
ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার পাঁচ দেশে নতুন মিশন খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ জোরদার ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে, যা অবশ্যই ইতিবাচক পদক্ষেপ। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন, নরওয়ের অসলো, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট, আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্স ও ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে এসব মিশন স্থাপন করা হবে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা বিশ্বাস করি, ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব দেশে যদি বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায় তবে শুধু অর্থনৈতিক সুযোগই সৃষ্টি করবে না, বরং একটি গতিশীল, বহুমাত্রিক ও ভবিষ্যৎমুখী পররাষ্ট্রনীতির ইমারত তৈরি করবে, যা আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাখবে অনন্য ভূমিকা। বিদেশে পাঁচটি নতুন মিশন স্থাপন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও মজবুত ও গতিশীল হবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত হবে।
ইউরোপের দেশ নরওয়ে জলবায়ু অর্থায়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবাধিকারে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। দেশটির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাংলাদেশকে বৈশ্বিক উন্নয়ন নীতিতে অধিকতর সম্পৃক্ত করতে পারে। আয়ারল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম প্রগতিশীল, প্রযুক্তিনির্ভর ও শিক্ষাবান্ধব দেশ। যদি এখানে দূতাবাস স্থাপন করা যায় তবে আইটি, স্বাস্থ্যসেবা ও উচ্চশিক্ষা খাতে বাংলাদেশীদের প্রবেশাধিকার সহজ হবে। ইউরোপের ‘অর্থনৈতিক হৃৎপিণ্ড’ জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপন করা গেলে শুধু বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসীর সেবাদান নয়, বরং সেখানকার বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাজারে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া যাবে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় দূতাবাস থাকলেও প্রকৃত ব্যবসায়িক কেন্দ্র সাও পাওলোতে বাংলাদেশের মিশন না থাকায় সেখানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেবা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি আর্জেন্টিনায় মিশন স্থাপন করা গেলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি, কৃষিভিত্তিক অংশীদারিত্ব ও গ্লোবাল সাউথে কূটনৈতিক প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বিশ্বে ১৪টি দেশে মোট ১৭টি দূতাবাসের নিজস্ব ভবন রয়েছে। এর মধ্যে এশিয়ায় ৫টি দেশে ৬টি, ইউরোপে ৭ দেশে ৭টি, আফ্রিকায় ১টি, উত্তর আমেরিকায় ৩টি নিজস্ব মিশন রয়েছে। এছাড়াও নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরে বাংলাদেশের মালিকানাধীন জমি রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ৬১টি দেশে বাংলাদেশের ৮৪টি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে, যার মধ্যে ৫৯টি দূতাবাস, ১৮টি হাইকমিশন এবং জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন রয়েছে। কিছু আছে প্রক্রিয়াধীন। এই মিশনগুলো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করে। বৈশ্বিক বাস্তবতায় মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, এই স্বপ্ন দেশবাসী সকলের।
প্যানেল