ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ৮ এপ্রিল ২০২০

প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ

দেশে কোভিড-১৯ এর প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী বক্তব্য ও নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। এমনকি তাৎপর্যপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত পরামর্শও তিনি বারবার নিজের মুখেই উচ্চারণ করেছেন। জনতাকে সতর্ক ও সচেতন করেছেন। এসবের মধ্য দিয়ে দেশবাসী আশ্বস্ত হয়েছেন যে, জাতির এ দুঃসময়ে তাদের প্রধানমন্ত্রী সর্বক্ষণিকভাবে সব দিকে নজর রাখছেন এবং যখন মানুষের যে প্রত্যাশা তা পূরণ করছেন। এই ধারাবাহিক জনকল্যাণমুখী তৎপরতায় বর্তমান সরকারের অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ হলো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা। রবিবার গণভবন থেকে এই প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের দুর্নীতি বা অপব্যবহার সহ্য করা হবে না। স্মরণযোগ্য, এর আগে গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। আমরা গত মাসের মাঝামাঝি থেকেই বলে এসেছি যে, করোনাভাইরাস বিশ্বে শুধু এক মহামারী হিসেবেই দেখা দেয়নি, বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও তা এক অশনিসঙ্কেত হয়ে দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। এই অবস্থায় অর্থনীতির বড় ধরনের বিপর্যয় রোধে প্রায় প্রতিটি দেশ নিজের মতো করে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এই প্যাকেজের পরিমাণ ঘোষণা করা হয়েছে দুই লাখ কোটি ডলার। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশেও ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে চারটি খাতে প্রণোদনা ঘোষণা দেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। এসব খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ তহবিল গঠন করা হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে। এই ঋণে সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে চার শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহীতা শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি সাড়ে চার শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। দ্বিতীয় খাত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্পে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হবে। তৃতীয় খাত হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। চতুর্থ খাতটি হচ্ছে- প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফিন্যান্স স্কিম। এই নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন তহবিল চালু করবে, যেখান থেকে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানাগুলো প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল ভোগ করবে বলে আমরা আশা করতে পারি। দেশের অর্থনীতির বিপর্যয়রোধে বর্তমান সরকারের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের শতভাগ সুফল পেতে হলে যে সব পক্ষের সততা ও সক্রিয়তা জরুরী, সে কথা বলাই বাহুল্য। আমরা আবারও সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা সবার জন্য প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা শতভাগ মেনে চললে জাতি চলমান দুঃসময় পাড়ি দিয়ে নতুন আগামী রচনা করবে বলে আশা করা যায়।
×