
উখিয়ায় ক্যাম্প পরিদর্শনকালে মিশেল
মিয়ানমারে এখনও প্রত্যাবাসন হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। এ ব্যাপারে মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
মঙ্গলবার সকালে ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এ রোহিঙ্গাদের সংগঠন ই-ভাউচার আউটলেট ও রোহিঙ্গা মহিলা গ্রুপের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে ব্যাচেলেট বৃক্ষরোপণের বিভিন্ন প্রকল্পের স্থান সশরীরে পরিদর্শন করেন। ক্যাম্প-২০ এ আইওএম পরিচালিত সাইট ডেভেলপমেন্ট হাব এর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে।
এ ব্যাপারে মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে তিনি আশ্রিত উদ্বাস্তুদের এ আশ্বাস দেন। কয়েকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নারী, যুব প্রতিনিধি ও ধর্মীয় প্রতিনিধি ইমামদের সঙ্গেও আলাদাভাবে মতবিনিময় করেন হাইকমিশনার। এ সময় রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারসহ মানবাধিকারের প্রতি জাতিসংঘ গুরুত্ব দেবে বলে জানান তিনি।
উখিয়া থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জাতিসংঘের হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট কয়েকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নারী, যুব প্রতিনিধি ও ধর্মীয় প্রতিনিধি ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ক্যাম্পের বিভিন্ন লার্নিং সেন্টার পরিদর্শনে যান। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে চান, ক্যাম্পে তারা কেমন আছেন, প্রতি উত্তরে রোহিঙ্গারা বলেন, আমরা ভাল আছি। এ ছাড়াও এত বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। ক্যাম্পে থাকা খাওয়া চিকিৎসা, শিক্ষা, সেবা পাচ্ছেন বলে রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেটকে অবহিত করেন।
ক্যাম্প ৪ এর রোহিঙ্গা নেতা জমির বলেন, নিজ দেশ মিয়ানমারে গিয়ে সুন্দরভাবে নাগরিকত্ব নিয়ে তারা ফিরতে চায়। একই ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ২০১৭ সালের মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নির্যাতন করেছে। তাই আবারও মিয়ানমারে ফিরে গেলে যাতে জোর জুলুম খুনের শিকার হতে না হয়- এ ব্যবস্থা করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের চলাচলে যাতে বাধা না থাকে এবং ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একই ক্যাম্পের আবু হানাত বলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে নিপীড়ন গণহত্যা চালিয়েছে, তা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে- এ ব্যাপারে জাতিসংঘের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বর্বরতা ও নির্যাতনের কথা শোনেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের কাছে ক্যাম্পে শরণার্থী জীবন কেমন কাটছে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান মিশেল ব্যাচেলেট। এ সময় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন রোহিঙ্গা নারী নেত্রী আমেনা খাতুন ও গোলবাহার। তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে তার সঙ্গে মতবিনিময় করা রোহিঙ্গারা সাংবাদিকদের বলেন, মিশেল ব্যাচেলেট আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা ৮-১০ জন নারী ছিলাম।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রত্যাবাসন হবে বলে তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। মওলানা নুর মোহাম্মদ, হাফেজ ইউনুস ও মওলানা আজিম উল্লাহসহ ১০ জন ইমামের সঙ্গে কথা বলেছেন মিশেল ব্যাচেলেট। ওই রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমারে নাকি এখনও প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। পরিবেশ সৃষ্টি হলে, নাগরিক অধিকার দিলে, হারানো ভিটেমাটি পেলে এবং গণহত্যার বিচার করা হলে তারা অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যাবে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারে আসেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলসহ উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছেন। এরপর কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পে এসে শরণার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। পরে ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি, আইওএম-এর চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
দুপুরে কক্সবাজার শহরে ফিরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াতসহ সরকারের শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে আরআরআরসির কর্মকর্তা, ক্যাম্প ইনচার্জ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশেল ব্যাচেলেটের মতবিনিময়কালে আশ্বাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ‘মিয়ানমারে এখনও প্রত্যাবাসন হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। এ ব্যাপারে মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে’ এসব বক্তব্য রোহিঙ্গাদের দেশে (মিয়ানমার) না ফেরার মতো উস্কানি। স্থানীয়রা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্য দেশের প্রতিনিধিদের জন্য নিষেধ থাকলেও জাতিসংঘের জন্য কোন ধরনের বাধা নেই মিয়ানমারে। এখনও জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে তাদের ওপর অর্পিত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘ চাইলে তাদের মাধ্যমে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে রয়েছে।