ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

টগবগে স্পেনের সামনে নড়বড়ে জার্মানি

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:১১, ২৬ নভেম্বর ২০২২

টগবগে স্পেনের সামনে নড়বড়ে জার্মানি

জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে অনুশীলনে জার্মানি ও স্পেনের খেলোয়াড়রা

অনিন্দ্য সুন্দর তিকিতাকা ফুটবল খেলে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই গোটা দুনিয়ার হৃদয় কেড়েছে স্পেন। কোস্টারিকাকে ৭-০ গোলে ভাসিয়ে দিয়েছে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির অভিজ্ঞতা হয়েছে ঠিক এর উল্টো। এশিয়ার সুপার পাওয়ার জাপানের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ২-১ গোলে হেরে মিশন শুরু করেছে ইউরোপের পাওয়ার হাউসরা।

যে কারণে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের মতো কাতারেও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কা জেগেছে ম্যানুয়েল নিউয়েরের দলের। এমন অবস্থায় ‘ই’ গ্রুপে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামছে জার্মানি। তাদের সামনে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা টগবগে স্পেন। দোহার আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে স্পেন ও জার্মানির হাইভোল্টেজ ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায়। টিকে থাকলে হলে এই ম্যাচে জার্মানির জয়ের বিকল্প নেই। হেরে গেলে টানা দ্বিতীয়বার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।

অন্যদিকে একঝাঁক তরুণ ফুটবলার নিয়ে অসাধারণ ফর্মে থাকা স্পেন হুমকি দিয়ে রেখেছে জার্মানদের। দলটির কোচ লুইস এনরিকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, জার্মানিকে হারিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করতে চায় স্পেন। ফেরান টোরেস, ডানি ওলমো, গাভি, মোরাতাদের হারাতে হলে জার্মানিকে তাদের সেরাটাই খেলতে হবে। কিন্তু পারফরমেন্স ও পরিসংখ্যান সবই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। সেই ১৯৮৮ সালের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে এখন পর্যন্ত স্পেনকে হারাতে পারেনি জার্মানি।

জার্মানদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই লা রোজাদের মূল লক্ষ্য। সবশেষ ২০২০ সালের নভেম্বরে উয়েফা নেশন্স কাপে জার্মানিকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল স্পেন। ১৯ বছরের মধ্যে শেষ সাতবারের মোকাবেলায় জার্মানি মাত্র একবার স্পেনকে হারিয়েছে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে ওই প্রীতি ম্যাচে মাত্র ১-০ গোলে জিতেছিল চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত দুদল মুখোমুখি হয়েছে ২৫ বার। এর মধ্যে জার্মানির জয় ৯টি, স্পেনের ৮টি। ড্র হয়েছে বাকি ৮টি ম্যাচ।

আজ রাতে জয় পেলে শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাবে স্পেনের। সেক্ষেত্রে জাপান যদি কোস্টারিকার সঙ্গে ড্রও করতে পারে, তাহলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেবে হ্যান্স ফ্লিকের দল। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছিল জার্মানি। ৮০ বছরের মধ্যে তা ছিল দেশটির বিশ্বসেরার মঞ্চ থেকে দ্রুততম বিদায়। ২০১০ সালে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র বিশ^চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ২০১২ ইউরোও জিতে নেয় দেশটি।

কিন্তু এরপর থেকে আন্তর্জাতিক আসরে স্পেন নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ^কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল তারা। এরপর সবশেষ ২০১৮ বিশ্বকাপেও সুবিধা করতে পারেনি। বিদায় নিয়েছিল শেষ ষোলো থেকে। টানা দুই বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর গত দুই বছরে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্পেন। দেশটি পেয়েছে একঝাঁক তরুণ উদীয়মান ফুটবলার। যারা ইতোমধ্যে নিজেদের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। সবশেষ ইউরোর সেমিফাইনালে ইতালির বিরুদ্ধে একতরফা খেলেও হারতে হয়েছিল।

কিন্তু প্রশংসিত হয়েছিল সর্বমহলে। নেশন্স লিগেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে এনরিকের দল। সবশেষ বিশ্বকাপেও আলো ছড়িয়ে মিশন শুরু করেছে। এবারের স্পেন দলটির অনেকদূর যাওয়ার ক্ষমতা আছে বলে মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। জার্মানির বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের অপরিবর্তিত দল ঘোষণা করেছেন স্প্যানিশ কোচ লুইস এনরিকে। আক্রমণভাগে ফেরান টোরেস, মার্কো অ্যাসেনসিও ও ওলমো খেলবেন।

১৮ বছর বয়সী গাভির সঙ্গে মাঝমাঠে খেলবেন বার্সিলোনার দুই মিডফিল্ডার পেড্রি ও সার্জিও বসকুয়েটস। কোস্টারিকাকে সাত গোলের মালা পরিয়ে শুরু করা স্পেন শিবির আছে দারুণ চাঙ্গা। ২০০৬ সালের পর এই প্রথমবারের মতো তারা বিশ^কাপের প্রথম ম্যাচে এত বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে। পুরো ম্যাচে স্পেন ৮১.৯ শতাংশ বলের পজিশন ধরে রেখেছিল। যা ১৯৬৬ বিশ^কাপের পর সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে ফিফা র‌্যাঙ্কিয়ে দশ নম্বরে থাকা জার্মানি সব ধরনের প্রতিযোগিতায় শেষ দশ ম্যাচে মাত্র দুটিতে জয় পেয়েছে। দলটির কোচ হান্সি ফ্লিক স্বীকার করেছেন স্পেনের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে তার দল অবশ্যই চাপে আছে। চারবারের বিশ^চ্যাম্পিয়নদের এখন একটাই লক্ষ্য, অন্তত গ্রুপ পর্ব থেকে যেন টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিদায় না ঘটে। এশিয়ান পরাশক্তি জাপানের কাছে হার ছাড়াও মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়ে বেকায়দায় আছে জার্মানি।

মানবাধিকারের প্রতি নিজেদের জোরালো অবস্থান জানান দিতে জাপানের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে সেরা একাদশের ১১ জন খেলোয়াড়ই  হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ছবি তুলেছিলেন। এর মাধ্যমে তারা ফিফার মুখ বন্ধ করার একটি প্রতিকী ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু জাপানের কাছে হারের পর ফ্লিকের দলের এমনিতেই মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে তো বলেই বসেছেন, ফুটবলের প্রতি মনোযোগী হওয়ার সময় এসেছে জার্মানির। বিশ^কাপে টানা দ্বিতীয়বার গ্রুপ পর্বের বিদায় তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুব একটা সুখকর বার্তা হবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

×