ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মিশ্র জাতির হলেও এখন পর্যন্ত বর্ণবৈষম্যের শিকার না হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে দাবি ইতালিয়ান তরুণীর

অলিম্পিক স্বপ্নে বিভোর সারা

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ২২:৩২, ৯ মে ২০২৪

অলিম্পিক স্বপ্নে বিভোর সারা

.

আগামী জুলাইয়ে শুরু হবে প্যারিস অলিম্পিক। ক্রীড়ার এই মহাযজ্ঞে পারফর্ম করার স্বপ্ন দেখেন পৃথিবীর প্রতিটি ক্রীড়াবিদ। তেমনি ২০২৪ অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্নে বিভোর ইতালির তরুণ প্রতিভাবান সাঁতারু সারা কুর্তিস। গত মার্চেই ইতালির হয়ে অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। তাও আবার রেকর্ড গড়ে। জুনিয়র ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে মাত্র ২৪.৫৬ সেকেন্ডে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করে অলিম্পিকের জন্য কোয়ালিফাই করেন বয়সে মাত্র ১৭ বছরের এই বিস্ময় বালিকা। 
গত বছরের আগস্টে ১৭ বছরে পা রাখেন সারা কুর্তিস। তার আগেই নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। ইউরোপিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রীতিমতো ঝড় তুলেন তিনি। ইউরোপিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে চারটি স্বর্ণপদক জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন এই ইতালিয়ান বিস্ময় বালিকা। যে কারণেই এবারের অলিম্পিকে দেশটির উজ্জ্বল এবং দারুণ সম্ভাবনাময়ী সাঁতারু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে তাকে। স্বপ্নের এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে অন্যরকম রোমাঞ্চের জোয়ারে ভাসছেন কুর্তিস নিজেও। কেননা, সেই শৈশ্বব থেকেই যে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন বুনেছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সারা কুর্তিস বলেন, ‘অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করাটা আমার সবসময়েরই স্বপ্ন। এখানে মানসিকভাবে এমনকি শারীরিকভাবে উভয় দিক থেকেই নিজেকে উন্নতি করার চেষ্টা করব আমি। এ বছরই অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন ছিল আমার। শেষ পর্যন্ত সেটাই বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। তবে পদক জয় করি কিংবা না করি ক্রীড়ার এই মহাযজ্ঞে অংশ নিতে পারাটাই হবে আমার জন্য দুর্দান্ত ব্যাপার।’ 
সারা কুর্তিসের বয়স যখন মাত্র দুই বছর। ঠিক তখনই তাকে পুলে নামিয়ে দিয়েছিলেন তার মা-বাবা। তবে পুলের ঠান্ডা পানি তাকে বেশ ভুগিয়েছিল। যে স্মৃতি এখনো মনে করতে পারেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সারা কুর্তিস বলেন, ‘আমার বয়স যখন একেবারেই কম তখন যে ঘটনাটা খুব বেশি মনে করতে পারি সেটা হলো ঠান্ডা। সত্যি কথা বলতে পুলের ঠান্ডা পানিকে আমি খুবই ভয় পেতাম।’ সাতার ছাড়া বাস্কেটবলেও ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল সারার মা-বাবা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাঁতারকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। গত মার্চে ইউরোপিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইলের মাধ্যমে অলিম্পিকের টিকিট নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইতালির হয়ে নতুন রেকর্ডও গড়েছিলেন সারা। তার আগের রেকর্ডটা ছিল সিলভিয়া ডি পিয়েত্রোর। ২০২২ সালে রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ২৪.৭২ সেকেন্ডে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করেছিলেন সিলভিয়া। আর সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে মাত্র ২৪.৫৬ সেকেন্ডে সমাপ্তি রেখা স্পর্শ করেই নতুন রেকর্ড গড়েন সারা কুর্তিস। তার এক মাস পর ব্যাকস্ট্রোকের শর্ট কোর্সেও বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করতে তিনি সময় নিয়েছিলেন মাত্র ২৬.০৮ সেকেন্ড। আমেরিকার অলিভিয়া স্মোলিগার চেয়েও যা ০.০৫ সেকেন্ড কম। আমেরিকান সাঁতারু পরবর্তীতে ২০১৬ অলিম্পিকে স্বর্ণপদক ছাড়াও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বিভিন্ন পদক জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন। 
স্মোলিগার রেকর্ড ভেঙে নিজেও অভিভূত সারা। তিনি বলেন, ‘আমি এমনটা আদৌ প্রত্যাশা করিনি...। এপ্রিলে আমি ভেবেছিলাম হয়তো মাঝারি মানের পারফর্মেন্স করতে পারবো। কিন্তু প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভালো করার অনুভূতিটাও দারুণ ছিল...। এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। কেননা এতটা কম সময়ে যে আমিও ভাবিনি। এরপর তাই আমি উড়তে শুরু করে দিয়েছিলাম। কারণ এটা সত্যিই আমার জন্য অনেক বড় এক অর্জন।’ ইতালির এই তরুণ প্রতিভাবান সাতারু জাতিগতভাবে মিশ্র। তবে সারা কুর্তিস নিজেকে সৌভাগ্যবান বলেই দাবি করেছেন। কেননা, এখন পর্যন্ত কখনোই বর্ণবৈষম্যের শিকার হননি তিনি। সারা বলেন, ‘আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলেই বিবেচনা করি যে এখন পর্যন্ত এরকম কিছু (বর্ণ-বৈষম্য) আমার জীবনে ঘটেনি।’

×