মেয়েদের ৪ গুণিতক ১০০ মিটার মিডলে রিলেতে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন যুক্তরাষ্টের সাঁতারুরা
অলিম্পিকে সাঁতার মানেই যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈরথ; যে লড়াই শত বছরের। তবে ১৯৫৬ সালের পর আর কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যেতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। প্যারিস অলিম্পিকে অসিদের সেই সুযোগ তৈরি হয়েছিল। শেষদিন পর্যন্ত এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া, এমনকি শেষ ইভেন্ট পর্যন্তও ছিল সমতা। আর সেখানেই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখল মার্কিনিরা।
পুরুষদের ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে স্বর্ণ জিতলেন ববি ফিন। মেয়েদের ৪ গুণিতক ১০০ মিটার মিডেল রিলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারুরা বাজিমাত করেছেন। শেষদিনে অবশ্য মন ভেঙেছে এবারের অলিম্পিকের সেনসেশন লিওঁ মারশাঁর। পাঁচটি স্বর্ণ জিতে প্যারিস অলিম্পিক শেষ করার সুযোগ ছিল ‘ফরাসির ফেলপেসর’। কিন্তু ফ্রান্সের ঘরের ছেলের পক্ষে তা আর হয়ে ওঠেনি। ছেলেদের ৪ গুণিতক ১০০ মিটার মিডেল রিলেতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে থেকে ব্রোঞ্জ জিতেছে মারশাঁর ফ্রান্স। ৮ স্বর্ণ, ১৩ রৌপ্য ও ৭ ব্রোঞ্জে সাঁতারে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পদক ২৮। ৭ স্বর্ণ, ৮ রৌপ্য ও ৩ ব্রোঞ্জে অস্ট্রেলিয়ার পদক ১৮টি।
৪ স্বর্ণ, ১ রৌপ্য ও ২ ব্রোঞ্জে সাঁতারে আয়োজক ফ্রান্সের পদক ৭টি। ৩ স্বর্ণ, ২ রৌপ্য ও ৩ ব্রোঞ্জসহ কানাডার পদক ৮টি। আর ২ স্বর্ণ, ৩ রৌপ্য ও ৭ ব্রোঞ্জে চীনের পদক ১২টি। লা ডিফেন্সে অ্যারেনায় শেষ দিনের প্রথম পদকে লড়াইয়ে ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে স্বর্ণ জিতে ৫০-১০০ মিটারের ‘ডাবল’ পেয়েছেন সুইডেনের সারা শ্রোস্ট্রম। দ্বিতীয় ইভেন্টে ছেলেদের ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ১৪ মিনিট ৩০.৬৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন ফিনকে।
মার্কিন সাঁতারু ভেঙেছেন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে গড়া চীনের সুন ইয়াংয়ের রেকর্ড। ৩.৮৮ সেকেন্ড পেছনে থেকে রৌপ্য জিতেছেন ইতালির গ্রেগরিও পালত্রিনিয়েরি। ব্রোঞ্জ আয়ারল্যান্ডের ড্যানিয়েল উইফেনের। ছেলেদের ৪ গুণিতক ১০০ মিটার মেডলে রিলেতে ৩ মিনিট ২৭.৪৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণ গেছে চীনের দখলে। ০.৫৫ সেকেন্ড পেছনে থেকে রৌপ্য যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের চেয়ে ০.৯২ সেকেন্ড পেছনে থেকে ব্রোঞ্চ মারশাঁর ফ্রান্সের। ৪টি সোনা ও ১টি ব্রোঞ্জ জিতে অলিম্পিক শেষ করলেন মারশাঁ।
সাঁতারের শেষ দিনের শেষ ইভেন্ট মেয়েদের ৪ গুণিতক ১০০ মিটার মেডলে রিলেতে নিজেদের রেকর্ড ভেঙেছে মার্কিনিরা। ৩ মিনিট ৪৯.৬৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ২০১৯ সালে গড়া ৩ মিনিট ৫০.৪০ সেকেন্ডের রেকর্ড ভাঙে যুক্তরাষ্ট্র। এই ইভেন্টে রুপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রোঞ্জ চীনের।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সাফল্যে কেটি লিডেকির কথাও আলাদা করে বলতে হবে।
অলিম্পিকের ইতিহাসে নারী সাঁতারু হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১৩টি পদক (স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ মিলিয়ে) জয়ের রেকর্ড আগেই গড়েছিলেন কেটি লিডেকি। ২৭ বছর বয়সি মার্কিন কিংবদন্তি এবার ক্যারিয়ারে ৯ম স্বর্ণ জিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের (রাশিয়া) লারিসা লাতিনিনির পাশে নিজের নামটি খোদাই করে নিলেন। মেয়েদের ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে অবিসংবাদিত সেরা লিডেকি। সেটিই দেখেছে প্যারিস অলিম্পিক। আলাদা করে বলতে হবে মারশাঁর কথাও।
মাইকেল ফেলপস ও আরেক মার্কিন গ্রেট মার্ক স্পিটজের (১৯৭২ অলিম্পিকে) পর তৃতীয় সাঁতারু হিসেবে অলিম্পিকের এক আসরে চারটি ব্যক্তিগত স্বর্ণ জয়ের কীর্তি ছুঁয়েছেন ফ্রান্সের মার্শা। ইতিহাসের পাতায় তাদের সঙ্গী হয়েছেন মারশাঁ। দুই কিংবদন্তির সঙ্গে এই তরুণের তুলনাও তাই শুরু হয়ে গেছে।
এবারের আসরে ২০০ মিটার মিডলের আগে ২০০ মিটার বাটারফ্লাই, ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক ও ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে স্বর্ণপদক গলায় ঝুলিয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনটি স্বর্ণ জিতেছেন কানাডার ১৭ বছর বয়সী সামার ম্যাকিনটোশ। ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলে শুরু হয়েছিল তার স্বর্ণের হাসি। এরপর ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ও ২০০ মিটারে মিডলে জিতে ‘ডাবল’ পূর্ণ করেছেন।