ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পার হলেও শেষ হয়নি সেতুর কাজ

৫০ হাজার মানুষের চরম ভোগান্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ০১:০০, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

৫০ হাজার মানুষের চরম ভোগান্তি

সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বেগুনটাল খালে নির্মাণাধীন সেতু

নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পার হলেও শেষ হয়নি টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় নির্মাণের কাজ। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় জনসাধারণ। চরম ভোগান্তি সত্ত্বেও ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহসও পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। অন্যদিকে সেতু নির্মাণ কাজের সময় শেষ হলেও তিন বছর সময় নির্ধারণ রয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। 
দীর্ঘ সময়ে মানুষের এই দুর্ভোগ সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে নীরব টাঙ্গাইল এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বেগুনটাল খালে নির্মাণাধীন ওই সেতুর কাজটি করছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ও হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান। 
জানা যায়, বাসাখানপুর বাজার হুগড়া ইউপি ও বেগুনটাল সড়কে খালের ওপর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ খানের নামকরণে ও তিন কোটি ৯৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৭৫ টাকা ব্যায়ে ৫০ মিটার গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজের টেন্ডার দেয় টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কাজটি পান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২০২০ সালের ৫ জুলাই নির্মাণকাজ শুরু হয়। আর ২০২১ সালে ৪ এপ্রিল সমাপ্তির সময়সীমাও বেঁধে দেয় এলজিইডি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বেগুনটাল এলাকায় ব্রিজটি নির্মাণে দীর্ঘ সময় লাগায় চরম সমস্যায় রয়েছেন তারা। এই ব্রিজ হয়ে যমুনা নদীপথে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর, টাঙ্গাইলের কাকুয়া ও কাতুলী ইউনিয়নের তোরাবগঞ্জসহ এ ইউনিয়নের পূর্ব হুগড়া, চকগোপাল, সাতানি হুগড়া, ধুলবাড়ী, কচুয়া, বারবয়লা, মহেশপুর, গইরাগাছা, মালতিপাড়া, আনাহলা, চিনাখালী, গন্ধবপুর, বইরাপাড়া, ভাঙ্গাবাড়ী, নরসিংহপুর, গোপাল কেউটিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ব্রিজ না থাকায় প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ পথের যাত্রীরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে ট্রাক, বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পারাপার। চলাচলে সুবিধায় ব্রিজের নিচে বিকল্প পথ করা হয়েছে। ওই পথ দিয়ে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল আর হেঁটে মানুষ চলাচল করতে পারছেন। তবে এটি মূল সড়ক থেকে অনেকটা নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যাওয়াসহ পারাপারে চরম সমস্যা পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারীদের। ওই পথ দিয়ে পারাপারে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন নারী, শিশু, বৃদ্ধ পথচারীসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। 
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, এই ইউনিয়নের পশ্চিম অংশের যমুনা নদীর তীরবর্তী গ্রাম কাকুয়া ও কাতুলীর তোরাবগঞ্জসহ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই ব্রিজ। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা এই ব্রিজের নির্মাণকাজ করছেন। এরপরও দুই বছরে শেষ হয়নি কাজ।

ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ব্রিজটি এখনো চলাচলের উপযোগী হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। স্থানীয় ভুক্তভোগী শাহ জামাল হোসেন বলেন, দুই বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও ব্রিজটি নির্মাণ হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন তারা। ব্রিজের ঠিকাদার ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গত নির্বাচনে হেরে যাওয়াসহ গ্রামে না আসায় ব্রিজটির কাজ বন্ধ রয়েছে। 
হুগড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নূরে আলম তুহিন বলেন, ব্রিজের কাজ শেষ না করাসহ বিকল্প ব্যবস্থা না করায় চলাচলরত মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি দুই দফায় কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে ব্রিজের নিচ দিয়ে মাটি ফেলে বিকল্প পথও করেছেন তিনি। জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। তিনি আগামী বর্ষার আগেই কাজ শেষ করার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী তোরাব আলী বলেন, ব্রিজের মূল কাজের মধ্যে দুটি স্লাব বাদ রয়েছে। তবে এরই মধ্যে ব্রিজের পিলার, পাইল ও একটি স্লাবের কাজ শেষ হয়েছে। কাগজ-কলমে কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ হলেও ব্রিজের কাজ করছেন হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা, বাপ্পি ও মাহাবুব নামের কয়েক ঠিকাদার।
টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিউডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, এই প্রজেক্টের ফান্ড সংকট থাকায় ব্রিজ নির্মাণের কাজ সময়মতো শেষ করা যায়নি। পুনরায় সময়সীমা বৃদ্ধি করাসহ ফান্ড দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যেই কাজটি শেষ হবে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন জানান, রড, সিমেন্টসহ কাজের প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিসহ প্রজেক্টে ফান্ড না থাকার অজুহাত দেখাচ্ছেন ঠিকাদাররা। এ কারণে আমি চলতি অর্থবছরের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়াসহ ঠিকাদারদের কাজ শেষ করতে না পারলে অফিসকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে স্যারেন্ডার করতে বলে দিয়েছি।

×