অনলাইন রিপোর্টার ॥ আপাতত বন্ধ হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক ভিটায় বাইসাইকেল গ্যারেজের নির্মাণকাজ। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালেদ বাবু মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) এটি সংরক্ষণের জন্য রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরই উদ্যোগ নেয় রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সেখানে বাইসাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিকেলে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে এখন সেখানে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংস্কৃতিকর্মীরা স্থায়ীভাবে ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি তুলেছেন। এর আগে বাড়ির একটি অংশ পুরো ভেঙে তার ইট, সিমেন্ট ও সুরকি সরিয়ে ফেলে হোমিওপ্যাথি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজের শিক্ষকরা বলছেন, কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য সেখানে অস্থায়ী বাইসাইকেল গ্যারেজ তৈরি করা হচ্ছিলো। তবে, এর প্রতিবাদে সবাই সোচ্চার হয়ে ওঠায় ভাঙার হাত থেকে আপাতত রক্ষা পেয়েছে চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক এই ভিটা। এর আগে রাজশাহীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও চলচ্চিত্রপ্রেমীরা মিঞাপাড়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক ভিটা সংরক্ষণের দাবিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কাছে স্মারকলিপি দেন প্রগতিশীল ১৩টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরীফুল হক এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এ সময় রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবীর লিটন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল, ‘কবিকুঞ্জের’ সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ ইসলাম মাসুদ, নাট্যকার কামার উল্লাহ সরকার কামাল উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহী মহানগরীর মিঞাপাড়ার বাড়িতে শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি অংশ কেটেছে। এই বাড়িতে কিছু সময় বসবাস করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও।
এ বাড়িতে থাকার সময়ই ঋত্বিক ঘটক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। তিনি রাজশাহী কলেজ এবং মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ঋত্বিক ঘটক এই সময় রাজশাহীতে ‘অভিধারা’ পত্রিকা সম্পাদন করেছেন। বিলুপ্ত কল্পনা হলের ‘ভাবীকাল’ নামে একটি চলচ্চিত্রের ব্যানারও এঁকেছেন বলে জানা যায়। রাজশাহীর তৎকালীন সাংস্কৃতিক জগতে তিনি যৌবনকালে সবার মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন। ওই সময়ে নাট্যান্দোলন ও সাহিত্য সম্পাদনা করেছেন।
সেই বাড়িটিই এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৯ সালে নামমাত্র মূল্যে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজকে ইজারা দেওয়া হয়। তারাই এখন সম্পূর্ণ বাড়িটি ব্যবহার করছে। বাড়িটির এক অংশে ইতোমধ্যে বহুতল ভবন করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আরেক অংশে যেসব কক্ষে ঋত্বিকরা থাকতেন সেসব কক্ষও ব্যবহার করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারই এক অংশ ভেঙে অস্থায়ী বাইসাইকেল গ্যারেজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সবাই এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে অতি দ্রুত তা বন্ধ করে ঋত্বিকের পৈত্রিক ভিটা সংরক্ষণ করে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান। একইসঙ্গে এই ভিটায় ঋত্বিক ঘটক স্মৃতি জাদুঘরও গড়ে তোলার দাবি জানান তারা।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহম্মদ শরীফুল হক বলেন, আমরা হোমিওপ্যাথিক কলেজ কর্তৃপক্ষকে এরই মধ্যে বাইসাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলেছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।