ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

পশু পাখির প্রতি অবহেলা কাম্য নয়

মোসা. আফরিনা আক্তার

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পশু পাখির প্রতি অবহেলা কাম্য নয়

মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী বলা হয় কারণ . মিলিয়নেরও বেশি জীবন্ত প্রাণী বাস করা আমাদের এই জীব জগতে মানুষেরই একমাত্র বিবেক, বুদ্ধি, চিন্তা, চেতনা, মনুষ্যত্ববোধ রয়েছে। মানুষের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ গঠন সেই পরিবেশ রক্ষার জন্যই অন্যান্য প্রাণীদের প্রয়োজন। সেসব প্রাণীকুল তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য দ্বারা আমাদের পরিবেশকে বাসযোগ্য করে তোলে। কিন্তু সেই মানুষই যখন নিজেদের কাজকর্ম দ্বারা প্রাণীকুলের ক্ষতিসাধন করে তখন মানুষ পরিণত হয় মনুষ্যত্ব, বিবেক দয়া-মায়াহীন জাতিতে।

প্রকৃতির দুটি অপরিহার্য জীব পশুপাখি। যাদের বসবাস আমাদেরই আবাসস্থলে। গ্রামীণ পরিবেশে পশু পাখির সহাবস্থান কিছুটা সহজ উপযুক্ত হলেও শহরাঞ্চলে পশুপাখিদের বেলায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অঞ্চলে প্রাচুর্য উন্নয়নের ভিড়ে পশুপাখিদের আবাসস্থল উপযুক্ত খাবার মিলে না। ভবন নির্মাণ নগরায়ণ প্রকল্প প্রতিনিয়ত পরিবেশকে দূষণ করছে। আব ব্যবস্থাপনা দায়িত্বহীনতার খপ্পরে পড়ে বিলীন হয়ে যায় পশু পাখির আবাসস্থল। নির্মাণ কাজে ধুলো-বালি, সিমেন্ট একদিকে যেমন পরিবেশের বাতাসকে বিষাক্ত করছে। অন্যদিকে অবাধ যানবাহনের শব্দ উৎসব অনুষ্ঠানের বাজি পটকা কলকারখানার উচ্চ শব্দ পশুপাখিদের টিকে থাকার পরিবেশকে নষ্ট করছে। গণমাধ্যমের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘জোরে আওয়াজের জন্য প্রাণীদের প্রজননে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এমনকী প্রাণী জগতের সামাজিক আচরণের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং শব্দ থেকে বাঁচতে দৌড় দেয়। এর ফলে তাদের দেহের মধ্যে অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ হতে থাকে। এর কারণে রক্তচাপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। এর জেরে আঘাত পেয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে এবং তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। যার ফলে আটকানো যাচ্ছে না অঞ্চলের পশুপাখির বিলুপ্তি। তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জীবজগতের আতঙ্কের আরেক নাম মোবাইলের টাওয়ার। ¤প্রতি গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘মোবাইলের টাওয়ারে থাকা রেডিয়েশনের প্রভাবে কমে যাচ্ছে পাখিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ। পর্যাপ্ত বনায়ন না থাকায় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না পশুপাখিদের অভয়ন। কারণ যথোপযুক্ত অক্সিজেন নেই এমন পরিবেশে পাখিদের টিকে থাকা খুবই কষ্টসাধ্য। যার ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পশু পাখির আনাগোনা।

গঠনগত পরিবেশ ছাড়াও মানুষের আচরণগত সমস্যাও রয়েছে শহুরে পশুপাখিদের ওপর। যেমনÑ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কুকুরগুলো আরেকটু খাবারের জন্য অধীর আগ্রহে থাকে। শহুরে পরিবেশে উচ্ছিষ্ট খাবারও মিলে না। কারণ সেগুলো চলে যায় কোন এক ডাস্টবিনে। কেউ যদি দয়া করে কিছু তাহলে তারা খেতে যায়। হয়তো এমনও দিন পার করতে হয় যে দিনে এক বেলায়ও খাবার মিলে না এক টুকরো খাবার। থাকার জন্য হতে হয় অবহেলিত। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, যাই হোক না কেন কেউ দেয় না সামান্য আশ্রয়। আবার এদেরকে আঘাত করতেও কেউ কেউ পিছপা হয় না। শহরাঞ্চলের অধিকাংশ কুকুর কোনো না কোনোভাবে মানুষদের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত। একই রকম চিত্র দেখা গেছে পাখির বেলায়। অনুক পরিবেশ না থাকায় শহরের পাখিগুলো যেন অমাবস্যার চাঁদ। তীব্র খাদ্যের অভাবে পরিণত হয় রুগ্ণ চিত্রে। পশুপাখি আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাওয়ার ফলে পরিবেশের সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। সেই সঙ্গে শহর অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। এসব পশুপাখির আমাদের পরিবেশের অলংকার। পরিবেশ দূষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি পরিবেশ না থাকায় পশুপাখির মানসিক ব্যবহারিক স্বাস্থ্যের ওপর চরমভাবে প্রভাব ফেলছে। যার ফলে এদের বসবাসের পরিবেশ এবং পশু পাখির সহাবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এতে করে অঞ্চলের বাসযোগ্য পরিবেশ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

শহরে পশুপাখি টিকিয়ে রাখতে আমাদের তাদের প্রতি সদয় থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষের মতো এরাও জীব। এদেরও ক্ষুধা তৃষ্ণা লাগে। যদি তাদের প্রতি আমরা বিনয়ী হতে পারি তাহলে সম্ভব হবে এসব পশুপাখিকে টিকিয়ে রাখা। ব্যক্তি, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র নির্বিশেষে সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে। পশুদের জন্য খাবার আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে হবে। পাখিদের জন্য বাসাবাড়ির বারান্দায় খাবারের পাত্র বেঁধে সেখানে পানি খাবার দেওয়া যেতে পারে। পশুপাখি পরিবেশ রক্ষা করতে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমাতে হবে। নগরায়ণ এবং ভবন নির্মাণের যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, যাতে পরিবেশ দূষণ না হয়। কলকারখানা যানবাহনের শব্দের অতিমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পশুপাখির যথাযথ আবাসস্থলের জন্য সবুজায়ন বনায়ন অপরিহার্য। তাই শহরাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসের আঙ্গিনায় বনায়নের আওতাধীন রাখতে হবে। তাছাড়া অঞ্চলের কোথাও কোথাও সবুজ পার্ক নির্মাণ করা যেতে পারে। এদের পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পাবে। তাছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর উচিত প্রতিনিয়ত এসব পশু পাখির বাসস্থান এবং পরিবেশ তদারকি করা। পশুপাখিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যক্তি পর্যায়ের জনসচেতনতা বাড়ানো উচিত। মনে রাখতে হবে বাসার পোষা পশু পাখিটি যেমন বাইরের পশুপাখিও তেমন, তাদের প্রতিও যতœবান হতে হবে। অবহেলা করে, আঘাত দিয়ে নয় একটুখানি খাবার, আশ্রয় সহযোগিতাই সকলের কাম্য।

 

 লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

×