ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অবিশ্বাস্য জয়ে ফাইনালে  রিয়াল মাদ্রিদ

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:২৯, ৯ মে ২০২৪

অবিশ্বাস্য জয়ে ফাইনালে  রিয়াল মাদ্রিদ

ঘরের মাঠে জার্মান প্রতিপক্ষ বেয়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিতের পর উল্লাস রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলারদের

রিয়াল মাদ্রিদের রক্তের সঙ্গেই মিশে আছে। কি মিশে আছে!? বারবার পিছিয়ে পড়ে, হারের মুখে থেকেও অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে আসা। স্পেনের বিখ্যাত সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে এই দৃশ্য আরেকবার দেখেছে গোটা দুনিয়া। বুধবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের কাছে যখন তাদের হার সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল, তখনই আরেকবার জাদু দেখিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ জিতে নিয়েছে গ্যালাক্টিকোরা। 
ম্যাচে বায়ার্নকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালের রঙিন মঞ্চে উঠে এসেছে রিয়াল। এর আগে মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারানায় দুদলের শেষ চারের প্রথম লেগের দ্বৈরথ ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে জিতে ফাইনালে উঠেছে আসরের রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা। অথচ ম্যাচের ৬৮ মিনিটে কানাডিয়ান উইঙ্গার আলফানসো ডেভিসের গোলে ফাইনালের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল বায়ার্ন। ৮৭ মিনিট পর্যন্ত গোলটি ধরে রেখেছিল বাভারিয়ানরা। কিন্তু এরপরই শুরু রিয়ালের সেই ম্যাজিক। বিশেষভাবে বলতে হবে ফেডে ভালভার্ডের বদলি হিসেবে মাঠে নামা স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জোসেলুর কথা। মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধানে (৮৮ ও ৯০+১ মিনিট) দুই গোল করে রিয়ালকে আরেকবার ফাইনালের টিকেট পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। ফাইনালে আরেক জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিরুদ্ধে খেলবে রিয়াল। শিরোপানির্ধারণী ম্যাচটি হবে আগামী ১ জুন লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে।   
এই রিয়ালকে একবাক্যে সবাই বলছেন অবিশ্বাস্য। এই রিয়াল অনবদ্য, এই রিয়াল তুলনাহীন, এই রিয়াল অপ্রতিরোধ্য। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। শত্রু-মিত্র সবাইকে এটা মানতেই হচ্ছে! যখন মনে হয় সব শেষ, তখনই যেন তাদের শুরু। বায়র্নের বিরুদ্ধে অপূর্ব ম্যাজিকে অবিশ্বাস্য সেই রিয়ালই ছিনিয়ে নিয়েছে জয়। উঠে গেছে ফাইনালে। যে কারণে ১৫ নম্বর ইউরোপিয়ান শিরোপাও এখন তাদের নাগালে বলে মনে করছেন সংখ্যাগলিষ্ঠরা। রিয়ালের এমন জয় নতুন কিছু নয়। ডাগআউটে থেকে কোচ কার্লো আনচেলোত্তিই এরকম জয়ের সাক্ষী হয়েছেন অনেকবার। ২০২১-২২ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউটেও একের পর এক ম্যাচে পেছন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে গ্যালাক্টিকোরা। সেবারও সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে বিদায়ের দুয়ারে চলে গিয়েও শেষ সময়ের রডরিগোর নাটকীয় দুই গোলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল অবিশ্বাস্যভাবে। ঘুরে দাঁড়ানো বা শেষ সময়ে গোল করে ম্যাচ জেতা কিংবা হার এড়ানোর নজির এবারের মৌসুমেও কম নেই। আরও একটি এরকম ম্যাচের পর স্বয়ং কোচ আনচেলোত্তি কোনো ফুটবলীয় ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না, ‘এটা সত্যিই অভাবনীয়। এর কোন ব্যাখ্যা হয়না’। দলে সবসময়ই জোসেলুর অবস্থান ব্যাকআপ স্ট্রাইকার হিসেবে।

এ ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ৮১ মিনিটে ভালভার্ডের পরিবর্তে খেলতে নেমে এখন তার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেছে। ইউরোপিয়ান আসরে এভাবেও ফিরে আসা যায়; যার শুরু করেছেন স্পেনের অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার। সান্টিয়াগো বার্নাব্যুর সমর্থকদের আরো একটি স্মরণীয় রাত উপহার দিয়েছেন জোসেলু। ইতিহাসের রচয়িতা জোসেলু বলেন, এই ফিরে আসা আমাদের হৃদয়ের গভীর থেকে এসেছে। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। কোচও আমাকে এই কথাই বলেছেন; তুমি হৃদয় দিয়ে এ ম্যাচে আমাদের জয়ী করেছো। গত কয়েক মৌসুমে প্রত্যাবর্তনের কত গল্পই তো লিখেছে রিয়াল। সেই তালিকায় এবার ঢুকে গেছে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আরও একটি ধ্রুপদি অধ্যায়। তবে এতে কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে রেফারিং নিয়ে। ম্যাচ শেষে বায়ার্ন মিউনিখ রেফারিদের কড়া সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তাতে রিয়ালের অবিশ্বাস্য অর্জন খাটো হচ্ছেনা। বরং গোটা ফুটবল দুনিয়া লস ব্লাঙ্কোসদের কুর্নিশ করছে। বার্নাব্যুর কারণেই এভাবে ফিরে আসা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। 
আনচেলোত্তিও সেটাই বলেছেন। রিয়াল কোচ এক্ষেত্রে সমর্থকাদের এগিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, সমর্থকরা যেভাবে দলকে প্রেরণা জোগায়, এই স্টেডিয়াম, এখানকার আবহ, সবকিছুই এটা সম্ভব করেছে। আর ছিল এক দল ফুটবলার, যারা কখনোই বিশ্বাস হারায়নি। তবে এটা জাদুকরি; এছাড়া অন্য কোনো ব্যাখ্যা আর নেই। এই টুর্নামেন্ট, এই স্টেডিয়াম আর এখানকার আবহ এ জাদু বের করে আনে। তিনি আরও বলেন, এ মৌসুমে অনেকবারই অনেকের মনে হয়েছে আমরা শেষ; আর সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি। কে গোল করবে সেটা ব্যাপার নয়। কিন্তু কেউ না কেউ গোল করবেই। সেই হার না মানা মানসিকতা এই দলের আছে।

×