতি। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনা- আগামী নির্বাচনে কে হতে পারেন এই আসনের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠ সরগরম করছেন। গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও বর্তমানে দলটিতে কোন্দল দেখা দিয়েছে। বিএনপিরও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। তারা চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের কোন্দলকে পুঁজি করে আসনটি পুনরুদ্ধার করার। 
কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার একাংশ, একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৮১ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৪১ হাজার ৭৭৫ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৩৯ হাজার ৮৪৬ জন।   
১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ আসনে আব্দুস সাত্তার (জাপা) নির্বাচিত হন, ’৯১ সালে শহিদুজ্জামান বেল্টু (বিএনপি), ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনে শহিদুজ্জামান বেল্টু (বিএনপি), ’৯৬ সালের ২ জুনের নির্বাচনে শহিদুজ্জামান বেল্টু (বিএনপি), ২০০১ সালে শহিদুজ্জামান বেল্টু (বিএনপি), ২০০৮ সালে আব্দুল মান্নান (আওয়ামী লীগ), ২০১৪ সালে আনোয়ারুল আজিম আনার (আওয়ামী লীগ), ২০১৮ সালে আনোয়ারুল আজিম আনার (আওয়ামী লীগ) নির্বাচিত হন।  
এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তার সমর্থকগণের দাবি, এ আসনে তিনিই মনোনয়ন পাবেন। এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারেও তিনি তৎপর। সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় তিনি যথেষ্ট উন্নয়ন করেছেন। মানুষের বিপদে-আপদে তিনি ছুটে যান তাদের পাশে। 
এলাকার ভোটারদের মধ্যে একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে এলাকায় কখনো পুলিশ নিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়নি। বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে বা সভা-সমাবেশে তিনি নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে দিন অথবা রাত যে কোনো সময় পৌঁছে যান এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে কোনো গ্রামে। এলাকায় রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজের একাডেমিক ভবন, স্টেডিয়াম, স্কুল সরকারিকরণ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তার হাত দিয়েই। 
এ ব্যাপারে টানা দুইবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, আমি যেভাবে এলাকার উন্নয়ন করেছি, তাতে আগামী নির্বাচনে পুনরায় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশা রাখি। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমার প্রথম কাজটি হবেÑ মোবারকগঞ্জ চিনিকলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলা। দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে।

লোকসান ছাড়া আলোর মুখ দেখতে পেল না। আমি এ প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ। ঝিনাইদহে রেললাইন, মেডিক্যাল কলেজ করার চেষ্টা করব। এ অঞ্চলের বেকার সমস্যা নিরসনে শিল্প-কলকারখানা গড়ে তুলব। আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার করব। এলাকার বাকি সমস্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণসহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়ন করব। এলাকার জনগণ আমার সঙ্গে। তাতে করে আমি বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। 
এ আসনে কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। গত নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এবারও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। মাঠ পর্যায়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। জোরেশোরেই তিনি মাঠে নেমেছেন। 
এ ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান বিজু বলেন, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি বিজয়ী হব। দীর্ঘদিন কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি হয়নি। মাত্র দুইজনের কমিটি আছে। একজন প্রয়াত হয়েছেন। আমি কালীগঞ্জ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। এখনো সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আমার সে ধরনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আমি দীর্ঘ ৫ বছর কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলাম। পৌরসভাকে ২য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণিতে উন্নীত করেছি। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াব। মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে নেব। 
এ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের স্ত্রী শামীমারা মান্নানও রয়েছেন। দলের জন্য তাদের অবদান অনেক। সেজন্য দলের কাছে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাবি করবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এ আসন থেকে ঢাকা উত্তর মহানগর যুবলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার সাগর নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি নির্বাচনী এলাকায় এসে ভোটার এবং কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগোযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তিনিও এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। 
অন্যদিকে বিএনপি থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা থেকে এলাকায় এসে গণসংযোগ করছেন। দলের সকল কর্মকা-ে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের কাছে তিনি জোর লবিং করে যাচ্ছেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি আশাবাদী বলে জানা গেছে। 
এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেনÑ দল যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে আমি এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। গত নির্বাচনে যেহেতু আমি মনোনয়ন পেয়েছিলাম, সেহেতু আগামী সংসদ নির্বাচনে আবারও আমিই দলের মনোনয়ন পাব বলে বিশ^াস করি। আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আছি। এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছি। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি।

আমার এলাকায় যাদের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে, আমি নিজে সে সব মামলার তদারকি করে আসছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি বিজয়ী হলে কালীগঞ্জকে মাদকমুক্ত করব। দ্বিতীয়, আমি কালীগঞ্জকে দুর্নীতিমুক্ত করব। এ ছাড়া জনগণের কল্যাণে যত ধরনের কর্মকা- আছে, সেগুলো আমি করব। নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াব। সুশাসন বাস্তবায়ন করব। 
মনোনয়নপ্রত্যাশী কালীগঞ্জ থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ। তৃণমূলে তার অবস্থানও মজবুত। ইতোমধ্যে গণসংযোগে অধিক তৎপর হয়েছেন তিনি। দলের কর্মসূচিগুলো পালন করছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের তিনি সংগঠিত করে রেখেছেন। দলের মনোনয়ন পেলে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে প্রচার শুরু করেছেন। 
আব্দুল হামিদ জানান, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে দল যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। আমি যেহেতু স্থানীয়ভাবে দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে রেখেছি, সেহেতু দলের কাছে আমার অধিকারও বেশি বলে আমি মনে করি। আমি দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশা রাখি। মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত। কারণ সাধারণ ভোটাররা আমার সঙ্গে আছেন। 
এ আসনের বিএনপির আরেকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টু। তিনি এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জনসম্মুখে তাকে খুব একটা দেখা না গেলেও দলের মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। এ আসনে জামায়াতের তৎপরতাও আছে। তারা গোপনে গোপনে সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ আসনে কে তাদের প্রার্থী হবেন, এমনটি এখনো শোনা যাচ্ছে না। 
আওয়ামী লীগ আসনটি ধরে রাখতে আর বিএনপি হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে বিভেদ বেশি। এখানে আওয়ামী লীগ তাদের বিভেদ কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করলে বিএনপির সঙ্গে তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আসনটির ভোটারদের ধারণা।

×