ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর মহানগর সম্মেলনে কে হচ্ছেন সভাপতি, সম্পাদক? 

গাজীপুর ও টঙ্গী সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ১৮ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৯:৪৬, ১৮ নভেম্বর ২০২২

গাজীপুর মহানগর সম্মেলনে কে হচ্ছেন সভাপতি, সম্পাদক? 

সম্মেলনের জন্য সাজানো হয়েছে গেট। ছবি: জনকণ্ঠ। 

আগামীকাল শনিবার (১৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে পুরো গাজীপুর মহানগর জুড়ে চলছে সাজ সাজ রব। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এই সম্মেলনের মাধ্যমে সাম্প্রতিক জাতীয় রাজনীতিতে সরকার বিরোধীদের বিভাগীয় সমাবেশের শোডাউনের জবাব দিতে পাল্টা শোডাউন নিয়ে মাঠে নামারও ঘোষণা দিয়েছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিকের এই সম্মেলনে। 

গাজীপুর মহানগর সম্মেলনের দিনে বিএনপি সিলেটে বিভাগীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সেখানে বিএনপি সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন দেখাবে। রাজনীতির রাজপথ পুরোপুরি আওয়ামী লীগের দখলে এখনও আছে, এমন জানান দিতে গাজীপুর মহানগর সম্মেলনের পাশাপাশি শোডাউনও দেখাবে টঙ্গী আওয়ামী লীগসহ গাজীপুর মহানগরের ৫৭ ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা। 

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক, স্থানীয় নীতিনির্ধারক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেছেন, সম্মেলনের দিন গাজীপুরের রাজবাড়ী মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশ এলাকা জুড়ে লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম এ সম্মেলন। প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভাপতিত্ব করবেন বর্তমান সভাপতি আজমত উল্লাহ খাঁন। 

দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ খ্যাত গাজীপুর মহানগরের সম্মেলন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করতে সমাবেশ স্থলে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা। এ উপলক্ষে সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে গত সাতদিনব্যাপী চলেছে কর্মী সমাগমের অনুপ্রেরণা দেয়ার কার্যক্রম। শোডাউন করতে বিশেষ করে টঙ্গী আওয়ামী লীগের কার্যালয় প্রতিদিনই সরগরম হয়ে উঠেছে নেতাকর্মীদের ভিড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের আলোচনা। গাজীপুরের রাজবাড়ী ময়দানে সম্মেলন অনুষ্ঠান এবং দিকনির্দেশনার মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছে টঙ্গী স্টেশন রোডের আওয়ামী লীগ কার্যালয়। 

মন্ত্রী রাসেল এমপি, বর্তমান সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খাঁন, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতির বাসাবাড়ি টঙ্গী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় আগে-পরের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিদিনই তারা সভাসমাবেশ করেছেন গভীর রাত পর্যন্ত। গাজীপুর মহানগর কমিটির বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপির ছোট ভাই এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপির চাচা এককালের তুখোড় ছাত্র নেতা রাজপথের লড়াকু সৈনিক মতিউর রহমান মতি নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার পর থেকে পুরো মহানগর জুড়ে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। 

টঙ্গীর ১৫টি ওয়ার্ডসহ নগরের ৫৭টি ওয়ার্ড থেকে সম্মেলনের দিন রাজবাড়ীর সম্মেলন মাঠে বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শক্তির জানান দিবে এমন ঘোষণা দিয়েছেন মতিউর রহমান মতির নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা। বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি আজ শুক্রবার জনকণ্ঠকে বলেন, গাজীপুরের রাজবাড়ী ময়দানে রাজপথের শোডাউনে সম্মেলনস্হল নেতাকর্মীদের জমায়েতের মাধ্যমে গাজীপুরকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ নয়, সমান্তরাল গোপালগঞ্জে পরিণত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোনো লড়াই সংগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে। 

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের একটি পদের বিপরীতে এ পর্যন্ত ১০/১২ জন নেতা তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। সবাই তাদের নিজ নিজ গুনগান এবং বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড কর্মীদের মাঝে তুলে ধরছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এখন সবারই জিজ্ঞাসা কে হচ্ছেন মহানগরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক? এ নিয়ে চলছে চুলচেরা নানা বিশ্লেষণ। ইতোমধ্যে সভাপতি পদে দুএকজনের নাম শোনা গেলেও নিজ এবং কর্মীদের ঘোষণায় আছেন বর্তমান সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খাঁন। আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় কেউ সভাপতি পদের ঘোষণা না দিলেও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপির পুত্র যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপির নামও উঠে এসেছে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের যেকোনো দুটি পদের একটিতে। 

এ পদের আলোচনায় আছেন, দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী আলূম উদ্দিন বুদ্দিনও।  দলের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের রাজপথ কাঁপানো সৈনিক কাজী ইলিয়াস আহমেদও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। আরো যারা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়েছেন তারা হলেন- দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন সরকার রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান (বেনসন মজিবুর), সদস্য এডভোকেট আবদুল হাদী শামীম, যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ব্যারিষ্টার সাজ্জাদ হোসেন ও সাবেক ভিপি আবদুল হালিম সরকার এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন মন্ডল প্রমূখ। 

সবার একটাই প্রশ্ন কে হচ্ছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক? ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠন করার পর ২০১৫ সালে কোন সম্মেলন ছাড়াই প্রথম মহানগরের কমিটি দেয়া হয় এডভোকেট আজমত উল্লাহ খাঁনকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে। সাম্প্রতিককালে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে একটি বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হলে গত ১৯ নভেম্বর সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যহতি দেয়া হয়। 

অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে সদ্য অব্যহতি পাওয়া সাধারণ সম্পাদক পদে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মতো দাপুটে কাউকে চান তৃনমুল নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, সাধারণ সম্পাদক দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। দলকে সামনে এগিয়ে নিতে  সাধারণ সম্পাদকেরই ভূমিকা থাকে মূখ্য। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সাধারণ সম্পাদক। এ ক্ষেত্রে পদের যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিতে হবে খুব ভেবেচিন্তে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়  আওয়ামী শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এদিকে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সামনের রাজপথের লড়াই সংগ্রামে জানবাজি রেখে যারা নেতৃত্ব দেবেন শেষমেশ তাদেরই নয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে দেখা যাবে শনিবার অনুষ্ঠিতব্য গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সম্মেলনে। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সবাই।

এমএইচ

×