ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ মার্চ ২০২৩, ১১ চৈত্র ১৪২৯

monarchmart
monarchmart

যুদ্ধদিনের স্মৃতি 

শৈলাবাড়িতে দুপুরের পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:২০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শৈলাবাড়িতে দুপুরের পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে

ইসহাক আলী

দুপুরের পর থেকে একটানা রাত নয়টা পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধ হয়। সেখানে মুক্তিকামী যোদ্ধাদের  মধ্যে সামাদ, ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবীব ও সুলতানসহ চার জন শহীদ হন। অনেক পাকি সেনাও নিহত হয়। ৪৩ দিনের প্রশিক্ষণের অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে জীবন বাজি রেখে শৈলাবাড়ির এ  যুদ্ধে আরসিএল গান ব্যবহার করা হয়েছিল পাকি সেনাদের ছাউনিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভারি অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পাকি সেনারা বাধ্য হয়ে পিছু হটে।

ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায় সিরাজগঞ্জ মহকুমা শহরে এবং পরদিন রাতেই পাকি সেনারা সিরাজগঞ্জ শহরের ক্যাম্প গুটিয়ে ট্রেনে ঈশ্বরদীর পথে রওনা দেয়। ট্রেনযোগে যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জের কালিয়া হরিপুরে আরেক দফা সম্মুখযুদ্ধ হয়েছিল। সেখানেও পরাস্ত হয় পাকি সেনারা। এ ছাড়াও ৮ ডিসেম্বর কাজিপুর থানা আক্রমণ ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার এবং পাকি হায়েনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন সিরাজগঞ্জ উত্তর-পশ্চিম সাব-সেক্টরের মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার রণাঙ্গনের যোদ্ধা তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা ইসহাক আলী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল রাতে পাকি হায়েনার দল ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনে সিরাজগঞ্জে ঢোকে। মে মাসের ৩ তারিখে এবড়ো-থেবড়ো এলোপথ পেরিয়ে কখনও নৌকায়, কখনও হেঁটে নেত্রকোনার তুরা পাহাড় দিয়ে ভারতের মাইনকার চরে পৌঁছাই। সেখানে ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ধরা পরি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। পরবর্তীতে ছাড়া পেয়ে চলে যাই দেরাদুনের চাকরাতা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। ৪২ দিন প্রশিক্ষণ হয় সেখানে।

প্রশিক্ষণের সেই কষ্ট এবং প্রশিক্ষণ শেষের দিনগুলোর কথা মনে হলে আজও চোখে পানি চলে আসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক, দেশমাতৃকার স্বাধীনতা এবং বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার দৃঢ়প্রত্যয় মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহস জুগিয়েছে। দেশ স্বাধীন করতে সব কষ্ট ভুলে অমিত সাহস নিয়ে এগিয়ে যাই রণাঙ্গনের মাঠে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলী বলেন, দেরাদুনের চাকরাতা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে আসি শিলিগুড়ির পাংগা ক্যাম্পে। এরপর সাতজনের একটি টিম নিয়ে দেশের ভেতরে ঢুকি। সিরাজগঞ্জের মাটি পাকি হায়েনাদের কবলমুক্ত করতে তৎকালীন ছাত্রনেতা মোজাফ্ফর হোসেন মোজামের নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জ উত্তর-পশ্চিম সাব-সেক্টর গঠিত হয়। এতে আমাকে ডেপুটি কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।

যুদ্ধকালীন অনেক ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। রৌমারী ইয়ুথ ক্যাম্প ও রণাঙ্গনে প্রতিদিনই নতুন নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম হয়েছে। গেরিলা পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন সদস্য সংগ্রহ করি। একপর্যায়ে সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭ জনে। এরপর সিরাজগঞ্জের পথে চলে আসি।
তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ তখন আগুনে পোড়া জনমানবহীন একটি শহর। গুটিকয়েক রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্য, পাকি হায়েনাদের তল্পিবাহক শান্তি কমিটির কয়েক সদস্য এবং পাকি হায়েনার দল ছাড়া সাধারণ মানুষের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। রাজাকারদের সহায়তায় পাকি হানাদাররা প্রতিদিনই রাতে গ্রামে গ্রামে হানা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার পিতা-মাতা, মা-বোনদের ধরে নিয়ে ক্যাম্পে নির্যাতন করেছে। রাত এলেই সিরাজগঞ্জ এক ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হতো। দাউ দাউ করে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যেত, চিৎকার আর গুলির শব্দ ভেসে আসত কানে।
রণাঙ্গনের যোদ্ধা ইসহাক আলী বলেন, সিরাজগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। কিন্তু শহরকে মুক্ত করতে প্রধান বাধা শৈলাবাড়ি পাকি হায়েনার ক্যাম্প। এর আগে ভাটপিয়ারী পাকি হায়েনা দলের ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে গুটিয়ে নেওয়া হয়।

শৈলাবাড়ি ক্যাম্প আক্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ১১ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর থানার ছোনগাছা মাদ্রাসা মাঠে আমির হোসেন ভুলুর নেতৃত্বে এক গ্রুপ, খ ম আকতারের নেতৃত্বে এক গ্রুপ, রৌমারী ইয়ুথ ক্যাম্পের পরিচালক ইসমাইলের নেতৃত্বে এক গ্রুপ, গোলাম হায়দারের নেতৃত্বে এক গ্রুপ, জহুরুল ইসলাম মিন্টুর নেতৃত্বে এক গ্রুপ এবং ইসমাইল হোসেন হজ গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপ একত্রিত হয়ে বৈঠক করা হয়। মুজিববাহিনীর কমান্ডার যেহেতু অফিসিয়াল কাজে দূরে ছিলেন, সেহেতু ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে আমি (ইসহাক) দায়িত্ব পালন করি এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করে শৈলাবড়ি ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।

১২ ডিসেম্বর শৈলাবাড়ির চারপাশে বিভিন্ন গ্রুপের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। শৈলাবাড়িতে পাকি হায়েনাদের ক্যাম্প আক্রমণ ছিল একটি দুূরূহ কাজ। কারণ জায়গাটা ছিল খুবই অসমতল। তার পরও আক্রমণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে দুপুর থেকেই আক্রমণ শুরু করা হয়। প্রথমেই আরসিএল গান ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু অসমতল জমিতে আরসিএল গানের পিন ভেঙে গেলে আর তা ব্যবহার করা যায়নি। একটানা রাত নয়টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ সময় মুক্তিকামী যোদ্ধাদের মধ্যে বহুলির সামাদ, ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবীব, সুলতানসহ চারজন শহীদ হন। অনেক পাকি সেনাও নিহত হয়।

পাকি সেনারা ক্যাম্প গুটিয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে মূলক্যাম্পে চলে যায়। পরদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে  বিভিন্ন স্থানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পাওয়া যায়। এ থেকে ধারণা করা হয়, পাকি সেনারাও অনেকে নিহত হয়েছে। সেখান থেকে পাকি সেনাদের ভারি কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর রাতেই পাকি হায়েনার দল তাদের মূল ক্যাম্প গুটিয়ে ট্রেনে সিরাজগঞ্জ শহর ত্যাগ করে। খবর পেয়ে ১৪ ডিসেম্বর প্রত্যুষে মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে, মুক্ত শহরে চাইনিজ রাইফেল, স্টেনগানের গুলির মুহুর্মুহু শব্দ তুলে উল্লাসে ফেটে পড়ে বীর বাঙালি। সাধারণ মানুষ ও মুক্তিকামী জনতা একাকার হয়ে ‘জয় বাংলা’ সেøাগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে।

monarchmart
monarchmart

শীর্ষ সংবাদ:

পুনরায় দূতাবাস চালু করছে সৌদি ও সিরিয়া
ইন্টারপোলের রেড নোটিসের তালিকায় আরাভ খান
বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে খাদে, নিহত ২
রাজধানীতে মাদকসহ গ্রেপ্তার ৭৪
এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা লঙ্ঘন করায় ৮৪ মামলা
লোকসভার সাংসদ পদ হারালেন রাহুল গান্ধী
বিএনপির আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ফখরুলদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই :ওবায়দুল কাদের
খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা
রাজা তৃতীয় চার্লসের ফ্রান্স সফর স্থগিত
সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ১১
রাজধানীতে স্কুল শিক্ষিকার আত্মহত্যা
প্রথম দিনেই জমে উঠেছিলো রাজধানীর ইফতার বাজার
ক্যানসার ফাউন্ডেশন চালু করলেন সাকিব
রমজানে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা
ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ