ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেসি-রোনাল্ডোকে মনে করাচ্ছেন হালান্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:০৭, ৪ অক্টোবর ২০২২

মেসি-রোনাল্ডোকে মনে করাচ্ছেন হালান্ড

ম্যানসিটির কৃতী ফরোয়ার্ড আর্লিং হালান্ড

দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক ফুটবল মাতিয়ে চলেছেন দুই সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসি। গত বছর পিএসজির আর্জেন্টাইন তারকা মেসি নিজের ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে আবারও স্বরূপে ফিরেছেন এলএমটেন। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর্তুগীজ তারকা রোনাল্ডো যেন হারিয়েই গেছেন! কাতার বিশ্বকাপের আগে তাকে চিনতে হচ্ছে রীতিমতো জার্সি দেখে!
এই সময়ে মেসি-রোনাল্ডোর স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়ের উঠতি স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের মতো কঠিন আসরে রীতিমতো গোলের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন ২২ বছর বয়সী এই যুবক। অনেকের মতে, মেসি-রোনাল্ডোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতোই শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে গোলমেশিন হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে ফেলেছেন হালান্ড। টগবগে এই তরুণ জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ইংলিশ লীগে পাড়ি জমানোর সাথে সাথে নিজেকে অন্যভাবে পরিচিত করে তুলেছেন। সিটির ঘরের মাঠ ইতিহাদ  স্টেডিয়ামে টানা তিন লীগ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। প্রিমিয়ার লীগে তার গোলের রেকর্ড রোনাল্ডোর কীর্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর তাই রোনাল্ডো-মেসি যুগ ছাপিয়ে এখন হালান্ড যুগ নিয়ে আলোচনায় সরব হয়ে উঠেছে পুরো ফুটবল বিশ্ব।
গত রবিবার রাতে রোনাল্ডোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ৬-৩  গোলের দুর্দান্ত জয়ে সিটির হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন হালান্ড। এর মধ্য দিয়ে সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে হালান্ডের গোলসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ ম্যাচে ১৭টি। ইপিএলে তার গোলসংখ্যা ৮ ম্যাচে ১৪। গত  মৌসুমে যৌথভাবে গোল্ডেন বুট বিজয়ী মোহাম্মদ সালাহ ও সন হেয়াং মিন করেছিলেন ২৩ গোল। এবার লীগের মাত্র শুরুতেই এ দু’জনকে টপকে যাওয়ার পথে হালান্ড।

৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৮৬ কেজি ওজনের দীর্ঘকায় হালান্ডকে সামলাতে যেকোন সেন্টার ব্যাককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিরুদ্ধে গত মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তার ‘কুংফু’ স্টাইলের গোলটি ফিরিয়ে দেয়ার সাধ্য ছিল না কারোর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে আট ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেছেন তিনটি। ইংলিশ লীগে এর আগে সবচেয়ে কম ম্যাচে তিন হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ছিল লিভারপুলের সাবেক স্ট্রাইকার মাইকেল ওয়েনের। ৪৮ ম্যাচে ওয়েন এ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। কেউ কেউ তো রসিকতা করে বলছেন, হালান্ড যে গতিতে এগোচ্ছেন তাতে প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটা ভাঙতে পারেন চলতি মৌসুমেই।
হালান্ডকে মাঠে দেখলে মনে হয় যেন ভিডিও গেমসের কাল্পনিক কোন চরিত্র! ১৯৯৪ সালে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের হয়ে এন্ডি কোল ইপিএলে ৩৪ গোল করেছিলেন। পরের বছর সমসংখ্যক গোল করেন ব্লাকবার্ন রোভার্সের এ্যালান শিয়েরার। যা এখন পর্যন্ত এক মৌসুমে সর্বোচ্চ। রোনাল্ডো ইপিএলে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩১ গোল করেছেন। অন্যদিকে সিটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা সার্জিও এ্যাগুয়েরো কখনই এক মৌসুমে ২৬ গোলের বেশি করতে পারেননি।

এ সবই হালান্ডের হাত ধরে অতীত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছে। এরপরও মেসি-রোনাল্ডো নিজেদের সময়ে যা করেছেন তা অনেকের কাছেই অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। ২০১১-১২ সালে স্প্যানিশ লা লিগায় ৫০ গোলসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতায় বার্সিলোনার হয়ে মেসি করেন ৭৩ গোল। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রোনাল্ডো করেছিলেন ৬১ গোল। ১৯২৮ সালে এভারটনের ডিস্কি ডিন সবমিলিয়ে এক মৌসুমে করেছিলেন ৬০ গোল। হালান্ডের সামনে এবার এসব রেকর্ড ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ। ৩৮ ম্যাচের ইংলিশ লীগ চলতি মৌসুমেই হালান্ডের হাত ধরে পেতে পারে নতুন নতুন গৌরবময় রেকর্ড।
অবশ্য হালান্ডকে নিয়ে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় ফিটনেস। বিভিন্ন ধরনের পেশীর ইনজুরিতে ডর্টমুন্ডে প্রায়ই তাকে মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে। যদিও সিটি ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত তেমন শঙ্কা চোখে পড়েনি। সিটির মেডিকেল দল তাকে সেভাবেই পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এ বিষয়ে ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্ডিওলা বলেন, গত মৌসুমে হালান্ড খুব একটা ম্যাচ খেলতে পারেনি। প্রায় সময়ই তাকে ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। এখানে আমাদের বেশ কিছু অসাধারণ ফিজিও আছেন।

এখন পর্যন্ত পুরো ৯০ মিনিট হালান্ড খেলতে পারার পেছনে ফিজিওদের অবদান আছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ। যেকোন ক্লাবের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হচ্ছে চিকিৎসক ও ফিজিও। গতবার ডর্টমুন্ডে হালান্ডের সেভাবে পরিচর্যা করা হয়নি। অনেকে এখনই মেসির সাথে হালান্ডকে তুলনা করছেন। কিন্তু গার্ডিওলা জানিয়েছেন, মেসি ওয়ান ম্যান আর্মি। তার গোল করতে কারও সহায়তার প্রয়োজন নেই। এ নিয়ে গার্ডিওলা বলেন, হালান্ডের সঙ্গে মেসির একটা বড় পার্থক্য আছে। গোল করতে সতীর্থদের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে হালান্ডের। তবে মেসি একাই সে কাজটা করতে পারে।

×