
জামালপুরের ইসলামপুরে পাশাপাশি দুই ভক্তের বাড়ি সেজেছে দুই দেশের পতাকায়
কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা ছড়িয়েছে জামালপুর জেলাতেও। লাতিন আমেরিকার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা আর প্রিয় ফুটবলারদের ছবিতে নিজেদের বাড়ি রাঙিয়েছেন জেলার ইসলামপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের দুই ভক্ত। ২১ নভেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর কাতার বিশ্বকাপ। আর ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তের ফুটবল উন্মাদনা। ইসলামপুর উপজেলার চরদাদনা গ্রামের ব্রাজিল ভক্ত মিনহাজ ইসলাম মুন্না। নিজের বাড়িকে সাজিয়েছেন ব্রাজিলের পতাকার রঙে।
প্রিয় খেলোয়াড় নেইমার, পেলে, রোনাল দিনহোর ছবি ঠাঁই পেয়েছে সেই বাড়ির দেয়ালে। অপরদিকে প্রতিবেশী শামীম হাসান প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসে নিজের বসতঘর রাঙিয়েছেন আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি আর ফুটবল জাদুকর ম্যারাডোনার ছবি। তাদের বাড়ি দুটিতে নেইমার কিংবা মেসি বসবাস না করলেও স্থানীয়দের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে মেসি-নেইমারের বাড়ি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নামে।
দুই ভক্তের বাড়ি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ভিড় করছেন চরদাদনা গ্রামে। ইতিমধ্যেই চরদাদনা গ্রামের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন, প্রতিদিন জড়িয়ে পড়ছেন তর্ক-বিতর্কে। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দাবি, ব্রাজিল সমর্থক মুন্না তাদের দেখাদেখি তার বাড়ি ব্রাজিলের পতাকায় সাজিয়েছেন, আর এবারের বিশ্বকাপের শিরোপা মেসির হাতেই উঠবে। অপরদিকে ব্রাজিল সমর্থকরা বলছেন, টিনের ঘর হওয়ায় আর্জেন্টিনা সমর্থকের রং করার কাজ দ্রুত হয়েছে, আর পাকা দালান হওয়ায় তাদের কাজ হয়েছে দেরিতে। আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন অধরাই থাকবে।
যশোরে পতাকার রঙে প্রাচীর
স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, এবার আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে নিজের বাড়ি ও প্রাচীর রাঙিয়েছেন সোনা মিয়া নামে এক কৃষক। সোনামিয়া চৌগাছার কমলাপুর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। চৌগাছা ও মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী সাত গ্রাম। এই সাত গ্রামের অন্যতম গ্রাম কমলাপুর। গ্রামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গ্রামের বাসিন্দারা বরাবরই ক্রীড়াপ্রিয়।
এই গ্রামেরই বাসিন্দা কৃষক সোনা মিয়া। ছোট বেলা থেকেই তিনি ক্রীড়ামোদী এবং বিশ্ব ফুটবলে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। ২০০২ বিশ্বকাপের সময় থেকে নিজের বাড়িতে ওড়ান আর্জেন্টিনার পতাকা। এবার নিজের বাড়িটি রাঙিয়েছেন আর্জেন্টিনার রঙে। শনিবার দুপুরে সরেজমিন সোনা মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিনি নিজের একতলা ফ্ল্যাট বাড়ি, বাড়ির প্রধান প্রবেশ গেট, বাড়ির প্রাচীর এমনকি রান্নাঘর ও পাকা টয়লেট সবই আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে রঙ করেছেন।
বাড়ির প্রবেশ ফটকের ওপরে আর্জেন্টিনা ফুটবল টিমের ছবিসহ প্যানাসাইন, যাতে বিশ^কাপ ট্রফি নিচ্ছেন যুগের অন্যতম সেরা তারকা লিওনেল মেসি। পাশেই একটি বাঁশে আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ছে। এ সময় আর্জেন্টিনাভক্ত সোনা মিয়া বলেন, সামর্থ্য থাকলে কাতারে গিয়ে আর্জেন্টিনার অন্তত একটি ম্যাচ দেখতেন তিনি। সামর্থ্য না থাকায় নিজের বাড়ি আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে রাঙিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন।
ফেনীতে দুই হাজার ফুট পতাকা নিয়ে র্যালি
নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী থেকে জানান, আর্জেন্টিনা সমর্থক ফেনী পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীর উদ্যোগে শনিবার বিকেলে দুই হাজার ফুট পতাকা নিয়ে আনন্দ র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফেনী পাইলট হাই স্কুল মাঠ থেকে র্যালিটি বের হয়ে শহরের জেল রোড, শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক প্রদক্ষিণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঠে গিয়ে শেষ হয। এ সময় র্যালিতে ফেনী জেলার আর্জেন্টিনার সমর্থকগণ অংশ নেয়।
মাগুরায় মিছিল
নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, শনিবার বিকেলে এক হাজার হাত লম্বা আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে শহরে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা মিছিল করেছে। শহরের ইসলামপুর পাড়া থেকে মিছিল শুরু হয়ে সমগ্র শহর প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় সেখানে গিয়ে শেষ হয়। তাদের সঙ্গে ছিল একটি হাতিসহ নানা ধরনের বাদ্য। এ ছাড়া আর্জেন্টিনার সমর্থকরা প্রিয় দলের পতাকা নিয়ে সমগ্র শহর হেঁটে ও মোটরসাইকেলে করে প্রদক্ষিণ করে। মাগুরায় সব থেকে বেশি পতাকা বিক্রি হচ্ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মানির। শহরের সর্বত্র বিশ্বকাপের আমেজ বিরাজ করছে।
ফরিদগঞ্জে মেসির ছবি
সংবাদদাতা ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর থেকে জানান, চৌচালা একটি টিনের ঘর। সাদা আকাশি রঙে রাঙানো। এক পাশে ফুটবল তারকা মেসির ছবি। অন্য পাশে জাতীয় পতাকা ও রং মিস্ত্রির নিজের ছবি আঁকা। ঘরটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুটবলপ্রেমী আর্জেন্টিনার সমর্থক আব্দুর রহমান ভান্টির। তার ঘরটি এখন সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দলে দলে লোকজন আসছেন তার ঘরটি দেখতে।
ফুটবলপ্রেমী আব্দুর রহমান ভান্টি বলেন, ফুটবলের জাদুকর ম্যারাডোনার নাম বাবার মুখে শুনেছি। সে থেকেই অনলাইনে নিয়মিত ম্যারাডোনার পুরনো খেলা দেখি এবং আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে পড়ি। বেশি ভালোবাসি আর্জেন্টিনা তারকা ফুটবলার মেসিকে। তার ভালোবাসা থেকেই নিজে কাজ করে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে আমাদের টিনের ঘর করে আর্জেন্টিনা পতাকার আদলে রং করেছি।
বাগেরহাটে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস
স্টাফ রিপোর্টর বাগেরহাট থেকে জানান, জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে বিশ^কাপের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। উত্তাল সেই ঢেউয়ে চলছে শোভাযাত্রা, তর্ক-বিতর্ক। বাড়ি থেকে বৃক্ষ, হাট-বাজার থেকে যানবাহন যে যার মতো প্রিয় দলের, খেলোয়াড়ের ছবিযুক্ত ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা লাগিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
আর্জেন্টিাইন সমর্থকরা ঢাকঢোল বাজিয়ে শনিবার বিকেলে শহরে বিশাল শোভাযাত্রা করেছেন। শহরের সাধনার মোড় থেকে শুরু করে ফলপট্টি, মাছবাজার, নাগের বাজার, শহররক্ষা বাঁধ, ডাকবাংলো, শহিদ মিনার, শালতলা হয়ে রেলরোড চত্বরে এসে শেষ হয় শোভযাত্রাটি। সুসজ্জিত বাদকদল, মোটরসাইকেল, পিকআপ ও বিশালাকৃতির কয়েকটি পতাকা নিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে শোভাযাত্রা করেন সমর্থকরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সহস্রাধিক আর্জেটাইন ভক্ত অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহনকারীরা মেসি ও আর্জেন্টিনা বলে স্লোগান দিতে থাকেন। নেচেগেয়ে প্রিয় দলকে শুভেচ্ছা জানান তারা।
বাকেরগঞ্জে ‘আর্জেন্টিনা বাড়ি’
স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল ও সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ থেকে জানান, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের রহমগঞ্জ গ্রামের আর্জেন্টিনা সমর্থক শিক্ষক পরিবারের উদ্যোগে নিজ বাড়ির প্রায় আড়াই হাজার ফুট সীমানা প্রাচীর সাজিয়ে তোলা হয়েছে অর্জেন্টিনা পতাকার আদলে। প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে গত একমাস পর্যন্ত তিনজন রঙমিস্ত্রি বাড়ির সীমানা প্রাচীরে রঙ করার কাজ করছেন।
শনিবার বিকেলে রঙমিস্ত্রিরা জানিয়েছেন, আগামী দুইদিনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা হবে। খবরটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের অনেকেই বাড়ির সীমানা প্রাচীর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন। এলাকাবাসীর কাছে ওই বাড়িটি এখন আর্জেন্টিনা বাড়ি নামে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। রহমগঞ্জ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহছেনা আক্তারের পুত্র জাবের মাহমুদ তাছিমের আগ্রহে আর্জেন্টিনার ভক্ত তারা বাবা নুরুল আমিন ও মা মোহছেনা আক্তার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। ওই পরিবারের সবাই আর্জেন্টিনার সমর্থক। তাই আর্জেন্টিনা পতাকার আদলে সাজিয়েছেন নিজেদের বাড়ি আমিন ভিলার সীমানা প্রাচীর।