ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জ-১

নৌকার শক্ত ঘাঁটি, বিএনপি চাইছে ঘুরে দাঁড়াতে

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:১০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নৌকার শক্ত ঘাঁটি, বিএনপি চাইছে ঘুরে দাঁড়াতে

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখনো প্রায় এক বছর বাকি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখনো প্রায় এক বছর বাকি। কিন্তু এখনই নির্বাচনী এলাকায় বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। বর্ষায় যমুনা নদীর উত্তাল ঢেউ যেমন ছুটে চলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তরে, ঠিক তেমনি যমুনাপাড়ের সিরাজগঞ্জ জেলার ছয়টি আসনেই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে নৌকার শক্তিশালী ঘাঁটি বলে পরিচিত কাজীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-১ আসন। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকের বুলেটে নিহত জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী এই আসন থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের সহচর এই জাতীয় নেতা দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় আসীন হয়েছেন।  
তাঁরই সুযোগ্য সন্তান ও রাজনৈতিক উত্তরসূরি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম তাঁর পিতার এই আসন থেকে ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে একাধিকবার মন্ত্রী হয়েছেন, জাতীয় নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর নাসিমপুত্র প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় কাজীপুরের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এর আগেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে কাজীপুর আসন থেকে দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। 
কাজীপুরের ১৩টি ইউনিয়ন, এক পৌরসভা এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬শ’ ৭৬। স্বাধীনতার পর থেকেই আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবারই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এই আসনে জয়লাভ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নৌকার বিজয়রথ অব্যাহত রেখে প্রধানমন্ত্রীর হাতে আসনটি উপহার দিতে চায়। অন্যদিকে বিএনপিও চেষ্টা করছে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে। তবে আগামী নির্বাচনেও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই বিজয়ী হবেন বলে এলাকার সচেতন ভোটাররা মনে করছেন।

বিগত টানা ১৪ বছরে পুরো কাজীপুরের চেহারাই পাল্টে গেছে। শুধু কাজীপুর নয়, প্রয়াত জাতীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম-এর হাতের ছোঁয়ায় পুরো কাজীপুর জেলাতেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রয়াত আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর মোহাম্মদ নাসিমের প্রচেষ্টায় কাজীপুরসহ সিরাজগঞ্জ জেলার উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। এলাকার মানুষের জীবনমানও পাল্টে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনী এলাকায় গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ভিত। এ কারণে সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনই এখন আওয়ামী লীগের দখলে। 
২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যুর পর সিরাজগঞ্জসহ পুরো উত্তরাঞ্চলের মানুষ হারায় তাদের প্রিয় নেতা ও অভিভাবককে। শূন্য এ আসনে হাল ধরেন তাঁরই সুপুত্র প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তানভীর শাকিল জয়। 
কাজীপুরের মানুষ বরাবরই শহীদ এম মনসুর আলী ও মোহাম্মদ নাসিমের ভক্ত এবং তাঁদের কাছে ঋণী।

প্রতিবার জাতীয় সংসদের নির্বাচন এলে কাজীপুরের ভোটাররা সেই ঋণ শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নৌকায় ভোট দেয়। আগামী নির্বাচনেও তানভীর শাকিল জয় এ আসনে শক্ত প্রার্থী হলেও আসনটিতে নৌকার প্রার্থী হতে চান সাবেক এমপি প্রয়াত ড. মোহাম্মদ সেলিম পুত্র শেহরিন সেলিম।
অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা, সিরাজগঞ্জ শহর বিএনপির সভাপতি টিএম নাজমুল হাসান রানা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা ও টিএম তাজিবুল ইসলাম তুষার তালুকদার। তাঁরা এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোট, কমিউনিস্ট পার্টি, জাকের পার্টি ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
বর্তমান সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় তাঁর নির্বাচনী এলাকা কাজীপুরের অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য প্রথমেই দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে আমার নির্বাচনী এলাকায় কোনো উন্নয়ন হতো না, এমনকি প্রমত্তা যমুনার ভাঙনে গ্রাম জনপদ বিলীন হয়ে যেত। যেমনটি পঁচাত্তরের পরে ২১ বছর কাজীপুরের মানুষ ছিল অবহেলিত, উন্নয়ন বঞ্চিত।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল ক্ষমতায় এলে কাজীপুর তথা সিরাজগঞ্জের উন্নয়নের বরপুত্র আমাদের প্রিয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম প্রথমেই কাজীপুর থেকে জেলার দক্ষিণের এনায়েতপুর পর্যন্ত নদীপাড়ে ১১টি স্পার নির্মাণ করে প্রমত্তা যমুনার ভাঙন থেকে রক্ষা করেছিলেন। উত্তরের প্রথম জেলা শহর সিরাজগঞ্জে প্রাকৃতিক গ্যাস লাইন সংযোগ দিয়ে গৃহস্থালী কাজ ও শিল্পায়নের শুভ সূচনা করেন। 
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে এসব অবকাঠামো প্রতিহিংসার কবলে পড়ে। যমুনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ অঞ্চলের মানুষ। এরপর ২০০৮ সালে দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ অঞ্চলের উন্নয়নের সুবাতাস বইতে শুরু করে। আমাদের প্রিয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সড়ক ও সড়ক অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো, ম্যাটস, আইএইসটি, ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, দুর্গম চরে টেকসই পাকা সড়ক, শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ, ফোরলেন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন এমনকি গ্রাম পর্যন্ত উন্নয়নের আওতায় এসেছে।

সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জামালপুর থেকে দুর্গম চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামীতে নৌ-বন্দর, সারের বাফার স্টক গোডাউন, গ্যাসভিত্তিক শিল্পায়ন গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানালেন এই সংসদ সদস্য। 
কাজীপুর উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেকুল ইসলাম অনু বলেন, কাজীপুরের মানুষের প্রিয় নেতা প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় এমপির কাজীপুর ও উত্তর সিরাজগঞ্জের ৫ ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়ন এমনকি গ্রাম পর্যন্ত বিচরণ রয়েছে। মাসের ১৫ দিনেরও বেশি সময় তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেন, মানুষের জীবনমান ও ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেন। 
এদিকে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী সেলিম রেজা ও নাজমুল ইসলাম তালুকদার রানা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ^াস উঠেছে।

দল নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিলে এবং জনগণ ভোট দেবার সুযোগ পেলে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সে লড়াইয়ে বিএনপি জিতবে। অন্যান্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এখনো জোরেশোরে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করতে দেখা যায়নি।
বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সহসভাপতি ও কাজীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক টিএম নাজমুল হাসান রানা বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আমাদের দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে কাজীপুর আসনে জনগণ বিএনপিকেই ভোট দেবে। পরিবারতন্ত্র উৎখাত করবে। 

×