
ছবি: সংগৃহীত
আমরা সাধারণত বন্ধুত্বকে শুধু মানুষের আচরণ হিসেবেই দেখে থাকি। কিন্তু সম্প্রতি ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত এক দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, পাখিরাও মানুষের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে, এবং তা শুধুই রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাস্টিন রুবেনস্টাইন এবং তাঁর গবেষক দল ২০ বছর ধরে কেনিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আফ্রিকান সুপারব স্টারলিং নামক পাখির সামাজিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন। ৪০টি ধারাবাহিক প্রজনন মৌসুমে সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা জানান, এই প্রজাতির পাখি ৭ থেকে ৬০ সদস্যবিশিষ্ট । এরা (আত্মীয় ও অনাত্মীয়) দলবদ্ধভাবে বসবাস করে, এবং একে অপরকে সহযোগিতা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি প্রজনন যুগলের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৬ জন ‘হেল্পার’ বা সহকারী থাকে, যারা নিজেরা সন্তান উৎপাদন না করলেও ডিমে তা দেওয়া, খাদ্য জোগাড় এবং শত্রু থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করার কাজে সহায়তা করে। এই সহযোগিতা শুধু আত্মীয়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, অনাত্মীয়রাও এতে অংশ নেয়। তবে রক্তসম্পর্কে জড়িতদের প্রতি কিছুটা বেশি পক্ষপাত দেখা গেছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বড় দলে থাকা স্টারলিংদের টিকে থাকার হার ছোট দলের চেয়ে বেশি। এদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং দল সম্প্রসারণের প্রবণতা গোষ্ঠীটিকে বেশি কার্যকর ও সুরক্ষিত করে তোলে।
১৯৭১ সালে রবার্ট ট্রিভার্স ‘রিসিপ্রোকাল অ্যালট্রুইজম’ বা পারস্পরিক আত্মত্যাগ তত্ত্ব দেন, যেখানে বলা হয় – প্রাণীরা স্বল্পমেয়াদে অন্যকে সাহায্য করে, ভবিষ্যতে পাল্টা সাহায্য পাবে এই বিশ্বাসে। নতুন এই গবেষণা তারই একটি বাস্তব উদাহরণ। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, কীভাবে বা কেন এই আচরণ গড়ে ওঠে।
অধ্যাপক রুবেনস্টাইন বলেন, “অনেক পাখি দীর্ঘ সময় ধরে একসাথে থাকে এবং একে অপরকে সাহায্য করে। আমাদের ধারণা, প্রাণিজগতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও ব্যাপকভাবে বিদ্যমান, কিন্তু সেগুলো আবিষ্কারের জন্য যথেষ্ট সময় নিয়ে গবেষণা হয়নি।”
মুমু