
“অমুক টিএনও জামায়াতের লোক, অমুক এসপি জামায়াতের লোক, অমুক ডিসি জামায়াতের লোক — এভাবে যখন বলা হয়, তখন দেখা যায় তারা ঘুষ খান না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। শুধু এজন্যই তাদের জামায়াতের লোক বলা হয়! আমি বলি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। আমার এলাকার একজন প্রশাসকের কথা বলি—নাম বলছি না—তিনি ভালো কাজ করছেন। ভিজিএফ কার্ড কাউকে অতিরিক্ত দেন না। অথচ একদল এসে বলছে, তিনি জামায়াতের লোক, তাকে সরাতে হবে। অথচ তিনি তো ৫ আগস্টের আগ থেকেই এখানে আছেন। সে হিসেবে বললে, তিনি তো আওয়ামী লীগের লোক!”
শনিবার (১৭ মে), নিউজ ২৪ টেলিভিশনের “মুক্তির কথা” নামক একটি অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ও বাউফল উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
তিনি আরও বলেন, “রাজনীতি এখন এমন এক পচা জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে একজন রিকশাচালকও চায় না তার ভাই রাজনীতিতে আসুক। রাজনীতিকে এমন একটা জায়গায় নামিয়ে আনা হয়েছে, যেখান থেকে এখন টেনে তুলে আনতে হবে।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “এক সময় জামায়াতে ইসলামীর দুইজন মন্ত্রী ছিলেন। এর মধ্যে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। ছয় বছর এই দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ওই ছয় বছর ছিল সোনালি অধ্যায়। এছাড়া, আলী আহসান মো. মোজাহিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং সমাজের জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলতেন, আমার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. মাসুদ বলেন, “আমাদের দেশে এক বা দুইটি ‘মার্কা’ এখন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আগামী দিনে আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অনেকে বলেন, প্রশাসন কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নেই বলে কাজ করতে চান না। তাই জামায়াতে ইসলামী দাবি তুলেছিল—জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতো, তাহলে বোঝা যেত জাতীয় নির্বাচন কতটা নিরপেক্ষ হতে পারে।”
আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, “তাদের সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত—তারা যা বলে, তা করে না; আর যা করে, তা বলে না। আমাদের আমির বলেন—আমরা যা বলব, তাই করব; আর যা করব না, তা বলবও না। আমাদের শাহবাগে যেতে হবে কেন? আমরা তো এক টেবিলে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি। জামায়াতে ইসলামী প্রাথমিকভাবে তিনটি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে। জোট নিয়ে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি। একসময় একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হলে জামায়াতের বাইরের ছোট দলগুলোকে নিয়েও আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে।”
সাক্ষাৎকারের শেষ অংশে ড. মাসুদ বলেন, “আমরা যেমন মসজিদ পরিচালনা করতে পারি, তেমন মন্ত্রণালয়ও পরিচালনা করতে পারি। আমাদের বিরুদ্ধে দুই টাকার দুর্নীতিরও প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। ফ্যাসিস্ট সরকারের ফাঁসির মঞ্চে আমাদের নেতারা যেভাবে হাসিমুখে জীবন দিয়েছেন, তেমনি তারা বলেও গেছেন—আমাদের ফাঁসি দিলেও একদিন এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশ মুক্তি পাবেই। আজকের বাস্তবতায় তা প্রমাণিত। গত সাত মাসে আমরা প্রমাণ করেছি—ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমরাই একমাত্র দল যারা কোথাও লুটপাট বা ভাঙচুর করিনি।”
রিফাত