ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিত্যক্ত ঘোষণার ১৩ বছরেও নির্মাণ হয়নি নতুন ভবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর 

প্রকাশিত: ১৫:০১, ২৫ নভেম্বর ২০২২

পরিত্যক্ত ঘোষণার ১৩ বছরেও নির্মাণ হয়নি নতুন ভবন

জরাজীর্ণ স্কুল ভবন। ছবি: জনকণ্ঠ

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের ৯৩নং কড়াইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন ভবন নির্মাণ না করা হয়নি। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে বিঘি্নত হচ্ছে। 

পরিত্যক্ত ভবনের সঙ্গে দুইটি টিনের এক চালার মধ্যে চলছে পাঠদান। এতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের। বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। খুব শিগিরই নতুন ভবন বরাদ্ধ পাওয়া যাবে বলে জানালেন রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান।

জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের অজপাড়া গাঁয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী যোগেশ চন্দ্র ঢালী ও ফুলমালা রায় ষাটের দশকে বিদ্যালয়ের নামে ৫২শতাংশ জমি দান করেন। আর এই জমির উপরই নির্মাণ করা হয় অবহেলিত জনপদে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জমিদাতা পরিবারের সদস্য শ্রীকান্ত ঢালী এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালে বিদ্যালয়টি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয় এবং ২০১৩সালে সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯৩-৯৪ সালে সরকারি অর্থায়নে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণের এক যুগ পার হতে না হতেই ভবনের ভীম, ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয় এবং ছাদের পলিস্তরাসহ বড় বড় আস্তর খসে পড়তে থাকে। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। বিকল্প কোন জায়গা না থাকায় ঝুকিপূর্ণ ভবনের মধ্যেই কয়েকশ কোমলমতি শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষকবৃন্দ ক্লাস চালিয়ে যান। 

এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজৈর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা সরেজমিন বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অন্যত্র ক্লাস করার নির্দেশ দেন। এরই পেক্ষিতে ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কড়াইবাড়ী রবির বাজারের দুর্গা মন্দিরের টিনের একচালা বারান্দার মধ্যে ও খোলা আকাশের নিচে শিক্ষকরা পাঠদান চালিয়ে যান। ঝড় বৃষ্টির সময় শিক্ষার্থীদেরকে মন্দির ও দোকান ঘরের মধ্যে জড়সড় হয়ে থাকতে হতে হয়েছে। 

পরবর্তীতে সরকারি অনুদানে জরাজীর্ণ স্কুল ভবনের সাথেই টিনের দুইটি একচালার মধ্যে পাঠদান শুরু হয়। তাও সামান্য বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীরা জরাজীর্ণ স্কুল ভবনের মধ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের চরম আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় একদিকে যেমন পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে খেলার মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের ৩টি শ্রেণী কক্ষে কোন ক্লাশ না হলেও শিক্ষকরা পরিত্যক্ত ভবনের লাইব্রেরির কক্ষে জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় খাতা পত্র রাখছেন। 

ভাঙ্গাচূড়া ভবনের পাশে ক্লাস করতে ভয় করে বলে জানায় বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র দিগন্ত ওঝা। সরকার আমাদের একটি নতুন ভবন ও খেলার মাঠ করে দিলে আমাদের লেখাপড়া এবং খেলাধূলা করায় ভালো হতো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ রায় জানান, বিদ্যালয়টি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ২০০৯ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর থেকে অনেক কষ্ট করে পাঠদান চালিয়ে আসছি। 

বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনের সঙ্গেই টিনের দুইটি একচালার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছে। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য চলতি মাসে একবার ও বিগত দিনে দুইবার মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর আর কোন পদক্ষেপ দেখছি না। 

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কৃষ্ণকান্ত বাড়ৈ জানান, বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার দীর্ঘদিনেও নতুন ভবন নির্মিত না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় সমস্যা হচ্ছে। তিনি দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আনিসুজ্জামান জানান, বিদ্যালয় ভবনটি ঝুকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষকরা ঝুকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের বাইরে টিনের দুইটি একচালার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছেন। নতুন ভবন বরাদ্দ পাওয়ার জন্যে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এসআর

×