ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘিওরে কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও ইছামতীতে নাব্য সংকট

নদীর বুকে ধুধু বালুচর

সংবাদদাতা, ঘিওর, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:২৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

নদীর বুকে ধুধু বালুচর

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ধলেশ্বরী-কালীগঞ্জ ও ইছামতি নদীতে এখন শুধু ধুধু বালুচর 

ঘিওর উপজেলার ধলেশ্বরী, ইছামতী ও কালীগঙ্গা নদীর বুকে শুধু এখন ধু ধু বালুচর। নাব্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটের মুখে ঘিওরের নদীগুলো। মরা নদীর বুকে আবার কোথাও ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের প্রায় পুরো সময়টাই থাকে পানিশূন্য। কোথাও গরু চরানো কিংবা দুরন্ত কিশোরদের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে। তিন যুগ আগেও এই নদীতে চলাচল করত বড় বড় ফেরি, লঞ্চ ও জাহাজ। কিছু কিছু নদীতে হাঁটুর নিচে পানি দেখা যাচ্ছে। নদীগুলো দীর্ঘদিন ধরে খনন না করার দরুন ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলাতে কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতীসহ মোট ১১টি নদী রয়েছে। মোট আয়তন এক হাজার ৩৭৯ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ২৪১ কিলোমিটার নদী এলাকা। কালীগঙ্গার দৈর্ঘ্য ৭৮ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৪২ মিটার। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দৌলতপুরে চর কাটারি এলাকায় যমুনা থেকে উৎপন্ন হয়ে কালীগঙ্গা ঘিওর উপজেলার মাইলাগী, বৈলট, আশাপুরের পাশ দিয়ে জাবরা, দুর্গাপুর ও তরা ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে।

এখান থেকে গালিন্দা, নবগ্রাম, চরঘোসতা, আলিনগর চর, শিমুলিয়ায় এসে পদ্মার সঙ্গে মিশেছে। বর্তমানে এখান থেকে আরও খানিকটা এগিয়ে হাতিপাড়া, বালুখন্দ, পাতিলঝাপ, শলা হয়ে আলিনগরে এসে ধলেশ্বরীতে মিশে গেছে।
৮০ দশকের শুরুর দিকেও কালীগঙ্গা দিয়ে বড় বড় ফেরি, লঞ্চ চলাচল করত। বর্তমানে কালীগঙ্গার বুকে পানির অস্তিত্ব নেই। বৃহৎ এ নদীটির দুরবস্থার কারণে শুধু নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়নি, নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজারো জেলে পরিবারে চলছে দুর্দিন। নদীতে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। অনেকেই মাছ ধরার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যারা পেশা বদল করতে পারেননি, তাদের জীবন কাটছে মানবেতরভাবে।

নদী মরে যাওয়ার ফলে কৃষিনির্ভর এই এলাকার সেচ কাজও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মানিকগঞ্জ সদরের বেউথা, বান্দুটিয়া, পৌলি এবং তরা, উত্তর তরা এলাকার কালীগঙ্গায় বিশাল বিশাল চর পড়েছে। চরে আবাদ হচ্ছে ফসলের। অনেক জায়গায় চলছে নদী দখলের নানা কর্মযজ্ঞ। জামাল উদ্দিন (৮২), রকিব উদ্দিন (৬৫) আবুল হোসেসহন (৮২) অনেকেই জানান, ঘিওর উপজেলার উত্তর তরা নদীর পাড়ে তাদের বাড়ি। ১৫/২০ বছর আগেও এত খারাপ অবস্থা ছিল না। নদীর পাশে তাদের বাড়িঘর ছিল।

তারা একসঙ্গে মাছ ধরতেন, গোসল করতেন। এ ছাড়া ঘরের কাজ এবং কৃষিকাজ নদীর পানি দিয়েই করতেন। এখন নদীতে পানি নেই। বেশিরভাগ জায়গা ভরাট হয়ে ও দখল হয়ে গেছে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচকাজে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলীম মিন্টু জানান, আগে নদীর পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেওয়া হতো। এখন পানির সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর আলম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হলো নদী, আর এ জন্যই এ দেশের জমি যথেষ্ট উর্বর। প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে মাটি ও পলিতে নদীটি ভরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে দখল, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নদী শাসনের ফলে নদীর এই দৈন্যদশা। 
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন বলেন, পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত বছর বিআইডবিউটিএর আওতায় কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী খনন কাজ করা রয়েছে। এ ছাড়াও কালীগঙ্গা নদী ভাঙনরোধে ও স্বাভাবিক স্রোতধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি মেগা প্রকল্প আগামী একনেকে পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীতে নদী খননকাজ শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

×