ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ খন্দকার ওয়াসিম ইকবালের

‘বাফুফের উচিত ছিল মেয়েদের মূল্যায়ন করা’

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:২৫, ৯ জুন ২০২৩

‘বাফুফের উচিত ছিল মেয়েদের মূল্যায়ন করা’

পুরুষ ফুটবলে না থাকলেও নারী ফুটবলে গর্ব করার মতো অনেক কিছুই ছিল

পুরুষ ফুটবলে না থাকলেও নারী ফুটবলে গর্ব করার মতো অনেক কিছুই ছিল বিগত কয়েক বছরে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলে ভালো কোনো খবর নেই। একটার পর একটা নেতিবাচক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। অর্থ নেইÑ এই কারণ দেখিয়ে অলিম্পিকের বাছাইপর্ব খেলতে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমারে খেলতে না পাঠানো, বকেয়া বেতন থাকায় নারী ফুটবল দলের অনুশীলন বর্জন, দুর্নীতির দায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে ফিফার নিষিদ্ধ করা, সাংবাদিকদের নিয়ে বাফুফে সভাপতি ও সহসভাপতির কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা, একাধিক নারী ফুটবলারের ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানো, নারী ফুটবল দলের সফল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের আকস্মিক পদত্যাগ করা... এসব ঘটনা খন্দকার ওয়াসিম ইকবালকে কতটা আলোড়িত করেছে একজন সাবেক তারকা জাতীয় ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে? ওয়াসিম বলেন, ‘দেখুন, আমি তো বাফুফের সঙ্গে জড়িত নই।

তারপরও বাইরে থেকে যতটা দেখেছি বা জেনেছি, সেই প্রেক্ষাপটে একজন খেলোয়াড় বা কোচ হিসেবে বলবো, চেষ্টা করলে ভালো কিছু করা যায়। মানে ইচ্ছে করলে উপায় হয়। আর যদি নাও হয়, তাহলে অন্তত ভালোর কাছাকাছি যাওয়া যায়। উদাহরণ দিয়ে বলি- জনকণ্ঠের প্রয়াত সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ পত্রিকা বের করার আগে অন্যান্য কিছু ব্যবসা করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলেন, তারপর জনকণ্ঠ বের করলেন। তিনি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে সফল হয়েছিলেন। তার পত্রিকা তখন দেশের এক নম্বর পত্রিকা ছিল। তার সফলতার মূল কারণ-তিনি চেষ্টা করেছিলেন। আপনি যখন একটি পরিবার চালাবেন, তখন নিশ্চয়ই আপনি সবার দেখভালের ব্যাপারে খুব সজাগ থাকবেন, কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান করবেন, তাই না? আমি সালাউদ্দিন ভাইকে কোন দোষ দিচ্ছি না। তিনি কতটা চেষ্টা করেছেন বা আন্তরিক ছিলেন, সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন।’

ওয়াসিম আরও যোগ করেন, ‘নারী ফুটবলে আমরা যখন সাড়া জাগানিয়া এবং সেরা অবস্থানে চলে গিয়েছি আল্লাহর রহমতে, তখন তো বাফুফের উচিত ছিল মেয়েদের আরেকটু মূল্যায়ন করা। যতদূর শুনেছি, মেয়েগুলো টাকা-পয়সা অনেক কম পেত (মাসিক বেতন)। সবচেয়ে বড় কথা, তারা অনেক দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। আমি হলে তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করতাম। কারণ তাদের কারণেই তো আমরা খ্যাতি-সাফল্য সবই পেয়েছি। মেয়েরা ঠিকমতো মূল্যায়িত হলে নিশ্চয়ই তারা ক্যাম্প ছাড়তো না ও অবসর নিত না। এই ঘটনা এখন নারী ফুটবলের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাই হচ্ছে দেখার।’ নারী ফুটবল নিয়ে ওয়াসিম আরও বলেন, ‘কোন দেশের ফেডারেশনই কিন্তু ফুটবলার তৈরি করে না। তৈরি করে ক্লাব। তবে এই মেয়েরা ব্যতিক্রম।

তারা এসেছে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল খেলে। তাদের সেখান থেকে বাছাই করে বাফুফে নিজেদের ক্যাম্পে নিয়েছে। সেই মেয়েদের ধরে রাখতে না পারাটা হবে দুঃখজনক।’ একরাশ আক্ষেপ নিয়ে ওয়াসিম বলেন, ‘এখন দেশের সব সেক্টরেই জ্ঞানী, যোগ্য, দক্ষ লোক কমে যাচ্ছে। সেটা ফুটবলেও দেখা যাচ্ছে। এখন সিনিয়ররা জুনিয়দের সেভাবে অনুপ্রাণিত করে না, কিছু শেখাতে চায় না।’ কোচ ছোটনের বিদায়কে বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন দেখছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে, ‘ম্যারাডোনার পর মেসি এসেছে। মেসির পর অন্য কেউ আসবে। ছোটন চলে গেলে তার রিপ্লেসমেন্ট আছে। কিন্তু টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির রিপ্লেসমেন্ট নেই। মেয়েদের সাফল্যের কারণ ছোটন নয়, পল। পল চলে গেলে বাংলাদেশের নারী ফুটবল ধ্বসং হয়ে যাবে।’

সালাউদ্দিনের এমন ভাবনার সঙ্গে কতটা একমত আপনি? ওয়াসিম বলেন, ‘নারী ফুটবলের সাফল্যের পেছনে কোচ তো বটেই, সবারই ভূমিকা-অবদান আছে কম-বেশি। কিন্তু তাই বলে কারোর সঙ্গে কারোর তুলনা করাটা সমীচীন নয়। রেজাল্ট পেলে সেটার জন্য সবাই দায়ী, তেমনি রেজাল্ট না পেলেও সেজন্য সবাই দায়ী। এখানে এককভাবে কাউকে হাইলাইট করার কিছু নেই। 
এটাই হওয়া উচিত।’ বাংলাদেশের কোন জেলায় নারী ফুটবল লিগ হয় না। সেই অর্থে দেশে নারী ফুটবলের অবকাঠামো সেভাবে নেই। তাহলে পল স্মলি চলে গেলে দেশের নারী ফুটবল কীভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে, এই প্রশ্নের উত্তরে ওয়াসিমের ভাষ্য, ‘বাফুফের উচিত ছিল মেয়েরা কেন চলে যাচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করা যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। তারা যেহেতু বেতন কম ও অনিয়মিতভাবে পাচ্ছে, সেহেতু জেলায় জেলায় নারী ফুটবল লিগ আয়োজন করতে পারত সীমিতভাবে বা অল্প কিছু ক্লাব নিয়ে। তাহলে এই মেয়েরাসহ ক্যাম্পের বাইরে থাকা প্রচুর মেয়েরাও তো অল্প করে হলেও কিছু টাকা আয় করতে পারত। নাই মামার চেয়ে তো কানা মামাই ভালো। খেলার তো বাদ দেয়া যাক, মানবিক দিক বিবেচনা করেও বাফুফে তো কাজটা করতে পারত। কেননা বাফুফেতে কিন্তু পয়সাওয়ালা লোকের কোনো অভাব নাই।’

×