
নাঈম হাসান পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর বল উচিয়ে ধরলেন: ছবি সংগৃহীত
চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল নাঈম হাসানের। ইতোমধ্যে সাদা পোশাকে ৬ বছর পার করে দিয়েছেন এই অফ স্পিনার। অবশেষে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বোলিং করার সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করলেন তিনি। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। এটি তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফাইফার। সবশেষ ২০২২ সালে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন এই বোলার।
শুক্রবার টেস্টের চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৪৮৫ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রান সংগ্রহ করতে পারে। আর তাতেই ১০ রানের ছোট একটি লিড মিলেছে তাদের। অথচ সাবলীল ব্যাটিংয়ে এক পর্যায়ে লঙ্কানরাই লিড নেওয়ার জন্য শক্ত অবস্থানে ছিল। তবে লাঞ্চ বিরতির পর খেলা শুরু হলে মাত্র ২০ রানে তাদের শেষ ৪ উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। আর প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ঘায়েল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ২৫ বছর বয়সী নাঈম। ১২১ রান খরচায় ৪৩.২ ওভার বল করে ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। ১৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে নাঈমের এটি চতুর্থ ৫ উইকেট। আর লঙ্কানদের বিপক্ষে পেলেন দ্বিতীয়বার ফাইফার। এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে দলটির বিপরীতে ১০৫ রান খরচায় ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি, যা তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং।
এর আগে দেশের বাইরে কেবল একটি টেস্টই খেলেছিলেন নাঈম। সেই ম্যাচটি ছিল ভারতের বিপক্ষে ইডেন গার্ডেন্সে ২০১৯ সালের নভেম্বরে। সেই ম্যাচে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছিল নাঈমের সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামির বল আঘাত করে তার হেলমেটে। পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। শেষমেশ ওই ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ায় আর বল করতে পারেননি নাঈম। পরে তার কনকাশন বদলি হিসেবে নামেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ওই ঘটনার সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় পর ফের বিদেশের মাটিতে খেলার সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করলেন তিনি।
এদিন ৬ উইকেটে ৪৬৫ রান নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল স্বাগতিরা। লক্ষ্য থেকে ৩০ রান দূরে হাতে ছিল ৪ উইকেট। ক্রিজে থিতু হয়ে কামিন্দু মেন্ডিস পাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির সুবাস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন মিলন রত্নয়েকে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেট জুটির রান তখন ছিল ৭৯।
বিরতির পর নাঈমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল হাজির হয় অন্যরূপে। অভাবনীয় কায়দায় তারা আদায় করে নেয় লিড। দ্বিতীয় সেশনের তৃতীয় ওভারে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে আঘাত করেন পেসার হাসান মাহমুদ। পুল করতে গিয়ে তার বল স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন মিলন (৮৩ বলে ৩৯ রান)।
৮৪ রানের জুটি ভাঙার পর নাঈম মেলে ধরেন নিজেকে। পরের ওভারেই জোড়া শিকার ধরেন তিনি। প্রথম বলে বিপজ্জনক কামিন্দুকে (১৪৮ বলে ৮৭ রান) বিদায় করেন। টার্ন ও বাউন্সে পরাস্ত হন এই সংস্করণে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ ইনিংসের মধ্যে তৃতীয় সেঞ্চুরির পথে থাকা লঙ্কান ব্যাটার। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন কুমার দাস। শেষ বলে লাইন মিস করে স্টাম্প হারান অভিষিক্ত থারিন্দু রত্নয়েকে। ৭ বলে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এরপর ৮ বলে ৪ রান করা আসিতা ফার্নান্দোকে বোল্ড করে লঙ্কানদেরকে অলআউট করে দেন নাঈম। আগের দিন শুধু দিনেশ চান্দিমালের উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এদিন কামিন্দু, থারিন্দু ও আসিতাকে সাজঘরে পাঠানোর আগে সকালে তিনি বিদায় করেন স্বাগতিক অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে।
নাঈম ছাড়াও বাংলাদেশের হয়ে তিন উইকেট শিকার করেছেন পেসার হাসান মাহমুদ। তাইজুল ইসলাম ও পার্টটাইম বোলার মুমিনুল হক তুলে নেন একটি করে উইকেট। এর আগে অভিজ্ঞ ব্যটসম্যান মুশফিকুর রহিমের ১৬৩, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ১৪৮ ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটন কুমার দাসের ৯০ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রান সংগ্রহ করেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
ফয়সাল/ রাজু