
.
ব্যাটিংয়ের দারুণ প্রদর্শনীতে তিনদিন সমানতালে এগোনো গল টেস্টে বদলে গেছে দৃশ্যপট। প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রানের বড় স্কোর গড়া বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে থামিয়ে দিয়েছে ৪৮৫ রানে। স্বাগতিকদের সীমার মধ্যে আটকে রাখার কারিগর নাঈম হাসান। তিন বছর পর টেস্টে পাঁচ উইকেটের দেখা পেয়েছেন এ অফস্পিনার। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৪ রানে প্রথম ও ৬০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পরও ৩ উইকেটে ১৭৭ রান তুলে শুক্রবার চতুর্থ দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ১৮৭ রানের লিড। ৭৬ রান করে আউট হয়েছেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। ৫৬ রানে অপরাজিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ২২ রান নিয়ে তার সঙ্গে আছেন প্রথম ইনিংসের আরেক সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। আজ শেষদিনে খেলা হবে ৯৪ ওভার। লিডটা বড় করে প্রতিপক্ষকে বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে জয়ের সুযোগ টাইগারদের সামনে। বৃষ্টি বা ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে জমে উঠতে পারে ম্যাচ। দুই দলের সামনেই তৈরি হতে পারে জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনা! শেষদিনে তাই রোমাঞ্চের অপেক্ষায় গল টেস্ট।
তৃতীয় দিনও ব্যাটিংয়ের স্বর্গ, ম্যাচের ফল নিয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছিলেন না বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ শন টেইটও। শুক্রবার চতুর্থ দিন মধ্যাহ্ন বিরতির পর বদলে গেল দৃশ্যপট। গলের ফ্ল্যাট উইকেট হঠাৎ যেন ব্যাটারদের জম হয়ে উঠল। শেষ দুই সেশনে উইকেট পড়ল ৭টি। আবহাওয়া-উইকেট একই রকম থাকলে আজ রোমাঞ্চকর একটি দিনই হতে চলেছে গলে। তৃতীয় সেশনে উইকেট থেকে উড়ছে ধুলা। ব্যাটারদের দিতে হচ্ছে কঠিন পরীক্ষা। এর মাঝেও সাদমান ও শান্তর জোড়া ফিফটিতে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মতো চতুর্থ উইকেটে আবারও জুটি বড় করার চেষ্টা করছেন শান্ত ও মুশফিক। ৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন দুজনে। তার আগে ওপেনার এনামুল হক বিজয় দ্বিতীয় ইনিংসেও করেছেন হতাশ। প্রথম ইনিংসে ০, এবার ফিরলেন ১৪ বলে ৪ রান করে। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হককে নিয়ে ৩৬ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার সাদমান। অভিজ্ঞ মুমিনুল এবারও প্রথম ইনিংসের মতো থিতু হয়ে উইকেট দিয়েছেন সুইপ করতে গিয়ে। ৪০ বলে ১ ছক্কায় ১৪ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। তৃতীয় উইকেটে সাদমান-শান্তর ৬৮ রানের জুটিতে দলীয় ১০০ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা সাদমানের সুযোগ ছিল ইনিংস বড় করার। ছিল সেঞ্চুরির হাতছানি। কিন্তু ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট ফিফটি করে ফেরেন (১২৬ বলে ৭৬) তিনি। ইনিংসে ছিল ৭টি চার।
বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত এরই মধ্যে তুলে নিয়েছেন নিজের ষষ্ঠ টেস্ট ফিফটি। শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে প্রবাত জয়াসুরিয়া, তারিন্দু রতœায়েকে ও মিলান রতœায়েকে একটি উইকেট নিয়েছেন। এর আগে লিড নেওয়া শ্রীলঙ্কার জন্য মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু নাঈম হাসানের ঘূর্ণিতে শেষ মুহূর্তে ধসে পড়ে লঙ্কানরা। বাংলাদেশের থেকে প্রথম ইনিংসে ১০ রান কম করে স্বাগতিকরা। ৬ উইকেটে ৪৬৫ রান নিয়ে প্রথম সেশন বিরতিতে যায় শ্রীলঙ্কা। উইকেটে তখন ছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস ও মিলান রতœায়েকে। কিন্তু বিরতি থেকে ফিরে ২০ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৮৫ রানে অলআউট হয়ে যায়। নাঈম হাসান একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট। ২৫ বছর বয়সী অফস্পিনারের ১৩তম টেস্টে শিকার ৪৪, চতুর্থ ৫ উইকেট এটি। যার দুটিই লঙ্কানদের বিপক্ষে। ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংও এই লঙ্কানদের বিপক্ষেই, ২০২২ সালে চট্টগ্রামে ১০৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এই স্পিনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ৪৯৫/১০ (শান্ত ১৪৮, মুশফিক ১৬৩, লিটন ৯০; আসিথা ৪/৮৬, মিলান ৩/৩৯) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৭৭/৩ (৫৭ ওভার; সাদমান ৭৬, বিজয় ৪, মুমিনুল ১৪, শান্ত ৫৬*, মুশফিক ২২*; জয়াসুরিয়া ১/৪৮, মিলান ১/১৩)
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৩৬৮/৪) ৪৮৫/১০ (১৩১.২ ওভার; কামিন্দু ৮৭, ধনঞ্জয়া ১৯, কুসল ৫, মিলান ৩৯, থারিন্দু ০, জয়াসুরিয়া ১১*, আসিথা ৪; হাসান ৩/৭৪, তাইজুল ১/১৫৬, নাঈম ৫/১২১, মুমিনুল ১/২৮)।
** চতুর্থ দিন শেষে
প্যানেল