হাট মাতাচ্ছে ইউটিউবার, চিরকুমার, রাজা, বাদশা ও জমিদার
মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার আর মাত্র কদিন বাকী থাকায় শেরপুরের কোরবানীর পশুর হাটগুলো বেশ জমে উঠেছে। প্রায় সব হাটগুলোতেই কোরবানীর গরু-ছাগল বেচাকেনা বাড়ছে। এরই মধ্যে শেরপুরের হাট মাতাচ্ছে ইউটিউবার, চিরকুমার, রাজা, বাদশা ও জমিদারসহ বাহারি নামের বেশ কিছু গরু। সুঠামেদেহী ও স্বাস্থ্যবান এবং আকর্ষণীয় নাম থাকায় গরুগুলো সবার দৃষ্টি কাড়ছে। অন্যদিকে এ বছর জেলায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পশু কেনা-বেচা হবে বলে আশা করছে জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ।
জানা যায়, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে জেলায় পশুর হাটে বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। ইতোমধ্যে গরুর হাট মাতাতে শুরু করেছে নানা বাহারি নামের বিশালদেহী সব ষাড় গরু। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার পশ্চিম কুমড়ি এলাকার যুবক সুমন মিয়ার গরু ইউটিউবার, কুমড়ি মুদিপাড়া এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার চিরকুমার, শহরের কান্দাপাড়া এলাকার যুবক মো. অলিদের রাজা, বাদশা ও জমিদারসহ বেশ কয়েকটি গরু।
রবিবার বিকেলে শহরের নওহাটা এলাকার প্রধান গরুর হাটে সরেজমিনে গেলে কথা হয় রাজা, বাদশা ও জমিদারের মালিক শেরপুর শহরের কান্দাপাড়া এলাকার শিক্ষিত যুবক মো. অলিদের সাথে। তিনি জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি বছরই তিনি কোরবানীর জন্য ষাড় গরু লালনপালন করেন। গতবছরও তিনি শেরপুরের বস নামের একটি ষাড় গরু পালন করে সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন।
সেবার ৭ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এবারও তিনি রাজা, বাদশা ও জমিদার নামের ৩টি ষাড় গরু পালন করে বিক্রির জন্য তৈরী করেছেন। এর মধ্যে জমিদারের দাম সাড়ে ৬ লাখ টাকা, বাদশার দাম সাড়ে ৫ লাখ টাকা ও রাজার দাম সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাকাচ্ছেন।
ইউটিউব থেকে আয় করা টাকা থেকে শখের বশে একটি গরু কিনে সেই গরু লালন-পালন করেছেন সুমন মিয়া। গরুটির নামও দিয়েছেন ইউটিউবার। ওজন প্রায় ৩০-৩১ মণ হবে বলে জানিয়েছে প্রাণীসম্পদ বিভাগ। তিনি গরুটির দাম হাঁকাচ্ছেন ৭ লাখ টাকা। বিশালদেহী ওই গরুটি দেখতে আশপাশের এলাকার মানুষজন ভিড় করছেন। আর ৩০ মণ ওজনের চিরকুমারের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১০ লাখ টাকা।
হাটে অলিদের গরু দেখতে আসা ক্রেতা হামিদুর রহমান জানান, গরু ৩টা দেখতে ভালোই। ৩টার মধ্যে ছোটটার দাম করেছিলাম। কিন্তু দামে মিলছে না। গরু ক্রেতা মিস্টার আলী জানান, এবার আগেভাগেই গরুর হাটে আসছিলাম গরু কেনার জন্য। বাজারে অনেক বড় বড় গরু ওঠেছে। গরুগুলোর নামও বেশ আকর্ষণীয়। এরশাদ আলী নামে আরেক ক্রেতা বলেন, শেষ দিকে কম দামে গরু পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছি। তাই আমরা গরু দেখে গেলাম। পরের হাটে কিনব।
গরু বিক্রেতা অলিদ জানান, এবার অনেক কষ্ট করে বেশী দামে গরুর খাদ্য ক্রয় করে গরু পালন করেছি। আমাদের খরচ হইছে বেশী। তাই সঠিক দাম না পাইলে আমাগো লোকসান হবে। সুমন মিয়া বলেন, ইউটিউব থেকে আয় করে শখের বশে গরুটি কিনে লালন-পালন করেছি। ইউটিউবারকে খৈল, ভূষি, কলাসহ প্রতিদিন প্রায় দেড়শ কেজি খাবার খাওয়াতে হয়। গোসল করাতে হয় দিনে ৩/৪ বার।
জেলা গরুর খামার মালিক সমিতির সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান পাপ্পু বলেন, জেলায় পর্যাপ্ত কোরবানীর গরু মজুদ রয়েছে। তবে গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারীদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এখন যদি ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকে তাহলে খামারীরা লোকসান গুণবেন। এতে খামারীরা তাদের আগ্রহ হারাবেন।
এদিকে শেরপুরের গরুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও রোগাক্রান্ত পশু যাতে ক্রয়-বিক্রয় না হতে পারে সেজন্য ৬টি টিম গঠন করা হয়েছে জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে। একইসাথে বাজারে বাজারে অবস্থান করছেন জেলা ও উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা-বেচা হয়। এজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আমাদের ৬টি টিম জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে কাজ করছে। শেষ মুহূর্তে প্রচুর সংখ্যক কোরবানীর গরু বাজারে ওঠবে এবং দামও সহনশীল পর্যায়ে আসবে বলে ধারণা করছি। তিনি আরও জানান, জেলায় কোরবানীর জন্য পশুর চাহিদা ৫৫ হাজারের কিছু বেশি। আর আমাদের প্রস্ততকৃত পশু রয়েছে প্রায় ৮৩ হ্জাার। আমরা হাটে সরাসরির পাশাপাশি অনলাইনেও কেনাবেচার ব্যবস্থা রেখেছি। সুতরাং ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যেই তাদের কোরবানীর পশু কিনতে পারবেন। এবার জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পশু বেচা-কেনা হবে বলে ধারণা করছি আমরা। এতে খামারীরা বেশ লাভবান হবেন।