ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে পানিতে ডুবে মারা যায় ১৮ হাজার শিশু

প্রকাশিত: ০০:১৩, ২৭ মার্চ ২০১৮

বছরে পানিতে ডুবে  মারা যায় ১৮ হাজার শিশু

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ “সাতার জানি নিরাপদ থাকি” শ্লোগানকে সামনে রেখে বরিশাল নগরীতে চার থেকে ১২ বছর বয়সের শিশুদের সাঁতার শেখা প্রশিক্ষনের উদ্বোধণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নগরীর ব্যাপ্টিষ্ট মিশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুকুরে মেয়েদের ও ডিসি লেকে ছেলেদের সাতার প্রশিক্ষনের উদ্বোধণ করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওয়াহেদুজ্জামান, ইউনিসেফ বরিশালের বিভাগীয় প্রধান এএইচ তৌফিক আহমেদ, ব্যাপ্টিষ্ট মিশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেরী সুর্য্যানী সমাদ্দার উপস্থিত ছিলেন। সেইভ দি কোষ্ট্যাল পিপল-স্কোপের সহযোগীতায় বিসিসি-ইউনিসেফ’র সহযোগীতায় প্রতি সপ্তাহে পাঁচদিন ব্যাপ্টিষ্ট মিশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুকুরে মেয়েদের দুইটি ও ডিসি লেকে ছেলেদের দুইটি ব্যাচে এ সাতার প্রশিক্ষন দেয়া হবে। আগামী ছয় মাসে প্রায় ১৮শ’ প্রশিক্ষনার্থী শিশুকে এ প্রশিক্ষনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তারা জানান, বরিশালে প্রতিদিন গড়ে নয়জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তবে দেশে বছরে ১৮ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে, যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশি। পানিতে ডুবে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে তিনগুণ শিশু মারা যায়। বরিশাল নগরী আট বছর আগে শিশুবান্ধব নগরী ঘোষণা করা হলেও শিশুমৃত্যুর ভয়াবহতারোধে আগে কখনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও বেসরকারী সংস্থার এক সার্ভেতে সুপারিশ করা হয়, চার বছর বয়স থেকে শিশুকে সাঁতার শেখানোর কোন বিকল্প নেই। তাই শিশুবান্ধব বরিশাল নগরীতে বিসিসি ও ইউনিসেফের সহায়তায় সেভ দি কোস্টাল পিপল-স্কোপ ‘শিশুদের সাঁতার শেখা’র এ প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। সূত্রমতে, সাঁতার শেখানোর জন্য শিশুদের নাম, ঠিকানা বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি ১৫ জন শিশুর একটি ব্যাচকে দক্ষ প্রশিক্ষক পুকুরে বিশেষ ব্যবস্থায় সাঁতার প্রশিক্ষণের অনুশীলন করাচ্ছেন। শিশুদের সাঁতার শেখা সম্পন্ন হলে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কার ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, নগরীর জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশের বেশি শিশু। এসব শিশুর উন্নয়ন, বিকাশ, সুরক্ষা, বিনোদন ও অধিকার নিশ্চিত করতে শিশুদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১০ সালে বরিশাল সিটিকে শিশুবান্ধব নগরী করার ঘোষণা করেন তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। তারই ধারাবাহিকতায় শিশুবান্ধব নগরী গড়ার জন্য প্রতি অর্থবছরই বরাদ্দ রাখা হয়। নগরীর চারটি বস্তি (বঙ্গবন্ধু কলোনি, শিশুপার্ক কলোনি, স্টেডিয়াম কলোনি ও পলাশপুর কলোনি) পরিদর্শনের মাধ্যমে শিশুদের প্রধান সমস্যাগুলো তুলে আনা হচ্ছে। এসব সমস্যা নিয়ে কাজ করা হলেও পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অবশেষে সাঁতার শেখানোর কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সেভ দি কোস্ট্যাল পিপলের নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, শিশু অবস্থায় সাঁতার শেখা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বরিশাল নগরী সাঁতার উপযোগী পর্যাপ্ত পুকুর ও সুইমিংপুল না থাকায় শিশুরা সাঁতার শিখতে পারছেনা। নগর জীবনে পরিবারের সদস্যদের নানা ব্যস্ততায় শিশুরা সাঁতার শিখতে পারছেনা। ফলে বড় হয়ে পানিতে ডুবে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলছে। তাই বিলম্বে হলেও শিশুদের জন্য সাঁতার শেখার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বরিশাল শিশুবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। মঙ্গলবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধণ করা হয়েছে। এতে করে ভবিষ্যতে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা কমে যাবে। বিসিসি’র মেয়র আহসান হাবিব কামাল শিশুদের অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি শিশু বয়সে তাদেরকে সাঁতার শেখার জন্য মনোযোগী হলে ভবিষ্যতে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির মুখামুখি দাঁড়াতে হবেনা।
×