
চিরিরবন্দর উপজেলার সাঁইতাড়া ইউপিতে কাঁকড়া নদীতে ছিদ্র রাবার ড্যাম
মোহনপুর রাবার ড্যামটি ছিদ্র হওয়ায় সেচ মৌসুমে বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। হুমকির মুখে পড়েছে সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলার নয়টি ইউপির প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ। শুকনো মৌসুমে রাবার ড্যামটি ফুলিয়ে আত্রাই নদীর ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় পানি ধরে রাখা হয়। আর এই পানি দিয়ে দুই উপজেলার প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধায় বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়।
কিন্তু ড্যামটির রাবার ছিদ্র হওয়ায় তা আর পানি ধরে রাখতে পারছে না। ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে আত্রাই নদীর পানি। নদীর কোনো কোনো স্থান পরিণত হয়েছে ধু-ধু বালুচরে। সেচ মৌসুমে বর্তমানে বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। গত মৌসুমেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। জানা যায়, ড্যামের রাবারটি বার বার ছিদ্র হয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। রাবার ড্যামের রাবারটি পরিবর্তন করলে এর সমাধান হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
শুকনো মৌসুমে সেচকাজে কৃষকের পানির সুবিধার্থে চিরিরবন্দর উপজেলার সাঁইতাড়া ইউপিতে কাঁকড়া নদীতে সরকার ২০০১ সালে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। শুকনো মৌসুমে বেশি পানি ধরে রেখে সেচ সুবিধা বিবেচনায় ২০১৩ সালে সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামে আরও একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছর ধরে শুকনা মৌসুমে দু’টি রাবার ড্যাম চালু রেখে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ সেচের আওতায় এনে ফসল ফলানো হচ্ছে।
তবে গত দুই বছর ধরে এই এলাকার কৃষক মোহনপুর রাবার ড্যামের সেচ সুবিধা পাচ্ছে না। কখনো বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে, আবার কখনো রাবার ড্যামের বেলুনের পাইপ ছিদ্র হয়ে যাওয়ার কারণে পানি আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চলতি ইরি-বোরোর মৌসুমে মাঠের পর মাঠ ফসলি জমি নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। তারা স্থায়ী সমাধান চান।
মোহনপুর রাবার ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, ড্যামের পাইপে ছিদ্র আছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত মৌসুমের শেষ দিকে তা মেরামত করা হয়। কিন্তু এবার আবারও ছিদ্র হয়ে গেছে। গত এক মাস ধরে আলোচনা চলছে তারা দ্রুত ঠিক করে দেবে জানিয়েছে। কিন্তু এখনো তা হয়নি।
চিরিরবন্দরের ভাবকী গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম জানান, আড়াই বিঘা জমিতে তিনি এবার বোরো চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রতিবছর আত্রাই নদীতে রাবার ড্যামের আটকানো পানি দিয়েই তিনি এই বোরো চাষ করেন। কিন্তু এবারও রাবার ড্যামটি নষ্ট হওয়ায় পানির অভাবে জমি প্রস্তুত করতে এবং বোরো ধান রোপণে সমস্যায় পড়েছেন। একই অবস্থার কথা জানালেন কৃষক সুবল দাসসহ অনেকে।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা জানান, গত বছরের রবি মৌসুমে একই অবস্থা হলেও সেটি মেরামত করে কৃষক সুবিধা পেলেও আবারও পূর্বের মতো মোহনপুর রাবার ড্যামে পাইপ নষ্ট থাকায় পানি আটকানো যাচ্ছে না। কৃষকের অভিযোগের পর বিষয়টি নিয়ে এলজিইডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং বিষটি দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে বলে জানান তারা। রাবার ড্যামটি নির্মাণ করার পর স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর এর রক্ষণাবেক্ষণও করে থাকে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এফএম খায়রুল ইসলাম জানান, রাবার ড্যামটি ছিদ্র হয়েছে। এছাড়া রাবার ড্যামের দু’ধারও মেরামত করতে হবে। পানি বেশি থাকলে এটি সংস্কার করা সম্ভব হয় না। তাই পানি কমে আসার পর, এখন কয়েকদিনের মধ্যে তার সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। মেরামতের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি, দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। রাবার ড্যামের সমস্যা দূর করতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। আশা করছি চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা এর সুবিধা পাবেন।