
ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমানে আপনার বাংলাদেশি সিম কার্ডটি বিশ্বের যেকোনো দেশে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব, যা 'রোমিং' নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে আপনি বিদেশে বসে যেমন আপনার ব্যাংকের ওটিপি বা সোশ্যাল মিডিয়ার মেসেজ রিসিভ করতে পারবেন, তেমনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন এবং যেকোনো দেশে এমনকি বাংলাদেশেও কল করতে পারবেন। এই রোমিং পরিষেবা এখন বাংলাদেশি টাকায়ও চালু হয়েছে, যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
রোমিং কী এবং কীভাবে কাজ করে?
রোমিং হলো এমন একটি পরিষেবা, যার মাধ্যমে আপনি যখন আপনার বাংলাদেশি সিম কার্ড নিয়ে বিদেশে যান, তখন আপনার সিমটি সেই দেশের স্থানীয় টেলিফোন অপারেটরের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হয়। এই সংযোগের ফলে আপনি সেই দেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কল করতে, মেসেজ পাঠাতে বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। এই সেবার বিনিময়ে আপনার সিম অপারেটরকে সেই দেশের অপারেটরকে কিছু অর্থ পরিশোধ করতে হয়। একইভাবে, যদি কোনো বিদেশি সিম বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটি বাংলাদেশি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হবে এবং বাংলাদেশও এর জন্য নির্দিষ্ট অর্থ পাবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই রোমিং পরিষেবা উপলব্ধ, শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু দেশ ছাড়া যারা বাংলাদেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ নয়।
রোমিং অ্যাক্টিভেশনের পদ্ধতি ও খরচ
আগে রোমিং অ্যাক্টিভেট করতে শুধুমাত্র ডলারের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যেত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সার্কুলার অনুযায়ী, এখন বাংলাদেশি টাকা দিয়েও রোমিং অ্যাক্টিভেট করা সম্ভব।
১. বাংলাদেশি টাকায় রোমিং অ্যাক্টিভেশন: যদি আপনি বাংলাদেশি টাকায় রোমিং অ্যাক্টিভেট করতে চান এবং ডলারের ঝামেলায় না যেতে চান, তাহলে আপনাকে ভ্রমণের অন্তত এক সপ্তাহ আগে আপনার সিম অপারেটরের প্রধান কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখানে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিটের কপি জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। এই পদ্ধতিতে প্রতিবার ভ্রমণে সর্বোচ্চ ৬,০০০ টাকা এবং এক বছরে সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। ভবিষ্যতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও পেমেন্টের সুযোগ আসতে পারে।
২. ডলারের মাধ্যমে রোমিং অ্যাক্টিভেশন (ঘরে বসে): ঘরে বসেই রোমিং অ্যাক্টিভেট করার জন্য আপনার একটি ডুয়াল কারেন্সি কার্ড থাকা আবশ্যক।
- ব্যাংকের ডুয়াল কারেন্সি কার্ড: আপনার যদি পাসপোর্ট থাকে, তাহলে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে ডলার এনডোর্স করে নিতে পারেন। এরপর সেই কার্ড ব্যবহার করে সিম অপারেটরের অ্যাপ থেকে রোমিং অ্যাক্টিভেট করতে পারবেন।
- ভার্চুয়াল কার্ড: অনেকে ব্যাংকে গিয়ে ডলার এনডোর্স করার ঝামেলা পোহাতে চান না। তাদের জন্য তেভাও কার্ড (Tevao Card) বা রিডপে কার্ড (Ridpay Card)-এর মতো ভার্চুয়াল কার্ডগুলো একটি সহজ সমাধান। এই কার্ডগুলো খুব সহজে এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে নেওয়া যায় এবং সহজেই রিচার্জ করা যায়।
অ্যাপের মাধ্যমে রোমিং অ্যাক্টিভেশন প্রক্রিয়া (উদাহরণ: মাইজিপি অ্যাপ)
আপনার সিম অপারেটরের মোবাইল অ্যাপ (যেমন: মাইজিপি, মাইরবি, মাইএয়ারটেল) ব্যবহার করে সহজেই রোমিং অ্যাক্টিভেট করতে পারবেন:
১. অ্যাপে প্রবেশ: আপনার সিম অপারেটরের অ্যাপটি ওপেন করুন।
২. সার্ভিসেস অপশন: অ্যাপের ভেতরে "সার্ভিসেস" অপশনে যান।
৩. রোমিং নির্বাচন: "সার্ভিসেস" থেকে "রোমিং" অপশনটি নির্বাচন করুন।
৪. কার্ড রেডি করুন: এখানে আপনাকে আপনার ডুয়াল কারেন্সি কার্ড প্রস্তুত রাখতে বলা হবে।
৫. রোমিং টাইপ নির্বাচন: "চুজ রোমিং টাইপ" অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোমিং প্যাকেজ দেখতে পাবেন, যেমন: * ভয়েস + এসএমএস + ডেটা * ভয়েস + এসএমএস * শুধুমাত্র এসএমএস পূর্বে গ্রামীণফোনে এসএমএস রোমিং বিনামূল্যে চালু করা গেলেও, বর্তমানে এটি আর সম্ভব নয়; ন্যূনতম ১ ডলার রিচার্জ করতে হয়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী প্যাকেজটি বেছে নিন।
৬. পেমেন্ট: "কন্টিনিউ টু পেমেন্ট" অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার ডুয়াল কারেন্সি কার্ডের (ডেবিট, ক্রেডিট বা ভার্চুয়াল কার্ড) তথ্য (কার্ড নম্বর, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, সিভিভি) ইনপুট করুন।
৭. ট্রান্সাকশন সম্পন্ন করুন: "পে ইউএসডি" বা অনুরূপ বাটনে ক্লিক করুন। অনেক সময় নিরাপত্তার জন্য অ্যাপ থেকে লেনদেনটি অনুমোদন করতে হতে পারে (যেমন: তেভাও কার্ডের ক্ষেত্রে অ্যাপের মাধ্যমে এপ্রুভাল)। সফলভাবে পেমেন্ট হয়ে গেলে আপনার রোমিং অ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে।
রোমিং এর খরচ এবং ট্যারিফ
রোমিং অ্যাক্টিভেট করার পর প্রতিটি দেশে ব্যবহারের খরচ ভিন্ন হয়, যা সেই দেশের ট্যারিফ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। যেমন, চীনে গ্রামীণফোন ব্যবহার করলে:
- ইনকামিং কল: প্রতি মিনিটে ১০ টাকা।
- লোকাল আউটগোইং কল: প্রতি মিনিটে ২৫ টাকা।
- বাংলাদেশে কল: প্রতি মিনিটে ২৫ টাকা।
- ডেটা ব্যবহার: প্রতি এমবিতে ৩ টাকা।
- আউটগোইং মেসেজ (এসএমএস): প্রতি মেসেজে ৫ টাকা।
- ইন্টারনেট কভারেজ: 4G, 3G, এবং 2G।
- স্যাটেলাইট কল: প্রতি মিনিটে ১৫২০ টাকা (সাধারণত অপ্রয়োজনীয়)।
রোমিং অ্যাক্টিভেট থাকলে আপনি কোনো প্যাকেজ না কিনলেও বাংলাদেশের প্রিপেইড সিমের মতো রিচার্জ করে দেশের বাইরে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যখন দেশের বাইরে থাকবেন, তখন রোমিং ব্যালেন্স থেকে খরচ কাটা হবে। বাংলাদেশে থাকলে আপনার নিয়মিত প্রিপেইড ব্যালেন্স থেকে খরচ হবে।
হজযাত্রীদের জন্য এই পরিষেবা বিশেষভাবে সুবিধাজনক। যারা আরবিতে কথা বলতে পারেন না বা নতুন সিম কেনার ঝামেলায় পড়তে চান না, তারা তাদের বাংলাদেশি সিমে রোমিং অ্যাক্টিভেট করে সৌদি আরবে গিয়ে নির্বিঘ্নে কল, এসএমএস এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
বর্তমানে রোমিং অ্যাক্টিভেট করা আগের চেয়ে অনেক সহজ। আশা করি, এই বিস্তারিত নির্দেশনা আপনার বিদেশ যাত্রায় যোগাযোগকে আরও সহজ করে তুলবে।
নুসরাত