ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উপদেষ্টা পরিষদ ছোট করা ও নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি বিএনপির

নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ সরকার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২২ মে ২০২৫

নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ সরকার

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন ড. মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ ও আমির খসরু

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও মাথাভারি উপদেষ্টা পরিষদ ছোট করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
ড. মোশাররফ বলেন, জনআকাক্সক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। তাই জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু  ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
ড. মোশাররফ বলেন, জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত শীঘ্রই সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যেহেতু একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এই সরকারের প্রধান কাজ, তাই মাথাভারি উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধুমাত্র রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।
ড. মোশাররফ বলেন, ঐক্যের স্বার্থে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে ব্যর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে, বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা কতটুকু পূরণ হয়েছে তা এখন বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন। কারণ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাঁটল ধরতে শুরু করেছে। অথচ আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা ছিল। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড. মোশাররফ বলেন, আমরা বারবার উচ্চারণ করেছি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকা-ে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন,  ক’জন উপদেষ্টার বক্তব্যে এবং কর্মকা-ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হচ্ছে, তাই এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সরকারের যেই  উপদেষ্টাগণ একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে  জড়িত বলে সবাই জানে ও বোঝে। উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। 
ড. মোশাররফ বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বুধবারের  বক্তব্য আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। এছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসর ক’জন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরা ইতোপূর্বে অনেক বার উত্থাপন করেছি।
ড. মোশাররফ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। অথচ সরকারের মুখপাত্র হিসাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন যে, এই সরকারের সবকিছু করার ম্যান্ডেট রয়েছে। 
মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকা-ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানান ড. খন্দকার মোশাররফ। এছাড়াও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ মেয়াদী নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আছে কিনা সেই প্রশ্নও তুলেন তিনি। দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যাতে দেশে অস্থিতিশীল কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন ড. মোশাররফ। 
মোশাররফ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা স্বত্তেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদের এবং সরকারকে বিব্রত করে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায়। সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সবক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সকল পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে এই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। 
ড. মোশাররফ বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।
ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচার কার্য চলমান থাকবে জানিয়ে ড.  মোশারফ আরও বলেন, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দু’টাই একসঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
ড. মোশাররফ বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে সুতরাং আমাদেরকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আশা করব নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে অতিশীঘ্রই সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে। 
ড. মোশাররফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, জনআকাক্সক্ষা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয় তা যথাসময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি ইতোমধ্যেই সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুণœœ করেছে এবং অন্যদেরকেও একই প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের বলে আমরা মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

×