
উম্মাদনার সিঙ্গাপুর ম্যাচ সামনে রেখে শনিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল
হামজা দেওয়ান চৌধুরী, সামিত সোম ও ফাহমিদুল ইসলামের মতো প্রবাসী তারকাদের আগমনে ১০ জুন ঢাকা স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ ঘিরে বাংলাদেশের ফুটবলে তৈরি হয়েছে অন্যরকম এক উন্মাদনা। এমনিতে বৃষ্টিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি না করলে ফুটবল ম্যাচ কিংবা অনুশীলনের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়ে না। এর পরও বৈরী আবহাওয়া অনুশীলন ক্যাম্পের শুরুর দিনের রুটিনে কিছুটা ঝামেলা তৈরি করল। শুক্রবার রাতে প্রধান কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরার কাছে রিপোর্ট করেছেন ২৪ ফুটবলার।
তাদের নিয়ে শনিবার থেকে নতুন সাজে সজ্জিত মতিঝিলের জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়ার কথা ছিল আনুষ্ঠানিক ক্যাম্প। তবে এদিন সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে বিকেলে সেটি বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় সরিয়ে নেওয়া হয়। কারণ সিঙ্গাপুরের সঙ্গে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের আগে বুধবার ঢাকা স্টেডিয়ামেই ভুটানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ। সব মিলিয়ে প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন ক্যাবরেরা।
ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ১০ জুনের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচ সামনে রেখে আগেই ২৬ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড বাছাই করেছেন জাতীয় দলের কোচ ক্যাবরেরা। তবে তিনদিনের অনুশীলন ক্যাম্প শেষে ভুটান ম্যাচে সবাইকে পরখ করে তিনি চূড়ান্ত করতে চান সিঙ্গাপুর ম্যাচের দল। হামজা চৌধুরী ও সামিত সোম ছাড়া বাকিরা শুক্রবার যোগ দিয়েছেন ক্যাম্পে। আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে অনুশীলনের জন্য আগেই বসুন্ধরা কিংসের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সিঙ্গাপুর তাদের অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার সং ইউ ইয়োংকে, ৩৮ ম্যাচে ১৮ গোল করা ইখসান ফান্দিকে এবং ফরোয়ার্ড তৌফিক সুপার্নোকে দলে ফিরিয়েছে। এগুলো মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন তিনি।
‘হ্যাঁ, ওদের স্কোয়াড দেখেছি। আগের উইন্ডোতে না থাকা সং ইউ ইয়োং, ইখসান ফান্দিকে ফিরিয়েছে। স্ট্রাইকার আনোয়ার আলি নেই। তবে আমি মনে করি, তাদের ৯৮ শতাংশ মূল স্কোয়াড প্রস্তুত এবং তারাই আসছে।’ বলছিলেন ক্যাবরেরা। ভাবনায় সিঙ্গাপুর ম্যাচ প্রাধান্য পেলেও ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটিও গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবরেরার কাছে। স্কোরিংয়ে পুরোনো দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা, সিঙ্গাপুর ম্যাচের কৌশল ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য এই ম্যাচকে বেছে নিচ্ছেন তিনি,‘এই জায়গায় (গোল) আমাদের সমাধান খুঁজতে হবে। অবশ্যই এটা নিয়ে আমরা কাজ করব, যেহেতু আমরা ম্যাচ জিততে চাই। আমরা আসলেই আশা করি যে, এবার আমরা জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় গোল পাব।’
বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ (ভুটান ম্যাচ) আমাদের জন্য। দীর্ঘদিন পর এই ম্যাচ দিয়ে আমরা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলব। নতুন মাঠ, সেখানে মানিয়ে নেওয়ার বিষয় আছে। এই ম্যাচে আমরা যত বেশি সম্ভব খেলোয়াড়দের খেলানোর চেষ্টা করব।’ ক্যাম্পে হামজা যোগ দেবেন সোমবার, কানাডা থেকে সামিত আসবেন বুধবার। তবে এ মুহূর্তে ক্যাম্পে যাদের পেয়েছেন, তাদের ফিটনেস নিয়ে দুর্ভাবনা না থাকায় প্রস্তুতির ছক তিনি কষতে পারছেন চিন্তামুক্ত হয়ে,‘সবাই ফিট আছে।
ক্যাম্পের আবহ ভালো। সবাই রোমাঞ্চিত, অনুপ্রাণিত সামনের বড় ম্যাচ নিয়ে।’ গত ২৫ মার্চ শিলংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে হামজা চৌধুরীর। সেই ম্যাচে ভারতকে তাদেরই মাটিতে গোলশূন্য ড্র করে রুখে দিয়েছে টাইগাররা। এতে এশিয়া কাপে খেলার সম্ভাবনা বেড়েছে লাল-সবুজের। এই সাফল্যের নেপথ্যের বড় নায়ক হামজা। প্রথমবার বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নেমেই দেশের ফুটবল ভক্তদের মন কেড়েছেন। বাংলাদেশ কেন হামজাকে এমন করে চেয়েছে, তার ছাপটা স্পষ্ট ছিল খেলায়। শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার অভিষেকেই আলো কেড়ে নিয়েছেন। তাতেই ভারত কেঁপে কেঁপে উঠেছে রীতিমতো। তিনি যেমন পারফর্ম করেছেন, তাতে বাংলাদেশ দল তার অভিষেকে সেরা উপহারটা দিতে পারত একটা জয় দিয়ে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় সেটি হয়নি।
ভারত ম্যাচের আগে হামজা চৌধুরীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় খুব একটা পাননি ফরোয়ার্ড লাইনে থাকা স্থানীয় তপু-সোহেলরা। এই মিডফিল্ডারের ক্ষিপ্রতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনা হয়েছিল স্থানীয় ফুটবলারদের। তবে কোচের বিশ্বাস, সামনের ম্যাচগুলোয় দলের প্রবাসীদের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া তৈরি হবে। ভুটান ও সিঙ্গাপুর ম্যাচ সামনে রেখে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা যে প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছেন, সেখানে হামজার সঙ্গে আছেন সিরি ডি’তে খেলা ফরোয়ার্ড ফাহমিদুল ইসলাম ও কানাডার লিগে খেলা সামিত সোম। এই প্রবাসীদের উপস্থিতিতে কোচের মনে হচ্ছে, তার দল আগের চেয়ে শক্তিশালী। দলের গভীরতা ও সামর্থ্য বাড়ায় বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বাড়তি উন্মাদনা।