ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের স্মার্টকার্ড!

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রোহিঙ্গাদের স্মার্টকার্ড!

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা তাদের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু তাতে যদি ব্যত্যয় ঘটে, তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। কেননা, দেশের প্রায় দশ কোটি ভোটারের সচিত্র ভোটার তালিকা যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্যসহ নির্বাচন কমিশনের হাতে, যা অতি গোপনীয় রাষ্ট্রীয় সম্পদ। সে অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের সর্বস্তরের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন এবং অক্ষুণœ রাখা জরুরী ও অপরিহার্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইসির ওপর আর পূর্ণরূপে আস্থা রাখা যাচ্ছে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অন্তত কয়েক শতের হাতে রয়েছে স্মার্টকার্ড, ভোটার এনআইডিসহ আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়ার। পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি অতি পুরনো। অভিযোগও আছে, রোহিঙ্গারা অনেক আগে থেকেই জাল বা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশী পাসপোর্ট বাগিয়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে এবং সেসব স্থানে নানা অপরাধ-অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। সৌদি আরব এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চাপও দিয়েছে বাংলাদেশকে। এর জন্য পাসপোর্ট অফিস অভিযুক্ত হয়ে আসছে আগে থেকেই। এবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। গত ১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রোহিঙ্গা ডাকাত নূর মোহাম্মদ। তার কাছে পাওয়া যায় বাংলাদেশী স্মার্টকার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র। উল্লেখ্য, মূল সার্ভারে পরিপূর্ণ তথ্য না থাকলে স্মার্টকার্ড প্রিন্ট হয় না, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তা আটকে যায়। তার মানে নূর মোহাম্মদের সম্পূর্ণ তথ্য ছিল ইসির কাছে। এরপর ২২ আগস্ট স্মার্টকার্ড তুলতে গিয়ে আটক হয় লাকী আক্তার নামের এক রোহিঙ্গা নারী। গোমর ফাঁস হয় এরপরই। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন কমিশনে গড়ে ওঠা একাধিক দুষ্টচক্রের মাধ্যমে কয়েক শত রোহিঙ্গা ইতোমধ্যেই বাগিয়ে নিয়েছে কয়েকশ’ স্মার্টকার্ড, যা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, বিপজ্জনকও বটে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্তে নেমে এই দুষ্টচক্রের বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করাসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে, যাদের মধ্যে আছে নারীও। চট্টগ্রামের ইসি অফিস থেকে অন্তত পাঁচটি ল্যাপটপ খোয়া যাওয়ার অভিযোগ আছে, যেগুলো হাতিয়ে নিয়েছে ইসিতে চাকরিরত ও চাকরিচ্যুত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও। এই চক্রটি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বাড়িতে বসেই স্মার্টকার্ড, ভোটার আইডি ও পাসপোর্ট করে দিত বলে প্রমাণ মিলেছে। বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণী ধরাও পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের দায়দায়িত্বসহ গোপনীয়তা সুরক্ষার বিষয়টি পড়েছে প্রশ্নের মুখে। মনে রাখতে হবে যে, এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। স্বদেশ থেকে বিতাড়িত ভাগ্যবিড়ম্বিত শরণার্থীরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এক প্রধান সমস্যা। টেকনাফ-কক্সবাজার উপকূলবর্তী বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলে প্রমাণ মিলেছে। প্রথমত, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো প্রাচীরবেষ্টিত ও সুরক্ষিত নয় বলে সীমিত পুলিশি নজরদারির সুবাদে তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। শিশুচুরি, ইয়াবা পাচারসহ জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অথবা জাল করে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। সেখানেও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রয়োজনে কাঁটাতারের বেড়া দেয়াসহ আইন শৃঙ্খলাাবাহিনীর নজরদারিও বাড়াতে হবে অবশ্যই।
×